ঋণের সুদহার ১৪ শতাংশের বেশি হবে না, বাংলাদেশ ব্যাংকের আশ্বাস

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ১৬ মে ২০২৪, ২২:২০ | প্রকাশিত : ১৬ মে ২০২৪, ২২:১৮
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন এফবিসিসিআই সভাপতি

ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাজারভিত্তিক ছেড়ে দেওয়ার পর এবার পরোক্ষভাবে তা নিয়ন্ত্রণের ইঙ্গিত দিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ১৪ শতাংশের ওপরে যেতে দেওয়া হবে না বলে এফবিসিসিআইকে আশ্বাস দিয়েছেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক শেষে এসব কাথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এর সভাপতি মাহবুব আলম।

তিনি বলেন, ঘন ঘন নীতি পরিবর্তনের কারণে ব্যবসায়ীক পরিকল্পনায় বিপত্তি তৈরি হয়। তবে গভর্নর আশ্বাস দিয়েছেন এখন থেকে নীতিমালা স্থিতিশীল থাকবে। আর পরিবর্তন হবে না। সুদের হার বাজারভিত্তিক করা হলেও এটাকে ১৪ শতাংশের ওপরে যেতে দেওয়া হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন গভর্নর। ব্যবসায়ীরা যাতে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ না হয় তেমন ব্যবস্থা নেওয়া হবে ভবিষ্যতে। এফবিসিসিআই বলেন, ‘আমি মনে করি দেশের মূল্যস্ফিতি বৃদ্ধির সাথে সুদহারের কোনো সম্পর্ক নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডলারের দাম একসাথে ৭ টাকার বাড়ার কারণে যে পরিমাণ ঋণ বেড়েছে সে পরিমানণ টাকার দীর্ঘমেয়াদী ঋণের আবেদন করেছেন ব্যবসায়ীরা। কারণ ডলারের দাম বাড়ার কারণে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তাছাড়া যাদের ঋণে একক গ্রাহক ঋণসীমা অতিক্রম করেছে। তাদের জন্য বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানিয়েছেন গভর্নর। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ডলার মার্কেট স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলেও জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা।’

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘আমরা ডলারের অভাবে এলসি খুলতে পারছি না। এদিকে ইডিএফ কমিয়ে তিন বিলিয়নে নামিয়ে আনা হয়েছে। এর কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এই সমস্যা সমাধানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিকল্প একটি তহবিল ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’

ব্যবসায়ীরা এখন ১১৭ টাকায় এলসি খুলতে পারছেন কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘যদি কোনো ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বেশি টাকা নেওয়া হয় তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভিযোগ করতে বলা হয়েছে। তাহলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে কিছু কিছু গ্রাহকের একক গ্রহণ সীমা অতিক্রম করেছে। বিষয়টি সমাধানে ব্যাংক এবং গ্রাহক ভিত্তিক বিশেষ সুবিধা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন গভর্নর। ফান্ডেড এবং নন ফান্ডেড মিলে ২৫ শতাংশের বেশি ঋণ একজন গ্রাহক না পাওয়ার শর্ত থাকলেও এই পরিস্থিতিতে তাদের জন্য বিশেষ বিবেচনা করা হবে।’

প্রসঙ্গত, গত ৮ মে ব্যাংকঋণের সুদহার নির্ধারণ পদ্ধতি সিক্স মান্থ মুভিং অ্যাভারেজ রেট (স্মার্ট) প্রত্যাহার করে নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

নতুন সিদ্ধান্তে বলা হয়, এখন থেকে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণের সুদহার নির্ধারিত হবে। ঋণের সুদহার সম্পূর্ণরূপে বাজারভিত্তিক করার জন্য ছয় মাসের ট্রেজারি বিলের গড় সুদভিত্তিক ব্যবস্থা প্রত্যাহার করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এসংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কিন্তু এখন এই নির্দেশনা যথাযথভাবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পিছু হটছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ধারণা করা হচ্ছে আইএমএফ-র কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি।

এদিকে গতকাল (বুধবার) এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, যেসব গ্রাহকের নির্ধারিত একক গ্রাহক ঋণসীমা অতিক্রম করেছিল, তাদের ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ঋণ নির্ধারিত সীমার মধ্যে নামিয়ে আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এরপরও কিছু গ্রাহক একক গ্রাহক ঋণের ঊর্ধ্বসীমা শিথিল করার জন্য আবেদন করছেন, যা নির্দেশনার পরিপন্থী।

এমন প্রেক্ষাপটে বৃহৎ ঋণঝুঁকি হ্রাস, করপোরেট সুশাসন সমুন্নত রাখা এবং ঋণ বিতরণে উত্তম চর্চা নিশ্চিত করার মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য একক গ্রাহক ঋণ সীমা কোনোক্রমেই অতিক্রম না করার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া যাচ্ছে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে সেই নির্দেশনা যথাযথ বাস্তবায়ন করবেন না বলে জানিয়েছে গভর্নর।

(ঢাকাটাইমস/১৬মে/এসআইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :