বিএনপি ক্ষমতায় গেলে চব্বিশের শহীদদের নামে হবে স্থাপনা-সড়কের নাম: তারেক রহমান

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দেশের বিভিন্ন স্থাপনা, সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান চব্বিশের শহীদদের নামে নামকরণের উদ্যোগ নেবে বলে জানিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপির ‘গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪: জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনা সভা এবং শহীদ পরিবারের সম্মাননা অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, ‘১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধাদের যেমন মানুষ ভোলেনি, তেমনই চব্বিশের যোদ্ধাদেরও জাতি ভুলবে না। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বিভিন্ন স্থাপনা শহীদদের নামে নামকরণের চিন্তা আমাদের আছে।’
দেশ ও জনগণের স্বার্থে যারা আত্মত্যাগ করেছেন তাদের জন্য কিছু ভাবনা তুলে ধরছেন উল্লেখ করে বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা দেশকে একটি চিরস্থায়ী ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে চাই, যেখানে জনগণের হাতে থাকবে সব ক্ষমতা। তবেই রাজনৈতিক দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়ন কমে আসবে বলে বিশ্বাস করি।’
চব্বিশের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তিতে ৩৬ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন শুরু করেছে বিএনপি। এদিন সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে ‘গণঅভ্যুত্থান ২০২৪ : জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনা সভা এবং শহীদ পরিবারের সম্মানে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিএনপি। অনুষ্ঠানে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। এছাড়াও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি বক্তব্যের মাধ্যমে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবার, আহত নেতাকর্মী ও সমর্থকদের পাশাপাশি ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত ৬৩টি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা, বুদ্ধিজীবী, সিনিয়র সাংবাদিকসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষও উপস্থিত ছিলেন। শহীদ পরিবারকে ক্রেস্ট ও সম্মাননা দেওয়া হয়। অভ্যুত্থানের একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।
তারেক রহমান বলেন, ‘২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট পলায়নের পরই আমার প্রথম বক্তব্যে বলেছিলাম- অনেক ত্যাগের বিনিময়ে ৫ আগস্ট আরেকটি বিজয় দেখেছে বাংলাদেশ। একজন শহীদ শুধু আপনাদের স্বজন নয়, তারা দেশের গৌরব ও মুক্তিকামী জনতার। তাদের জানাই শ্রদ্ধা।’ গণঅভ্যুত্থানে যারা তাদের সন্তান হারিয়েছেন, প্রিয়তম স্বামী ও প্রিয়তম ভাইকে হারিয়েছেন, তাদের প্রতিও শদ্ধা জানান তিনি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘দেড় দশকের আন্দোলনে গুম-খুনের শিকার হয়েছেন বহু মানুষ। অপহরণের তালিকা অনেক দীর্ঘ। শুধু জুলাই আন্দোলনে বিএনপির ৪২২ জনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অন্তত দেড় হাজার মানুষ শহীদ হয়েছেন। ৩০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। এক হাজারের বেশি পঙ্গু হয়েছেন। শিশু-বাচ্চাও শহীদ হওয়া থেকে বাদ যায়নি। বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রতিটি অধ্যায় এভাবে শহীদ আবু সাঈদ, ওয়াসিম ও মুগ্ধর মতো অনেকে জীবন দিয়েছেন। মানুষের প্রশ্ন যে- এভাবেই কি মানুষ জীবন দিতে থাকবে?’
একটি দেশের জন্য ৫৪ বছর কম সময় নয় বলে মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, ‘এই সময়ে মানুষের ত্যাগ আমরা ভুলে যেতে চাই না। বরং যারা দেশ ও জনগণের কল্যাণে রাজনীতি করি তাদের অঙ্গীকার হলো- নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও সুশৃঙ্খল রাজনীতি, ওয়াদা পূরণের রাজনীতি।’
এ সময় ভবিষ্যতে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে সমন্বয় রেখে দেশ গঠনের কিছু পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন তারেক রহমান।
রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা স্মরণ করিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে আমরা জাতীয় সরকার গঠন করে কাজ করব। জাতীয় স্বার্থে আমরা সবাই এক। জাতীয় ঐক্যে সব দলের এক হওয়া জরুরি নয়। তাঁবেদার অপশক্তি যাতে মাথাচড়া দিতে না পারে সেদিকে জাতীয় ঐক্য অটুট রয়েছে এবং থাকবে ইনশাআল্লাহ।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও ‘জুলাই-আগস্ট’ গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালন কমিটির আহ্বায়ক রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন কমিটির সদস্য সচিব ও বিএনপির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান।
আরও বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সালাহউদ্দিন আহমদ, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকী।
এ ছাড়া এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব আরিফুল ইসলাম আদিব, এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরীর সভাপতি মাওলানা জোনায়েদ আল হাবিব, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির আহমদ আলী কাসেমি, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খান, ১২ দলীয় জোটের সৈয়দ এহসানুল হুদা, শাহাদাত হোসেন সেলিম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহিউদ্দিন ইকরাম বক্তব্য দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা নিতাই রায় চৌধুরী, আমানউল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, ইসমাইল জবিহউল্লাহ, এম এ মালিক, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আব্দুস সালাম আজাদ, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মীর সরফত আলী সপু।
আরও উপস্থিত ছিলেন নজরুল ইসলাম আজাদ, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, ব্যারিস্টার মীর হেলাল, মিফতাহ সিদ্দিকী, নিলোফার চৌধুরী মনি, ড. মাহদী আমিন প্রমুখ।
সারা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আহত ব্যক্তি, শহিদ পরিবার ও এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
পেশাজীবী ও বিশিষ্টজনদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, যুগান্তর সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকদার, সংগ্রাম সম্পাদক আযম মীর শাহীদুল আহসান, বাসসের চেয়ারম্যান সাংবাদিক আনোয়ার আলদীন, অধ্যাপক ড. শামসুল আলম, আমিরুল ইসলাম কাগজী, সৈয়দ আবদাল আহমদ, ড. আব্দুল হাই সিদ্দিকী, অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, প্রকৌশলী মো. মোস্তফা-ই জামান সেলিম (সিআইপি), প্রকৌশলী একেএম আমিরুল মোমিন বাবলুসহ কয়েক হাজার নেতাকর্মী।
(ঢাকাটাইমস/১জুলাই/এলএম/মোআ)

মন্তব্য করুন