কুচনী গণহত্যা দিবস আজ: ৫১ বছরেও বধ্যভূমি বাস্তবায়ন হয়নি

শেখ সিরাজুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
  প্রকাশিত : ২০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:১৮
অ- অ+

১৯৭১ সালের ২০ এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের কুচনী গ্রামে হামলা চালায়। তখন গ্রামটি ছিল হিন্দু বসতি এলাকা। কুচনী গ্রামে প্রবেশ করেই পাকিস্তানী বাহিনী বাড়িঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এতে গ্রামের ৫০টি বাড়ি পুড়ে ধ্বংস হয়ে যায়। এ সময় গ্রামের নারী-পুরুষ শিশু সহ প্রায় সকলেই প্রাণ নিয়ে অন্যগ্রামে পালিয়ে যায়। যারা পালাতে পারেননি তাদের মধ্যে ৪ নারীসহ ৯ জনকে আটক করে কুচনী খেলার মাঠে (বর্তমান কুচনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ) নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। তাদের কাউকে কাউকে বেয়নেট নিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে। এরপর তাদেরকে একসঙ্গে মাটিচাপা দেওয়া হয়।

http://www.museumbd.org ওয়েবসাইটে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার কুচনী গ্রামের গণহত্যার তথ্য এভাবেই তুলে ধরা হয়েছে। ‘কুচনিগ্রাম গণহত্যা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া’ শিরোনামে তথ্য প্রকাশ করা মিউজিয়ামবিডি ওয়েবসাইটটি ১৯৭১ সালের গণহত্যা-নির্যাতনের তথ্য সম্বলিত অনলাইন আর্কাইভ ও জাদুঘর।

এছাড়াও বিশিষ্ট গবেষক ও লেখক মুনতাসির মামুন রচিত ‘মুক্তিযুদ্ধ কোষ’ গ্রন্থে কুচনী গ্রাম গণহত্যার উল্লেখ রয়েছে। বিটিভিতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ শিরোনামের অনুষ্টানে কুচনী গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যসহ একাধিকবার প্রচারিত হয়েছে। ২০১৭ সালে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট আ. রাশেদের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থ ‘মুক্তিযুদ্ধে সরাইল’ ও ২০১৩ সালের জুন মাসে স্থানীয় সাংবাদিক তৌফিক আহমেদ তফসির সম্পাদিত ‘সরাইলের ইতিবৃত্ত’ গ্রন্থেও কুচনী গণহত্যার ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। অথচ স্বাধীনতার ৫১ বছর পেরিয়ে গেলেও সেদিনের গণহত্যার শিকার নিহতদেরসহ শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি ও ঘটনাস্থলকে বধ্যভূমি হিসাবে ঘোষণা দিয়ে সংরক্ষণ করার দাবিতে সরকারি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পেছনে ঘুরতে হচ্ছে ভূক্তভোগী পরিবারগুলোকে।

এ প্রসঙ্গে শহীদ পরিবারের সন্তান ব্রজেন্দ্র চন্দ্র দাস ও সুধাংশু দাস জানিয়েছেন, বধ্যভূমি বাস্তবায়নের বিষয়ে কুচনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির মাধ্যমে ৩ বছর আগে সরাইলের তৎকালীন ইউএনও এ,এস,এম মোসাকে জানিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছিল। তিনি (ইউএনও) সরেজমিনে পরিদর্শনও করেছিলেন। পরে আমরা বধ্যভূমি বাস্তবায়নে ব্যবস্থা নিতে ইউএনও বরাবর আবেদন করলে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার মাধ্যমে গণহত্যার ঘটনার সত্যতা যাচাই করা হয়। বিভিন্নভাবে তথ্য প্রমাণ থাকা সত্বেও এ ঘটনার সত্যতা যাচাই-বাচাই কতটা যুক্তিযুক্ত তা আমাদের বোধগম্য নয়।

জানতে চাইলে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ইসমত আলী বলেন, কুচনী বধ্যভূমি বাস্তবায়ন ও নিহতদের পরিবারকে শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি প্রদানের দাবি জানাই। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক কবি জয়দুল হোসেন জানিয়েছেন গণহত্যার শিকার নিহতদের পরিবারের দাবির সঙ্গে আমরা একমত, কারণ বধ্যভূমি দীর্ঘদিনের দাবি।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর বলেন শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি লাভে ও বধ্যভূমি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের বিজয়ের মাসে সরাইলের কুচনী বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মানের দাবি’ শিরোনামে খবর প্রকাশের পর ইউএনও এস,এস,এম মোসা খোঁজ খবর নিলেও বিষয়টির খুব একটা অগ্রগতি হয়নি। ২০২২ খ্রিস্টাব্দের ২০ এপ্রিল কুচনী গণহত্যা দিবসে উপজেলা প্রশাসন,উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ,সরাইল থানা প্রশাসন আনুষ্ঠানিক ভাবে শহীদদের সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা জানানোর সময় শহীদপরিবারের সদস্যবৃন্দ ও স্থানীয় জনগণ শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি ও বধ্যভূমি বাস্তবায়নের দাবি জানালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল হক মৃদুল বিষয়টির আশ্বস্ত করলেও বাস্তবে কোন অগ্রগতি হয়নি। আগামী ২০ এপ্রিল কুচনী গণহত্যা দিবস সামনে রেখে শহীদ পরিবারের সদস্যদের আকুতি-" আমাদের স্বজনদের সমাধিস্থলে বধ্যভূমি বাস্তবায়ন হয়নি ও শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি মিলেনি স্বাধীনতার ৫১ বছর পেরিয়ে গেলেও, এটি স্বজন হারানোর ব্যাথা আরো বাড়িয়ে দেয়"। শহীদদের পরিবারের সদস্যগণ বধ্যভূমি বাস্তবায়ন ও শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি দিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

(ঢাকাটাইমস২০এপ্রিল/এআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ক্রিমিনাল ডাটাবেইজ পর্যালোচনার মাধ্যমে ছিনতাইকারী চক্র শনাক্ত করেছি: নাসিরুল ইসলাম
‘ওয়্যার ৩৬৫’ চালু করলো ব্র্যাক ব্যাংক  
গাইবান্ধায় দেয়াল চাপায় নির্মাণশ্রমিকের মৃত্যু
চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে ভৈরবে সিএনজিচালকদের সড়ক অবরোধ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা