ঔষধি গুণের খনি ভেষজ শ্বেত চন্দন

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ১২:০১ | প্রকাশিত : ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ১০:৫৯

পৃথিবীতে সবচাইতে দামি গাছ চিরসবুজ সুগন্ধি শ্বেত চন্দন। মানুষের স্বাস্থের জন্য উপকারী অসাধারণ একটি দুর্লভ ভেষজ উদ্ভিদ। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় চন্দনের বহুল ব্যবহার আছে। চন্দনের আছে হাজারো ওষধি গুণ। বাস্তবে দুই প্রকার এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। শ্বেত চন্দন ও রক্ত চন্দন। এই শ্বেত চন্দন গাছ সান্টালাসি পরিবারের সান্টালুম গণের একটি ছোট চিরহরিৎ, রোমহীন গাছ। এই গাছ ১৫-২০ মিটার উঁচু হয়ে থাকে। চন্দন গাছ সাধারণত রাস্তার ধারে বা আবাসভূমির পাশে জন্মায়। এক একর জমিতে চন্দন গাছ চাষ করে ৩০ থেকে ৩২ কোটি টাকা পর্যন্ত উপার্জন করা যায়। কেউ যদি একটি গাছ চাষ করতে পারেন তাহলেও কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা লাভ করতে পারবেন। তবে এই অতীব লাভজনক চাষ সম্পর্কে অনেক কম মানুষই জানেন।

শ্বেত চন্দনের আদি নিবাস ভারতের বিন্ধ্যপর্বতের দক্ষিণে কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুতে। তবে উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও উড়িষ্যাতেও শ্বেত চন্দন দেখা যায়। এছাড়া শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম এবং অস্ট্রেলিয়ায় এ উদ্ভিদ পাওয়া যায়। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে বিচ্ছিন্নভাবে দেখা যায়। ঢাকার বলধা গার্ডেনের সাইকি অংশে, বোটানিক্যাল গার্ডেনে এবং ডুলাহাজরা সাফারি পার্কের প্রশাসনিক ভবনের সামনে শ্বেত চন্দনের গাছ দেখা যায়।

রূপচর্চার জন্য চন্দনের খ্যাতি যুগ যুগ ধরে। প্রাচীনকালে রূপচর্চার অন্যতম একটি উপাদান ছিল চন্দন। বর্তমান সময়েও বিভিন্ন রকম কসমেটিকস ও সুগন্ধিতে চন্দন ব্যবহৃত হয়। চন্দন ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় বেশ উপকারী। এতে আছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা ব্রণ ও ত্বকের অন্যান্য সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া মুখের বলিরেখা দূর করতে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং রোদে পোড়া দাগ দূর করতে চন্দন ব্যবহার করা হয়।

চামড়ার কালো ও লালচে দাগ দূর করা, স্ক্রিন ক্যানসার, চামড়ার এলার্জিতে সারা দুনিয়া-ব্যাপী সমাদৃত এই চন্দন। এর কাষ্ঠ খণ্ডকে পাথরের উপরে ঘষলে মিহি কাই বের হয়। সেটার বর্ণ খুবই সুন্দর, মানুষ চন্দন বর্ণের চামড়া খুবই পছন্দ করে। তাইতো সুশ্রী রমণীরা তাদের গায়ের রং চন্দনের মত করার জন্য উদগ্রীব থাকে এবং মুখমণ্ডলে চন্দন গুঁড়া ব্যবহার করত। চন্দন কাঠে তৈল থাকে, এর কাঠ ঘষা কাই চামড়াতে ঘঁষলে চামড়ার বর্ণ মিহি ও চিকচিক করে।

শ্বেত চন্দনের গাছ থেকে পাতন ব্যবস্থায় তেল নিস্কাশন করে প্রসাধনী, ঔষধ ও দামী আতর শিল্পে ব্যবহার করা হয়। শ্বেতচন্দন আমাদের কাছে সুগন্ধি কাঠ হিসেবে পরিচিত হলেও চন্দন কাঠের নির্যাস সাবান, পাউডার, আতর, ক্রিম, দাত মাজার পেষ্ট তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। আধুনিক ভেষজ শাস্ত্রে শ্বেতচন্দন বহু রোগের জন্য ব্যবহার করা হয়। রুপচর্চায় শ্বেত চন্দন ব্যবহারে যাদুকরি উপকার পাওয়া যায়।

চন্দনের ঘ্রাণ উপাদেয়, এর ঘ্রাণেও রয়েছে বহুবিধ উপকারিতা। এর ঘ্রাণ ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী। সকল শ্রেণী বয়সের মানুষের নিকট এই ঘ্রাণ পছন্দনীয়। চন্দনের তাজা ঘ্রাণ কিংবা ধোঁয়া শ্বাসনালীর প্রদাহ দূর করে। বাচ্চাদের বদ হজম দূর এবং হজম শক্তি বৃদ্ধিতে এর তুলনা নাই। পেটের গ্যাস, কলিজার প্রদাহে বড়ই উপকারী।

চন্দনকে ঔষধি গুণের খনি বলে মনে করা হয়। এতে অ্যান্টিপায়রেটিক (জ্বর কমানোর গুণ), অ্যান্টিসেপ্টিক, অ্যাস্কেবেটিক এবং মূত্রবর্ধক গুণ পাওয়া যায়। চন্দন কাঠ ব্রঙ্কাইটিস, সিস্টিসিস (মূত্রাশয় ফুলে যাওয়ার সমস্যা), ডিসুরিয়া (প্রস্রাবের সময় জ্বালা করার সমস্যা) এবং ডায়াবেটিস রোগের ক্ষেত্রেও সমাধানে কাজে আসে। রক্ত চন্দনেও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টঅক্সিডেন্ট এবং ব্যথা কমানোর গুণ পাওয়া যায়।

শ্বেত চন্দনে থাকা ফ্লেবোনাইডস এবং পলিফেনোলিক যৌগ চন্দনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি গুণের জন্য দায়ী। এছাড়াও আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে, ফোলা বা মাথা ব্যথার মতো সমসস্যার সমাধানের জন্য চন্দনের প্রলেপ লাগানোর কথাও উল্লেখ রয়েছে। তাই সামান্য ফোলার মতো কোনও সমস্যা সমাধানের জন্য চন্দনের ব্যবহার লাভজনক।

গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে যে, চন্দনে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ। সেই গবেষণায় বলা হয়েছে, চন্দনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ ডিপিপিএইচ র‍্যাডিকেলের ক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী।

চন্দনের তেলে অ্যান্টিক্যানসারের গুণ পাওয়া যায়। এর পাশাপাশি চন্দন গাছ থেকে পাওয়া আলফা স্যান্টালোল-এ অ্যান্টিক্যানসার এবং কেমোপ্রিভেন্টিভ গুণ রয়েছে।

অতিরিক্ত চিন্তা, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব বা বমির সমস্যা দূর করতেও চন্দন কাঠ উপকার করে। এক চামচ চন্দনের গুঁড়া এবং এম্বালিসা অফিসিনালিস এক কাপ উষ্ণ গরম জলে মিশিয়ে খেলে বমি-বমি ভাবের সমস্যা থেকে রেহাই পায়া যেতে পারে।

ত্বকের অ্যালার্জি দূর করতে চন্দনের ভূমিকা রয়েছে। একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, এটি সোরিয়াসিস এবং অ্যাটোপিক ডার্মাটিটিস যা ত্বকে লাল র‍্যাশে চুলকানির জন্য উপশমেও লাভদায়ক। এর আলফা স্যান্টালোল যৌগে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণই এর জন্য দায়ী।

চন্দনে অ্যান্টি-পায়রেটিক গুণ জ্বর কমানোর কাজে উপযোগী। তাই চন্দনের এই গুণের কারণে জ্বরে উপশম হয়ে থাকে।

চন্দনের তেল দিয়ে অ্যারোমাথেরাপি নেওয়া যেতে পারে। গায়ের দুর্গন্ধ দূর করতে চন্দনের পেস্ট বা চন্দনের তেল গোসলের পানিতে মিশিয়ে তা দিয়ে গোসল করা যেতে পারে। বাজারে বেশ কিছু স্যান্ডালউড সাবানও পাওয়া যায়, সেই সাবানও ব্যবহার করা যেতে পারে।

(ঢাকাটাইমস/২৬জানুয়ারি/আরজেড/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :