স্কুলে ছাত্রীর সঙ্গে ঘোরাঘুরিতে বাধা দেয়ায় শিক্ষককে হত্যা করে জিতু

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ৩০ জুন ২০২২, ১৫:৪১| আপডেট : ৩০ জুন ২০২২, ১৮:০২
অ- অ+

সাভারের আশুলিয়ার হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র আশরাফুল আহসান জিতু ওই প্রতিষ্ঠানের কলেজ পর্যায়ের একজন ছাত্রীর সঙ্গে ‘অযাচিতভাবে’ ঘোরাফেরা করে বেড়াত। বিষয়টি শিক্ষক উৎপল সরকারের চোখে পড়ে। তিনি জিতুকে এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেন। এতে ওই ছাত্রীর কাছে নিজের হিরোইজম দেখাতে উৎপল সরকারকে মারধর করে স্কুলে ছাত্রদের কাছে ‘দাদা’ হিসেবে পরিচিত জিতু। এতেই ওই শিক্ষকের মৃত্যু হয়।

র‌্যাব বলছে, জিতু স্কুলে সবার কাছে একজন উচ্ছৃঙ্খল ছাত্র হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন সময় শৃঙ্খলাভঙ্গ, মারামারিসহ স্কুলের পরিবেশ নষ্টের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। স্কুলে যাওয়া-আসার পথে ও স্কুল চলাকালীন ছাত্রীদের ইভটিজিং করতো জিতু। স্কুলে সবার সামনে ধূমপান, ইউনিফর্ম ছাড়া স্কুলে আসা-যাওয়া, মোটরসাইকেল নিয়ে বেপরোয়াভাবে চলাফেরা করত।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

র‌্যাব জানায়, ঘটনার পর জিতু পালিয়ে যায়। দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে। পরে বুধবার (২৯ জুন) র‌্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র‌্যাব-১ ও র‌্যাব-৪-এর যৌথ অভিযানে গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

নিহত শিক্ষক উৎপল সরকার হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষকতার পাশাপাশি শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম, ইভটিজিং, ধূমপানসহ শৃঙ্খলাভঙ্গজনিত বিষয়গুলোও দেখভাল করতেন। তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খেলাধুলা পরিচালনা করাসহ শিক্ষার্থীদের সুপরামর্শ, মোটিভেশন ও কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে সৃজনশীলতা বিকাশে ভূমিকা রাখতেন।

এদিকে গ্রেপ্তার জিতুকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ঘটনার কয়েকদিন আগে জিতুকে ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীর সঙ্গে অযাচিতভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখেন শিক্ষক উৎপল সরকার। এসময় তিনি তাকে অযাচিত ঘোরাফেরা থেকে বিরত থাকতে বলেন। এ ঘটনায় জিতু শিক্ষকের ওপর ক্ষুব্ধ হয়। ওই ছাত্রীর কাছে নিজের হিরোইজম দেখাতে শিক্ষকের ওপর হামলার পরিকল্পনা করে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৫ জুন ক্রিকেট স্ট্যাম্প স্কুলে নিয়ে আসে এবং তা শ্রেণিকক্ষের পেছনে লুকিয়ে রাখে। পরে কলেজ মাঠে ছাত্রীদের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলাকালীন শিক্ষক উৎপল কুমারকে মাঠের এক কোণে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিতু স্ট্যাম্প দিয়ে তাকে বেধড়ক মারপিট করে।

খন্দকার আল মঈন বলেন, জিতু প্রথমে পেছন থেকে শিক্ষক উৎপল সরকারের মাথায় আঘাত করে। পরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে গুরুতর জখম করে, যার ফলে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন উৎপল সরকার মারা যান। ঘটনার দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত জিতু এলাকায় থাকলেও পরে গ্রেপ্তার এড়াতে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। সে প্রথমে বাসে করে মানিকগঞ্জে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে যায়। সেখানে এক রাত থেকে পরদিন আরিচা ফেরিঘাটে যায়। সেখান থেকে ট্রলারে নদী পার হয়ে পাবনার আতাইকুলাতে তার পরিচিত একজনের বাড়িতে আত্মগোপন করে। পরদিন ভোরে সে আবারো তার অবস্থান পরিবর্তন করতে আতাইকুলা থেকে বাসে কাজীরহাট লঞ্চ টার্মিনালে আসে। লঞ্চে করে আরিচাঘাট পৌঁছে। সেখান থেকে বাসে গাজীপুরের শ্রীপুরে ধনুয়া গ্রামে এক বন্ধুর বাড়িতে আত্মগোপন করে। সেখান থেকেই জিতুকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

র‌্যাব জানায়, জিতু প্রথমে স্কুল পড়াশোনা করত। পরে সে মাদরাসায় ভর্তি হয়। এরপর আবার সে স্কুলে ভর্তি হয়। জিতু স্কুলের নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে বর্তমানে দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত।

এদিকে জিতুর বিরুদ্ধে সাভার থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। কিন্তু জেএসসির সার্টিফিকেট অনুযায়ী বয়স ১৯ বছর হলেও মামলার এজাহারে তার বয়স ১৬ বলে উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানান র‌্যাব মুখপাত্র।

জিতুর নেতৃত্বে 'দাদা' নামে একটি কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানায় র‍্যাব। র‍্যাব বলেছে, গ্যাং সদস্যদের নিয়ে মাইক্রোবাসে করে ওই ছাত্র যত্রতত্র আধিপত্য বিস্তার করত। পরিবারের কাছে তার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলে গ্যাং সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে তাদের ওপর চড়াও হতো।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘নিহত শিক্ষক উৎপল সরকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। তিনি ২০১৩ সালে আশুলিয়ার হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন।

জিতুর বাবাকে গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তা মনে করেছেন তদন্তের স্বার্থে তাকে রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন। তাই জিতুর বাবাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়েছেন। প্রকৃত আসামি জিতুকে গ্রেপ্তার করেছি। তাকে থানায় হস্তান্তর করা হবে।’

ওই ছাত্রের পরিবার শিক্ষকের পরিবারকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে কি না জানতে চাইলে আল মঈন বলেন, ‘আমরা উৎপলের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু এমন কোনো হুমকি-ধমকির বিষয়ে তথ্য পাইনি।’

ঢাকাটাইমস/৩০জুন/ইএস

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ১৬৯০ জন
এনসিপির ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি শুরু
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ ও যোদ্ধাদের স্মরণে ‘বিআরপি’র মশাল মিছিল
জুলাই স্মরণে আজ বিএনপির আলোচনা সভা, বার্তা দেবেন খালেদা জিয়া-তারেক রহমান
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা