স্বর্ণকণার জাদু: রেটিনাল রোগে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিতে পারে সোনার ন্যানোপার্টিকল

মানুষের দেহের পঞ্চ ইন্দ্রিয়র গুরুত্বপূর্ণ একটি ইন্দ্রিয় হল চোখ। মানুষের চোখ হচ্ছে অমূল্য সম্পদ। যার চোখে দৃষ্টিশক্তি নেই তার মতো হতভাগ্য নেই। চোখ একটি স্পর্শকাতর সংবেদনশীল অঙ্গ, যার সাহায্যে আমরা এ সুন্দর পৃথিবীর আলো দেখতে পাই, তার রূপ ও সৌন্দর্য উপভোগ করি। অন্ধত্ব মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় অভিশাপ।
ব্রাউন ইউনিভার্সিটির একদল গবেষকের নতুন এক আবিষ্কার ভবিষ্যতে ম্যাকুলার ডিজেনারেশনসহ বিভিন্ন রেটিনাল রোগে আক্রান্ত মানুষের দৃষ্টিশক্তি পুনরুদ্ধারের পথ দেখাচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, সোনার তৈরি অতি সূক্ষ্ম ন্যানোপার্টিকল রেটিনায় ইনজেক্ট করে দৃষ্টিশক্তি আংশিকভাবে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। ইঁদুরের উপর পরীক্ষায় ইতিবাচক ফল মিলেছে।
এই গবেষণাটি সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা সাময়িকী ACS Nano-তে প্রকাশিত হয়েছে এবং এটি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথ (NIH)-এর আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত হয়েছে।
গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন জিয়ারুই নিএ, যিনি বর্তমানে NIH-তে পোস্টডক্টোরাল গবেষক। তিনি এই কাজটি সম্পন্ন করেছেন ব্রাউন ইউনিভার্সিটির পিএইচডি ছাত্র থাকা অবস্থায়। গবেষণার তত্ত্বাবধানে ছিলেন ব্রাউনের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর জংহওয়ান লি।
এই গবেষণায় সহ-গবেষক হিসেবে ছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার পুসান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক কিউংসিক ইওম, ব্রাউনের অধ্যাপক তাও লুই এবং ব্রাউনের ছাত্র হাফিথে এম. আল ঘোসাইন, আলেকজান্ডার নেইফার্ট, অ্যারন চেরিয়ান, গাইয়া মারি গারবাকা ও ক্রিস্টিন ওয়াই. মা।
কীভাবে কাজ করে এই প্রযুক্তি?
রেটিনাল রোগে মূলত চোখের আলো-সংবেদনশীল কোষ — রড ও কোনস — ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে দৃষ্টিশক্তি লোপ পায়। কিন্তু রোগগুলোর ফলে সাধারণত চোখের বাকি অংশ — যেমন বায়পোলার ও গ্যাংলিয়ন কোষ — অক্ষত থাকে। এই নতুন পদ্ধতিতে রেটিনায় সোনার ন্যানোপার্টিকল ইনজেক্ট করার পর ইনফ্রারেড লাইটের মাধ্যমে সেগুলো উত্তপ্ত করা হয়, যা বায়পোলার ও গ্যাংলিয়ন কোষকে উদ্দীপ্ত করে এবং প্রাকৃতিক দৃষ্টিসংক্রান্ত সংকেত অনুকরণ করে।
গবেষকেরা ইঁদুরের চোখে ইনজেকশন দিয়ে ইনফ্রারেড লেজার লাইটের সাহায্যে বিভিন্ন আকারের চিত্র রেটিনায় প্রক্ষেপণ করেন। পরীক্ষায় দেখা গেছে, ন্যানোপার্টিকল সফলভাবে কোষগুলোকে সক্রিয় করে এবং সেই সংকেত মস্তিষ্কে পৌঁছে দৃষ্টিশক্তি উৎপন্ন করতে সক্ষম হয়। বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায় যে, কোনো প্রদাহ বা বিষক্রিয়ার লক্ষণ পাওয়া যায়নি।
মানব ব্যবহারের জন্য সম্ভাব্য রূপ
গবেষকরা এমন একটি সিস্টেমের কথা বলছেন যেখানে ক্যামেরাযুক্ত গগলস বা চশমা ইনফ্রারেড লেজারের মাধ্যমে বাহ্যিক ছবি ধরে তা রেটিনায় প্রক্ষেপণ করবে। ইনজেক্ট করা ন্যানোকণাগুলো তখন আলো-সংকেতের প্রতিক্রিয়ায় চোখের কোষগুলোকে উত্তেজিত করবে — ফলে একজন অন্ধ ব্যক্তি আবার আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে দেখতে সক্ষম হতে পারেন।
এই পদ্ধতিটি পূর্বে FDA অনুমোদিত একটি প্রযুক্তির সঙ্গে তুলনীয়, যেখানে চোখে একটি ইলেকট্রোড অ্যারে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে স্থাপন করা হতো। কিন্তু নতুন এই ন্যানোপার্টিকল পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন নেই, বরং একটি সহজ ইনজেকশনেই কাজ সারা সম্ভব।
আগামীর দৃষ্টি ফিরিয়ে আনার আশা
গবেষণায় দেখা গেছে, সোনার ন্যানোকণাগুলো রেটিনায় দীর্ঘ সময় স্থায়ী হয় এবং তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করে না। মানুষের উপর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানোর ক্ষেত্রে আশার আলো দেখাচ্ছে।
(ঢাকাটাইমস/১২ মে/আরজেড)

মন্তব্য করুন