দিনাজপুরে হাঁস পালনে অনেক নারী স্বাবলম্বী

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর
 | প্রকাশিত : ২২ জুন ২০২৩, ১০:৫৬

দিনাজপুরের স্বামীর সংসার সামলানোর পাশাপাশি নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নে হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন কয়েকজন উদ্যোক্তা নারী। ক্ষুদ্র পরিসরে একটি খামারে ৮০ থেকে ১০০ টি হাঁস পালন করে আসছে তারা। এতে খামার থেকে প্রতি আড়াই মাসে খরচ বাদ দিয়ে প্রত্যেক নারী উদ্যোক্তা খামারি আয় করছেন ১৬ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। তাদের এই সফলতা দেখে অনেকেই হাঁস পালনে উৎসাহী হচ্ছেন।

দিনাজপুর সদর উপজেলার দ্বিঘন গ্রামে আনোয়ারা এবং সাবিনার পাশাপাশি বাড়ি। হাঁসের প্যাক প্যাক শব্দে এখন মুখরিত তাদের বাড়ি এবং পাশের ছোট দীঘি। খামারে কারো ৮০টি এবং কারো এক’শটি পেকিন বা বেইজিং জাতের হাঁস রয়েছে তাদের। বাড়ি থেকে ছেড়ে দিলে হাঁসগুলো সারিবদ্ধভাবে একই পুকুরে নামে। আবার বাড়িতে ফেবার সময় যার যেগুলো হাঁস সেগুলোই তার বাড়িতেই ফেরে। একটিও অন্যের বাড়িতে যায় না দলছুট হয়ে। শৃংখলাবোধ রয়েছে হাঁসের।

দ্বিঘন গ্রামের ফয়জুল ইসলামের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম জানান, ‘একদিনের একটি বাচ্চা ৭০ টাকা দরে নীলফামারী জেলা থেকে ক্রয় করে আনি। ৭০ থেকে ৭৫ দিন লালন-পালন করার পর এই হাঁস প্রতিটি বিক্রি হয় ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা দরে। প্রতিটি হাঁসের বাঁচ্চার দাম এবং লালন-পালনে খাদ্য খরচ ও ওষুধসহ ব্যয় হয় ৩০০ টাকা। বিক্রি করে প্রতি হাঁস লাভ থাকে ৩৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা।’

একই গ্রামের আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন জানান, ‘তিনি প্রতিবেশি আনোয়ারা বেগমের দেখেই এই হাঁস পালন শুরু করেন। এখন তিনি খামার থেকে প্রতি আড়াই মাসে খরচ বাদ দিয়ে ১৬ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা লাভ করছেন। এতে তার সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে। দুই সন্তানকে পড়া-লেখা করাতে পারছেন।’

স্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে তাদের স্বামীরাও সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন। স্ত্রীকে অনুপ্রেরণা যোগাতে মাঝে মধ্যে তারা হাঁসের খামার দেখাশুনাও করেন।

এ বিষয়ে আনোয়ার স্বামী ফয়জুল ইসলাম জানান, ‘আমি কৃষি কাজের ফাঁকে স্ত্রীর এই হাঁসের খামার দেখা-শুনাও করি। এতে আমাকে ভালোই লাগে। স্ত্রী যা লাভ করছে, তা ব্যাংকে জমা রাখে। আরো কিছু টাকা হলে কয়েক শতাংশ জমি কেনার চিন্তা-ভাবনা আছে।’

শুধু আনোয়ারা বেগম ও সাবিনা ইয়াসমিন নয়, সাবিত্রী,রূপালী,জোৎনা, নিলুফা, মনোয়ারা, শামসুন নাহার, খুশি, তৈয়বা, দিলরুবা, মহসিনাসহ হাঁস পালনে এমন অনেক নারী উদ্যোক্তা ক্ষুদ্র খামারি রয়েছে। তাদের এই সফলতা দেখে অনেকেই হাঁস পালনে উৎসাহী হচ্ছেন

এলাকার গৃহিনী মরিয়ম বেগম জানান, ‘তিনিও হাঁসের খামার করতে চান। এজন্য তিনি সংশ্লিষ্ট এনজিওতে আবেদন করেছেন, কিছু টাকা লোনের জন্য। টাকা পেলেও হাঁসের বাঁচ্চা কিনে আনবেন। শুরু করবেন, হাঁস পালন।’

দ্বিঘন, মারগ্রাম, দামপুকুরিয়া, মুরাদপুর, মালিগ্রাম, গোয়ালহাটসহ সদর উপজেলার কয়েকটি গ্রামে এমন ২৬টি হাঁসের খামার রয়েছে।

প্রাণিসম্পদ বিভাগের পাশাপাশি এই হাঁস পালনে নারী উদ্যোক্তাদের উদ্বৃদ্ধ ও সহযোগিতা করছে মহিলা বহুমূখী শিক্ষা কেন্দ্র-এমবিএসকে এবং পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন নামে দুটি বে-সরকারি প্রতিষ্ঠান।

মহিলা বহুমূখী শিক্ষা কেন্দ্র-এমবিএসকের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রাশেদুল আলম জানান, ‘সদর উপজেলার কয়েকটি গ্রামে এমন ২৬টি হাঁসের খামার রয়েছে। স্বামী-সংসারের উপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজ পায়ে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে ক্ষুদ্র অর্থ সহায়তা নিয়ে এমন হাঁস পালনের খামার করে অনেকে এখন আত্মনির্ভরশীল স্বাবলম্বী হয়েছেন। আমরা এমন নারী উদ্যোক্তাদের উদ্বৃদ্ধ ও সহযোগিতা করছি। এমন নারী উদ্যোক্তাদের সাফল্য দেখে এখন অনেকের অনুপ্রেরণা পাচ্ছে, হাঁসের খামার করার।’

(ঢাকাটাইমস/২২জুন/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :