ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে চ্যালেঞ্জের মুখে জি-৭ ঐক্য

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৬ জুন ২০২২, ১৪:০০| আপডেট : ২৬ জুন ২০২২, ১৪:০৭
অ- অ+

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অনিবার্য প্রভাব পড়তে যাচ্ছে জার্মানির বাভারিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য ৪৮তম জি-৭ সম্মেলনে। সেই সঙ্গে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, কানাডা ও জাপানের নেতারাও। এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল নিজেদের ঐক্য প্রদর্শন করা এবং যুদ্ধের বিষয়ে সংকল্প করা। সাম্প্রতিক মাসগুলিতে পশ্চিমা জোটের মধ্যে ক্লান্তির লক্ষণ দেখা গেছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয় ফ্রান্স, জার্মানি এবং ইতালির কেউ কেউ বলছে, ইউক্রেন যদি নিজেদের ভূখন্ড ছেড়েও দেয় তাও এই যুদ্ধ শেষ হওয়াটা ভাল নাও হতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপে পরিচালিত একটি জনমত জরিপে কিছু ভোটাররা বলছে, রাশিয়াকে শাস্তি দেওয়ার আগে জীবনযাত্রার ব্যয়-সংকটের সমাধান করা গুরুত্বপূর্ণ। তারা এটাই সবার প্রথমে এটাই চান। আর কিছু ভোটাররা ভবিষ্যতে রাশিয়ার সঙ্গে কোনো ধরণের সম্পর্ক রক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে মত দিয়েছে।

যুক্তরাজ্য, পোল্যান্ড এবং তিনটি বাল্টিক রাষ্ট্রের দেশ এই যুক্তিগুলিকে প্রতিহত করেছে। তারা বলছে, মস্কোর সঙ্গে ইউক্রেনের শর্তে নয় এমন যে কোনো শান্তি চুক্তি ভবিষ্যতে আরো রাশিয়ান আগ্রাসনের দিকে নিয়ে যাবে৷ রাষ্ট্রপতি জেলেনস্কি সোমবার কার্যত শীর্ষ সম্মেলনে ভাষণ দেওয়ার সময় এই যুক্তিটির পক্ষেই অবস্থান করতে পারেন বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।

মূলত এ কারণেই জি-৭ নেতারা এই ঘোলা জল পরিষ্কার করার জন্য শীর্ষ সম্মেলন করার চেষ্টা করবেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে। সম্মেলেনে ইউক্রেনকে আরও অস্ত্র এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে বলেও বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এর মাধ্যমে ভ্লাদিমির পুতিনকে একটি সংকেত প্রেরণ করা হবে যে ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন বজায় রাখার জন্য পশ্চিমাদের কৌশলগত ধৈর্য রয়েছে। এমনকি তাদের যদি ক্রমবর্ধমান মূল্যের বিষয়ে উদ্বিগ্ন ভোটারদের থেকে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপেরও মুখোমুখি হতে হয় তাও তারা ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন বজায় রাখবেন।

জি-৭ নেতাদের প্রতিবন্ধকতা হলো তারা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করার জন্য ক্রমবর্ধমান চাপের সম্মুখীন হচ্ছেন। জ্বালানি ও খাদ্যের ঊর্ধ্বমুখী মূল্য বিশ্বজুড়ে ক্ষুধা ও অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। আর কিছু দেশ পশ্চিমাদের দিকে আঙুল তুলছে।

তবে দক্ষিণের অনেক দেশই রাশিয়ার আগ্রাসনকে পশ্চিমা উদ্বেগ হিসেবে দেখছে না। এই সংঘাতকে তারা ইউরোপীয় যুদ্ধ হিসেবেই দেখছে। শুধু তাই নয়, পুতিন ঔপনিবেশিক আগ্রাসী হিসেবে কাজ করছেন— পশ্চিমাদের এই যুক্তিকেও অচল মনে করে তারা। তারা মনে করে, গ্যাস ও তেলের ক্রমবর্ধমান মূল্য এবং গম ও সারের ব্যাপক ঘাটতির জন্য যতটা রাশিয়ার আক্রমণ দায়ি তার থেকে বেশি দায় পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলির।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দক্ষিণের এই ধারণা ভ্রান্ত প্রমাণ করার জন্যেও সম্মেলন করবে জি-৭ শীর্ষ দেশগুলো। জি-৭ নেতারা এই সম্মেলনের মাধ্যমে প্রমাণ করতে চাইবেন তারা বিশ্বের দেশগুলিকে সাহায্য করার জন্য কাজ করছে, বিশেষ করে উন্নয়ন সহায়তা, ঋণ পুনর্গঠন, জলবায়ু অর্থায়ন, শক্তির বিকল্প উত্স খুঁজে পেতে সহায়তা এবং নতুন প্রচেষ্টার মাধ্যমে ইউক্রেনের বন্দর থেকে শস্য বের করা ইত্যাদি। এ কারণেই জার্মানি মূলত ভারত, ইন্দোনেশিয়া, সেনেগাল, আর্জেন্টিনা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার নেতাদের এই শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানিয়েছে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি শুনতে। তারা বিশ্বের বাকি দেশগুলোকে এটাই দেখাতে চায় যে জি-৭ তাদের সমস্যা শুনছে৷

সুতরাং, একদিকে এই পশ্চিমা নেতাদের অবশ্যই ইউক্রেনকে সমর্থন চালিয়ে যাওয়ার জন্য দৃঢ় সংকল্প দেখাতে হবে এবং অন্যদিকে তাদের অবশ্যই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ধাক্কা মেটাতে প্রস্তুতি দেখাতে হবে যেটা আংশিকভাবে হলেও যুদ্ধের প্রভাবেই হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২৬জুন/এসএটি)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
হাতিরপুলে গণসংহতি আন্দোলনের কার্যালয়ের সামনে দুই ককটেল বিস্ফোরণ
৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ১৬৯০ জন
এনসিপির ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি শুরু
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ ও যোদ্ধাদের স্মরণে ‘বিআরপি’র মশাল মিছিল
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা