কাঁচা আমের এতগুণ, জানলে অবাক হবেন

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৩ মে ২০২৩, ০৯:৩৬

গ্রীষ্মকালীন ফল আম বৈশাখ মাসে প্রতিটি বাজারেই শোভা বৃদ্ধি করতে থাকে। আম খেতে পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। গরমের দাবদাহে স্বস্তি দিতে পারে কাঁচা আমপোড়া শরবত, কিংবা বাঙালির শেষ পাতে চাটনিও হয় এই আম দিয়ে। আম দিয়ে ডাল, আমের শরবত, আম পান্না, আচার-বাঙালি রসনায় সর্বত্র হিট আম। কাঁচা আম বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের একটি বড় উৎস, যার মধ্যে ভিটামিন, মিনারেল, ডায়েটারি ফাইবার এবং ক্যারোটিনয়েড রয়েছে। কাঁচা আম দিয়ে তৈরি আম পান্না হিট স্ট্রোক প্রতিরোধ করে। ভিটামিন সি-এর একটি সমৃদ্ধ উৎস হওয়ায় কাঁচা আম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে এবং রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রচুর সাহায্য করে। যেহেতু কাঁচা আমে ক্যালোরি কম, তাই এগুলো বিপাক ক্রিয়া বাড়াতে সাহায্য করে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঁচা আম বা আমের রসে পটাশিয়াম থাকায় গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। কাঁচা আমের গুণ বলতে পুষ্টিবিদেরা বলেন, ১০০ গ্রাম কাঁচা আমে পটাশিয়াম থাকে ৪৪ ক্যালরি। এ ছাড়া ৫৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি ও ২৭ মিলিগ্রাম ম্যাগনেশিয়াম থাকে। কাঁচা আমের আরও কিছু গুণের কথা জেনে নিন।

রোগ প্রতিরোধ ও শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে

প্রখর তাপের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে দেহকে রক্ষা করতে বেশ কার্যকর কাঁচা আম। কাঁচা আম সান স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। দেহে সোডিয়াম ক্লোরাইড ও আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতেও দারুণ উপকারী এই কাঁচা আম। কাঁচা আমে পটাশিয়াম থাকার কারণে তা শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে৷ এ কারণে শরীরে ঘাম কম হয়। গরমে ক্লান্তিও দূর হয় ৷ পুষ্টিবিদদের মতে, কাঁচা আমে ভিটামিন সি, ভিটামিন ই ও একাধিক অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকে। এই উপাদানগুলো শ্বেত রক্তকণিকার কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে ও দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। কাঁচা আম খেলে ডায়াবেটিসের মতো সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়। তাই সুগার রোগীরা নিসন্দেহে খেতে পারেন কাঁচা আম।এ ছাড়া যকৃতের রোগ নিরাময়ে কাঁচা আম উপকারী। কয়েক টুকরো কাঁচা আম চিবানো হলে পিত্তরস বৃদ্ধি পায়। এতে যকৃতের স্বাস্থ্য ভালো হয় এবং অন্ত্রের জীবাণু সংক্রমণ দূর হয়।

ওজন কমাতে সাহায্য করে

যারা ওজন কমাতে বা শরীরে বাড়তি ক্যালরি খরচ করতে চান, তাদের জন্য কিন্তু আদর্শ এই ফল। পাকা মিষ্টি আমের চেয়ে কাঁচা আমে ক্যালরি কম থাকে যার ফলে ওজন কমাতে সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, খাদ্য হজমে সহায়তা করে কাঁচা আম। অন্ত্রকে পরিষ্কার রে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেয়। অ্যাসিডিটি, কোষ্ঠকাঠিন্য ও বদ হজমের সমস্যা কমাতে বেশ উপযোগী কাঁচা আম। গ্যালিক অ্যাসিড থাকার কারণে তা হজম-প্রক্রিয়াকে গতিশীল করে৷ কাঁচা আম খাদ্যনালীতে বিভিন্ন পাচক উৎসেচকের ক্ষরণ বৃদ্ধি করে। গ্রাম বাংলায় অ্যাসিডিটির সমস্যা কমাতে কাঁচা আম চিবিয়ে খাওয়ার প্রচলন রয়েছে।

চোখ ও মুখের সমস্যায় সাহায্য করে

কাঁচা আমে থাকে লুটেইন ও জিয়াজ্যান্থিন। চোখের রেটিনার জন্য এই দুইট অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট খুবই উপযোগী। পাশাপাশি, কাঁচা আমে থাকে ভিটামিন এ। যা চোখের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু কাঁচা আমে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি থাকে, তাই এটি মুখের নানা রকম ক্ষত নিরময়ে সহায়তা করতে পারে। স্কার্ভি ও মাড়ি থেকে রক্তপাতের মতো সমস্যায় কাজে আসতে পারে কাঁচা আম। নিশ্বাসের দুর্গন্ধ ও দাঁতের ক্ষয় রোধেও সহায়তা করে কাঁচা আম।

ত্বক ও চুল ভালো রাখে

কাঁচা আম খাওয়ার আরেকটি উপকারিতা হলো এটি আমাদের ত্বক ও চুল ভালো রাখতে কাজ করে। গরমে ঘামের কারণে আমাদের শরীর থেকে সোডিয়াম ক্লোরাইড ও লৌহ বের হয়ে যায়। আপনি যদি কাঁচা আমের জুস তৈরি করে খান তাহলে তার মাধ্যমে এই ঘাটতি দূর করা সম্ভব হতে পারে। কাঁচা আমে থাকে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ফলে এটি খেলে তা ত্বক ও চুল উজ্জ্বল রাখতে কাজ করে।

ঘামাচি দূর করে

গরমের সময়ে ঘামাচির সমস্যা দেখা দেয় অনেকের। কাঁচা আম খেলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ হয়। কারণ কাঁচা আমে থাকা কিছু উপকারী উপাদান ঘামাচি থেকে বাঁচতে সাহায্য করে। তবে এটি অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে উপকারের বদলে ক্ষতি হতে পারে। কারণ যত উপকারীই হোক না কেন, কোনো খাবারই অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়।

হার্টের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণ করে

আমে ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়ামের মতো পুষ্টি উপাদান রয়েছে। যা রক্ত প্রবাহ বজায় রাখতে সাহায্য করে। এই পুষ্টিগুলি আপনার রক্তনালীগুলিকে শিথিল করতে সাহায্য করে ও রক্তচাপ কমায়। ফলটি ম্যাঙ্গিফেরিন সমৃদ্ধ, এটি একটি সুপার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। গবেষণা অনুসারে, কাঁচা আম আপনার রক্তের কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড এবং ফ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের মাত্রা কমাতেও সাহায্য করে।

হজমের উন্নতি ঘটায়

কাঁচা আমে পাওয়া পাচক এনজাইম, যা অ্যামাইলেস নামে পরিচিত, বড় খাদ্যের অণুগুলিকে ভেঙে ফেলতে সাহায্য করে, যাতে সেগুলি সহজেই শোষণ করা যায়। এগুলি জটিল কার্বোহাইড্রেটকে চিনিতে ভেঙে দেয়, যেমন গ্লুকোজ এবং মল্টোজ। প্রচুর জল এবং খাদ্যতালিকাগত ফাইবারের কারণে, কাঁচা আম কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ডায়ারিয়ার মতো হজম সংক্রান্ত সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে।

(ঢাকাটাইমস/৩ মে/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :