আগুন সন্ত্রাসীদের হাতে অনিরাপদ বাংলাদেশ

মো. সাখাওয়াত হোসেন
  প্রকাশিত : ০৫ জুলাই ২০২৩, ০৮:৫৩
অ- অ+

সম্মানিত পাঠক আপনারা খেয়াল করে দেখবেন, নির্বাচনকালিন সংষ্কৃতিতে আগুন-সন্ত্রাসের নতুন সংযোজনের ভয়াবহতা সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপকভাবে ভয়ের সংষ্কৃতির সৃষ্টি করে। অর্থাৎ নির্বাচনকালিন সময়ে এ ধরনের হামলার আশংকা সবার মধ্যেই থাকে। যে বিষয়টি সচরাচর দেখা যেত তা হল; নির্বাচন অনুষ্ঠানের পূর্বে ও পরে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা হতো। এখনো এ বিষয়টির অস্তিত্ব রয়েছে। কিন্তু আগুন-সন্ত্রাসের বিষয়টির অবতারণা হয়ে থাকে ২০১৪ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে। সহজেই অনুমেয়, যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি, নির্বাচনকে বাঁধাগ্রস্থ করতেই আগুন-সন্ত্রাসের হামলা ঘটিয়েছে। এ সন্ত্রাসের খবরাখবর ও নিউজ বিশ্ব মিডিয়াতে ফলাও করে প্রচারিত হওয়ায় বাংলাদেশের জনগণ, বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা ও সন্ত্রাসী সংগঠন এবং দলের বিষয়ে মানুষের মধ্যে একটি ধারণার সূত্রপাত ঘটে। যেটি নিশ্চিতভাবেই নেতিবাচক ইমেজের সৃষ্টি করে। বিভিন্ন ফোরামে বাংলাদেশি প্রতিনিধির দায়িত্ব পালনকারীদের এ সংক্রান্তে যুক্তি খন্ডাতে ব্যাপক বেগ পেতে হয়। তবে আগুন-সন্ত্রাসের রাজনীতি কোনভাবেই কাম্য নয় কেননা এর সঙ্গে রাষ্ট্রের স্থিতি ও ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের চিত্র নির্ভর করে থাকে।

প্রকৃত রাজনীতিবিদগণ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে যৌক্তিক দাবি উপস্থাপন করে রাজপথে থেকে সমস্যার প্রয়োজনীয় সমাধান করবেন। সেখানে যারা পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়, ক্ষমতাকে যে কোন মূল্যে কুক্ষিগত করতে চায় তাদের মাধ্যমেই আগুন-সন্ত্রাসের রাজনীতি হয়ে থাকে। রাজনীতিকে হতে হবে জনসাধারণের মঙ্গলার্থে, জনগণকে ভোগান্তির মধ্যে রেখে রাজনীতির কোন মানে হয় না। প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের বহুবিধ মাধ্যম রয়েছে, সময় থাকতে সেসবের ব্যবহার করা উচিত। কিন্তু এক শ্রেণির অসাধু রাজনীতিবিদ রয়েছেন যারা ঘটনার মর্মার্থ অনুধাবন না করেই, বিষয়ের সঙ্গে যৌক্তিকতা নিরূপণ না করেই ধ্বংসাত্নক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন।

সন্ত্রাসবাদের যেমন বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক আছে, আগুন-সন্ত্রাসেরও বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক থাকতে পারে। অর্থাৎ বাইরে থেকে একটি পক্ষ ইন্ধন যোগাতে পারে, সে কারণেই এর ব্যাপকতাও বিস্তৃত। বাইরের এজেন্টগুলো বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণায় যারা লিপ্ত তারাও এ কাজে সক্রিয় হয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণায় রসদ যুগিয়ে ফায়দা লুটার চেষ্টা করতে পারে। সুতরাং কোন পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ আগুন-সন্ত্রাসে ইন্ধন দিতে পারে না। সন্ত্রাসীদের কোন ধর্ম নেই, মত নেই, নেই কোন পথ। নির্বাচনকে সামনে রেখে দীর্ঘদিন ধরে আত্নগোপনে থাকা অনেকেই সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করবে এবং এদের সঙ্গেই আগুন-সন্ত্রাসীদের যোগসাজশ হবে। এক পক্ষ অন্য পক্ষকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করে রাজনীতিতে প্রভাব রাখতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক। বিগত সময়ে আমরা এ ধরনের চিত্র দেখেই অভ্যস্ত হয়েছি।

আগুন-সন্ত্রাসীরা ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের যে অগ্রসরমান অগ্রগতি সেটি স্থবির হয়ে পড়বে। বিদেশী বিনিয়োগ কমে আসবে, বিদেশীদের সাথে সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে টানাপোড়েনের সৃষ্টি হবে। যে রাষ্ট্রগুলোই পাশে থাকবে তারা কোন না কোন স্বার্থসিদ্ধির ধান্দায় পড়ে পেছন দিয়ে সাহস সঞ্চার করবে কিন্তু প্রকাশ্যেও তারা আসবে না। অবশ্য বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে বিবেক বোধ জাগ্রত হওয়ার কথা রয়েছে। মানুষ অবগত আছেন সন্ত্রাসীদের তান্ডবলীলা সম্পর্কে। স্কুলগামী বাসও রক্ষা পায়নি তাদের হিংস্রতা থেকে। বয়োবৃদ্ধ জনতাও রক্ষা পায়নি তাদের নগ্নতা থেকে। একটা সময়ে কেবল ঢাকা শহরকেন্দ্রিক সন্ত্রাসীরা তাদের দাপট দেখানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু বর্তমানের চিত্র ভিন্ন, এদের নেটওয়ার্ক ও তৎপরতা জেলা শহরগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ছে। দুর্গম পাহাড়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে অনেকেই, অনুমান করা যায় এদের প্রস্তুতি নির্বাচনকেন্দ্রিক। সুতরাং আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে তাদের দীর্ঘমেয়াদী একটি প্রস্তুতি রয়েছে। একটি হূলস্থূল কান্ড বাঁধিয়ে নির্বাচনকে যদি কোনভাবে বাঁধাগ্রস্থ করা যায়-এ বাসনাকে রপ্ত করে তারা তাদের কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে।

আগুন সন্ত্রাসীদের পক্ষে মোটা অংকের ডোনার রয়েছে, এই ডোনাররাই মূলত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা করে থাকে। এই ডোনার কারা? যারা বর্তমান সরকারকে চরমভাবে অপছন্দ করেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী, উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে যারা অসহনীয় হিসেবে বিবেচনা করেন মূলত দেশের মধ্যে এ শ্রেনির লোকেরাই বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে আগুন-সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দেওয়ার পায়তারা করছে মর্মে অনুমান করা যায়। আবার বিদেশ থেকে অনেকেই যারা সরকারের কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা প্রত্যাশা করে ব্যর্থ হয়েছে তারাও লবিষ্ট নিয়োগ করে আগুন-সন্ত্রাসীদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এমন আন্তর্জাতিক মিডিয়া রয়েছে যারা বাংলাদেশের ভেতরে ঘটে যাওয়া ছোট ঘটনাগুলোকে কিস্তি আকারে প্রচার করে লক্ষ-কোটি মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চায়। কাজেই দেশী বিদেশী উভয় পক্ষই বাংলাদেশে অরাজকতা সৃষ্টি করে ফায়দা লুটতে চায়।

আগুন সন্ত্রাসীরা চলাচলের রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেয়, রাস্তায় কোন যানবাহন চলাচল করলে তা পুড়িয়ে দেয়, দোকান পাট খুলতে বাঁধা দেয়। বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুতের লাইন অকেজো করে দেয়, গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। টেলিফোন, ইন্টারনেট, ডিশ এন্টেনা ইত্যাদি সংযোগও বন্ধ করে দিয়ে জনজীবনকে বিচ্ছিন্ন করে দেয় গোষ্ঠীটি। সরকারি অফিস আদালতে তান্ডব চালায় এরা, এমনকি বৃক্ষরাজিও বাদ যায়নি এদের ধ্বংসলীলা থেকে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ রিকশা চালক, ভ্যান চালক এরাও বাদ পড়েনি আগুন সন্ত্রাসীদের ভয়ংকর অপকৌশল থেকে। এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, আগুন সন্ত্রাসীরা দেশ ও জনগণের শত্রু; তারা জাতি রাষ্ট্রের জন্য ভয়াবহ পরিণতি নিয়ে আসে।

সেজন্যই সরকারসহ সারাদেশের নাগরিকদের নৈতিক দায়িত্ব হচ্ছে-আগুন সন্ত্রাসীদের সমূলে প্রতিহত করতে হবে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করা সম্ভব হবে না, যদি আপামর জনতা সন্ত্রাসীদের নির্মুলে এগিয়ে না আসে। আর একটি কথা যারা আগুন সন্ত্রাসীদের মদদ দেয়, সন্ত্রাসবাদে সম্পৃক্ত এ ধরনের চিহ্নিত দলের প্রার্থীকে ভোট প্রদান করা যাবে না। আগুন সন্ত্রাসীদের হাতে এ দেশ নিরাপদ নয়। আমরা সারাদেশে একযোগে ৬৩ জেলায় বোমা হামলার ঘটনা দেখতে চায় না, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পুনরাবৃত্তি চায় না। আমরা নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকার ব্যবস্থা দেখতে চায় যেখানে আগুন সন্ত্রাসীদের কোন জায়গা নেই। আগুন সন্ত্রাসীদের কাছে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কোনভাবেই নিরাপদ নয়, স্কুলেও শিক্ষার্থীদের অনিরাপদ পরিবেশে পাঠদান করতে হবে যদি এরা ক্ষমতায় আসে। আমরা হব তালেবান স্লোগানে প্রকম্পিত হউক বাংলার বাতাস এমনটি আমরা কখনোই চায় না। এ জায়গায় কমপক্ষে সকলকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।

লেখক-চেয়ারম্যান, ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
রাজনৈতিক দলের বিচারের বিষয়ে ভবিষ্যতে সিদ্ধান্ত: চিফ প্রসিকিউটর
হবিগঞ্জে দুই এলাকাবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ, আহত ৫০
বাংলাদেশের নতুন পেস বোলিং কোচ শন টেইট
আবেগবশত হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না, সরকারকে রিজভী 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা