‘আমি সন্ত্রাসী বলছি, টাকা দেন’— ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায়, ডিবির অভিযানে তিনজন ধরা

‘হ্যালো, আমি শীর্ষ সন্ত্রাসী কে এম শাহাদাত হোসেন সাজু বলছি। আমার পোলাপাইন বিপদে আছে, কিছু টাকা পয়সা দেন।’ — সম্প্রতি এমন ভয়ভীতিকর ফোন পেয়ে চমকে ওঠেন রাজধানীর এক নারী উদ্যোক্তা।
প্রাণনাশের হুমকির পাশাপাশি চাঁদা না দিলে ‘খবর আছে’ বলে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয় তাকে। ভুক্তভোগী নারী এরপর নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন এবং ডিবি পুলিশকে বিষয়টি জানান।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চলা এই ধরণের চাঁদাবাজির ঘটনায় রাজধানীর মিরপুর ও গাজীপুর থেকে প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো— আব্দুল মান্নান দুলাল ওরফে জাহাঙ্গীর, নাসিম হাসান লাভলু ও ইলিয়াস শিকদার বেলায়েত।
তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৫২টি মোবাইল ফোন, ১৯০টি সিম কার্ড, দু’টি ল্যাপটপ, একটি ট্যাব, আটটি ভুয়া সরকারি ও বেসরকারি সিল, পাঁচটি নকল আইডি কার্ড, ২০টি নাম-ঠিকানা লেখা বই ও ডিকশনারি এবং নগদ ২০ হাজার টাকা।
ডিবি পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (দক্ষিণ) নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘এই চক্রটি বিভিন্ন সময় শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদাত কিংবা সরকারের প্রভাবশালী কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে মানুষকে ভয় দেখাত। এরপর মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপের মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের টাকা আদায় করত।’
তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডিবি মতিঝিল বিভাগের একটি টিম ১ জুলাই মিরপুরের মধ্য পাইকপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে আব্দুল মান্নান দুলালকে গ্রেপ্তার করে। পরে তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে পল্লবী থেকে লাভলু এবং গাজীপুর গাছা এলাকা থেকে বেলায়েতকে গ্রেপ্তার করা হয়।
চক্রটি নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে একাধিক সিম কার্ড ও মোবাইল ফোন ব্যবহার করত। এদের টার্গেটে থাকতেন ব্যবসায়ী, বাড়িওয়ালা, এমনকি চাকরিজীবীরাও। ফোন করে সামাজিক দায়বদ্ধতা, সহানুভূতি ও প্রাণনাশের ভয়—এই তিন মিলিয়ে শিকারকে অর্থ পাঠাতে বাধ্য করা হতো।
এদিকে দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামে এভাবে রাজধানীতে এখনও চাঁদাবাজি চলছেই। ঢাকার ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী ও বাড়ির মালিকদের কাছে প্রায়ই চাঁদা চেয়ে ফোন আসে। চাওয়া হয় বড় অংকের চাঁদা। অপারগতা প্রকাশ করলে পরিবারের সদস্যদের গুম এমনকি প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। ভয়ে অনেকেই চাঁদা তুলে দেন শীর্ষ সন্ত্রাসী পরিচয়দানকারী ব্যক্তিদের প্রতিনিধিদের হাতে। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে একই ধরনের হুমকির বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। এতে অনেকে আতঙ্কিত।
পুলিশ সূত্র জানায়, গত বছর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর কিছু দণ্ডপ্রাপ্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীর মুক্তি এবং তাদের নাম ঘিরে গুজব ছড়ানোয় ভয়ভীতি আরও বেড়েছে। একাধিক ব্যবসায়ী সম্প্রতি এমন ফোন পেয়েছেন বলেও নিশ্চিত করা হয়েছে।
তবে ডিবি কর্মকর্তা নাসিরুলের ভাষ্য, এই ধরণের ফোনকলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। দ্রুত থানায় অভিযোগ করতে হবে। প্রয়োজনে সরাসরি ডিবি কার্যালয়েও জানানো যেতে পারে। প্রতিটি অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন