বাজারে হাহুতাশ, রমজান ঘিরে কী ভাবছেন ব্যবসায়ীরা?

অভিজিত রায় কৌশিক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৭:৪৫ | প্রকাশিত : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৬:৪৮

রমজান আসতে বাকি এক মাস, এর মধ্যেই নিত্যপণ্যের বাজারে বেড়েছে হাহুতাশ। রমজান ঘিরে ভোগ্যপণ্যের সম্ভাব্য চাহিদার অনুপাতে বাজারে যোগান নেই বলে দাবি করছেন খুচরা ও পাইকাররা। এ সঙ্কটের ফলে বাজার আরও অস্থিতিশীল হতে পারে বলেও আশঙ্কা তাদের।

তবে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোজায় ভোগ্যপণ্যের অধিকাংশই দেশে আমদানি করতে হয়। তবে চলমান ডলার সংকটের কারণে আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খুলতে জটিলতায় পড়ছেন আমদানিকারকরা। এর ফলেই পণ্যের সঙ্কট আরও ঘনীভূত হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি রমজানে ছোলা, খেজুর, চিনি ও পেয়াজসহ অতিপ্রয়োজনীয় ৮ পণ্য আমদানিতে এলসি খুলতে বাধা নেই বলে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবু কেন, হাহুতাশ? এমন প্রশ্নের উত্তর নেই কারও কাছে।

সূত্র বলছে, প্রতিবারই রোজা এলে একটি শ্রেণী অতি মুনাফার লোভে আটঘাট বেঁধে নামে। আগে থেকেই বাজারে কৃত্তিম সঙ্কট তৈরি করে এবং এ নিয়ে প্রচারণা চালায়। এবারও তার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। এবার তারা ডলার সঙ্কট ও এলসি জটিলতাকে বাজার অস্থিতিশীল করার হাতিয়ার বানাচ্ছে।

রোজায় প্রয়োজনীয় ৮ পণ্য আমদানিতে এলসি জটিলতা হলে এর সমাধানও বলে দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সহায়তা করবে বলেও সম্প্রতি এ তথ্য দিয়েছেন তিনি। তবু সঙ্কটের আভাসে অসাধু ব্যবসায়ীদের ‘শুভঙ্করের ফাঁকি’ দেখছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমকে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, রমজান মাস সামনে রেখে ৮টি (খেজুর, ছোলা, ভোজ্যতেল, ডাল, মটর, পেঁয়াজ, মসলা ও চিনি) প্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বর্তমানে যে পরিস্থিতি চলছে, তাতে পণ্যঘাটতির কোনো আশঙ্কা নেই। তবে ডলার–সংকট রয়েছে। এই সংকটের কারণে ব্যবসায়ীদের ব্যাংকে এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে। তাই ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে দেরি করছে। এ বিষয়ে সরকার ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করবে। কেউ যদি এলসি খুলতে চান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সহায়তা করবে। প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করা হবে। দরকার হলে এলসি ছাড়াও পণ্য আমদানির অনুমতি দেবে সরকার। তেমন হলে আমরা অনুমতি দিয়ে দেব, এলসি লাগবে না।

তবে মাঠ পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিবছর আগে থেকে পণ্য স্টক রাখলেও এবার এখন পর্যন্ত বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে চিন্তা-ভাবনার বাইরে রয়েছেন তারা। বর্তমান বাজারের যে পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে সবধরনের পণ্যেরই দাম বাড়বে। কিন্তু সরকার যদি পণ্য আমদানিতে এলসিসহ সব ধরনের সুযোগ করে দেয় তাহলে পণ্যের দাম কমবে। তাই আগে থেকে রমজানে প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে ঝুঁকি মনে করছেন তারা। তাই মাঠ পর্যায়ের ব্যবসায়ীরাও এখন সিদ্ধান্তহীনতায়। রাজধানীর আগারগাঁও (বিএনপি) বাজারের নিত্যপণ্যের ব্যবসায়ী রাকিবুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বাজারেতো অনেকদিন থেকেই সবকিছুর দাম বেশি। রোজা পর্যন্ত আরও দাম বাড়বে। বড় ব্যবসায়ীরা বাজারে সঙ্কট তৈরি করছে। দেশে উৎপাদিত পণ্যেরও এলসি বন্ধের নামে দাম বাড়াচ্ছে। সরকারতো বলছে- রোজার আগে এলসি বা পণ্য আমদানির সুবিধা করে দেবে। তবুও সঙ্কট দেখা যাচ্ছে। তাই আমরা এখনই রমজান মাস নিয়ে আগে থেকে কিছুই ভাবতে পারছি না।’

ব্যবসায়ী খোকন শেখ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘প্রতি বছর রোজা এলেই সবকিছুর দাম বেড়ে যায়। বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। আমরা পাইকারি পণ্য কিনে আনি। তখন দেখা যায় আমরা যেখান থেকে পণ্য আনছি তারা সাপ্লাই বন্ধ করে দিয়ে সঙ্কট তৈরি করে দাম বাড়িয়ে দেয়। তখন আমাদেরও দাম বাড়িয়ে বিক্রি করতে হয়। তাই চেষ্টা করি রোজায় যেসব পণ্যের দাম বাড়ে সেগুলো আগে থেকে কিছু কিছু কিনে রাখতে। যেন সঙ্কটের মধ্যে পড়তে না হয়।’

এ ব্যবসায়ীর দাবি, ‘এবার বাজারের যে অবস্থা তাতে এভাবে চলতে থাকলে বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। এলসি বন্ধ বলে পাইকাররা সুযোগ নিচ্ছে। দাম আরও বাড়বে। তবে এখন এলসি জটিলতা মিটে গেলে দাম কমে যাবে। তাই এবার আগে থেকে বাজারের কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। রোজার কোনো পণ্য কিনতে পারছি না। কারণ এখন বেশি দামে পণ্য কিনলে পরে দাম কমে যাবে আর লোকসান গুণতে হবে।’

অপরদিকে দেশের বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ক্রেতারা দাবি করেন, দেশের বাজারে কোনো কিছুর দাম বাড়লে তা আর কমে না। মেহেদী হাসান নামে এক ক্রেতা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘অসাধু ব্যবসায়ীদের দমন করতে সরকার ব্যর্থ। তাই রোজার আগে বাজার নিয়ে কোনো আশা দেখছি না।’

টিটুল হোসেন নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ‘দেশের বাজারে দাম কমবে এটা স্বপ্নের মতো। আমরা দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ। রোজা নিয়ে কোনো কিছুই ভাবি না। আল্লাহ যা করবে তাই হবে।’

আরও পড়ুন: মধ্যবিত্তেরও সামর্থ্যের মধ্যে নেই বাজার, ‘বেঁচে থাকা কঠিন’

বর্তমান বাজারে অধিক প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের দাম:

এদিকে সরেজমিনে ঢাকার বিভন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্যাকেট চিনি ১১২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে তাও সঙ্কট রয়েছে। এছাড়া খোলা চিনির দাম অস্বাভাবিকভাবে প্যাকেট চিনির চেয়ে ৩-৮ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়াও বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম ৪০ টাকা কেজি, ইন্ডিয়ান রসুন ২২০ টাকা, দেশি রসুন ১৬০ টাকা, দেশি আদা ১৬০, ইন্ডিয়ান আদা ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভোজ্যতেলের দাম আগের মতই ১৮৭ টাকা লিটার হলেও কৃত্তিম সঙ্কটের আভাস পাওয়া যায় খোলা বাজারে। অপরদিকে বিশ্ব বাজারে আটার দাম কমলেও দেশের বাজারে বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়িতি দামেই। প্যাকেট আটা প্রতি কেজি ৬৫ থেকে ৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে খোলা আটার সঙ্কট দেখা গেছে। প্যাকেট ও খোলা আটার প্রায় একই দাম হওয়াতে অনেক দোকানি খোলা আটা বিক্রিই বন্ধ করে দিয়েছেন। বাজারে আটাশ চালের দাম প্রতি কেজি ৬০ টাকা, মিনিকেট ৭০ টাকা, আতপ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/১৯ফেব্রুয়ারি/কেআর/এসএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

নারী প্রশিক্ষণার্থীদের মোটর ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ সম্পন্ন 

ঋণের সুদহার ১৪ শতাংশের বেশি হবে না, বাংলাদেশ ব্যাংকের আশ্বাস

ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির পর দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়ালেন পাইকাররা

ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে অ্যাস্ট্রা এয়ারওয়েজের চুক্তি স্বাক্ষর

কৃষকদের আর্থিক সহায়তা দিল সাউথইস্ট ব্যাংক

ঈদ উপলক্ষ্যে দেশব্যাপী বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ‘ট্রাক সেল’ কার্যক্রম উদ্বোধন

বিসিএসআইআর ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে গবেষণা চুক্তি স্বাক্ষর

ঈদ উপলক্ষে ওয়ালটনের বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব পণ্য উন্মোচন 

বাজেট ২০২৪-২৫: ধনীদের কর বাড়ছে

‘ঈদ উৎসব-কোরবানি অফার’ ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করল সনি-র‌্যাগস

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :