উত্তাল সমুদ্র, ইলিশ শূন্য ফিরছেন উপকূলের জেলেরা

৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে রূপালি ইলিশ শিকারে সমুদ্রে নেমেছিল জেলেরা। কিন্তু বঙ্গোপসাগর আকস্মিকভাবে উত্তাল হয়ে ওঠেছে। তাই গভীর সমুদ্র থেকে শত শত ট্রলার নিয়ে ঘাটে ফিরে এসেছেন তারা। তীরে ফিরে আসা জেলেরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। বুকভড়া আশা নিয়ে মাছ শিকার করতে সমুদ্রে গেলেও প্রচণ্ড ঢেউয়ের তোরে টিকতে না পেড়ে বাধ্য হয়ে ফিরে এসেছে তারা। লাখ লাখ টাকা খরচ করে চাল-ডাল, তৈলসহ মৎস্য সরঞ্জামাদি নিয়ে সপ্তাহজুরে গভীর সমুদ্রে ইলিশ শিকারে নামেন জেলেরা। আশা ছিল ট্রলার বোঝাই করে ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফিরে আসবেন। কিন্তু হটাৎ বৈরী আবহাওয়া জেলেদের সেই আশা আলো নিভে গিয়েছে। সমুদ্র থেকে ইলিশ শূন্য তীরে ফিরে আসতে হয়েছে। তবে যেটুকো সময় সমুদ্রে জাল গেলার সুযোগ হয়েছে এতে অন্যান্য মাছ কম বেশি ধরা পড়লেও কাঙ্ক্ষিত রুপালি ইলিশ ধরা পরেনি বলে জানান জেলেরা।
অবরোধ শেষে গত ২৩ জুলাই (রবিবার) থেকে জেলেরা সমুদ্রে ছুটে যান রুপালী ইলিশ আহরনে। গভীর সমুদ্রে গিয়ে (সোমবার) ১ দিন মাছ শিকার করতে পারলেও হঠাৎই বৈরী আবহাওয়ার কবলে পরে যায় তারা। সমুদ্র উত্তাল হয়ে ওঠে। যানমাল বাচাঁতে মাছধরা রেখে খাপড়াভাঙ্গা নদীর দুই ধারে শত সহস্র ট্রলার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে এসে আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয় নেয়া বেশিরভাগ ট্রলারই শুন্য হাতে ফিরে এসেছে। জেলেদের আশা ছিল অবরোধ শেষে সমুদ্রে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে। আর সেই ইলিশ বিক্রি করে পরিবারের চাহিদা পুরণ সহ মহাজনের দেনা পরিশোধ করবেন। কিন্ত তাদের সেই আশা আর পুরণ হয়নি। উল্টো আরও দেনায় জর্জরিত হয়ে হতাশায় ভুগছেন তারা। একদিকে বৈরী আবহাওয়া অন্যদিকে ইলিশ শুন্য সমুদ্র। এর পরও যেন জেলেদের ব্যবস্তা থামছে না। তীরে এসেই ছেড়া-ফুটা জাল মেরামতসহ নানা ব্যস্ততায় দিন পার করছেন তারা। উপকূলীয় এলাকার মৎস্য বন্দরগুলোতে কর্মচাঞ্চল্যতা দেখা গেছে।
জেলে ও মৎস্যজীবীদের দাবি, মৎস্য প্রজনন বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেয়া ৬৫ দিনের অবরোধ তাদের কোন উপকারে আসেনি। উল্টো ফাকা সমুদ্রে ভারতীয় জেলেরা দাপিয়ে বেড়িয়েছে। বঙ্গোপপসাগর থেকে অবরোধকালীন সময়ে ভারতীয় জেলেরা মাছ শিকার করে নিয়ে গেছে। সমুদ্রে অসংখ্য দেশি-বিদেশি ট্রলিং জাহাজ মাছ ধরে নিয়ে গেলেও প্রশাসনের কোন নজরদারী নেই। এতে দেশীয় জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভারতীয়সহ বিদেশি জেলেরা মাছ ধরে নেয়ার ফলে সমুদ্র ইলিশ শুন্য হয়ে পড়ছে। জেলেদের দাবি ভারতের সঙ্গে মিল রেখে অবরোধ দিলে সমুদ্রে মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধিসহ সঠিক ভাবে অবরোধ পালিত হবে। অন্যথায় সরকারের দেয়া ৬৫ দিনের অবরোধের সুফল ভোগ করতে পারবেন না জেলে মৎস্যজীবীরা।
জেলে তৈয়ব আলী বলেন, আমরা সাগরে যাবার সময় মোহনা থেকে প্রচণ্ড তুফান দেখছি। ভাবনা ছিল গভীর সমুদ্রে ঢেউ কম থাকবে। কিন্তু গভীর সমুদ্রেও তুফান এবং প্রচণ্ড স্রোত রয়েছে। তারপরও একবার জাল ফেলছিলাম। কিন্তু ঢেউয়ের ঝাপটায় সব জাল রশির সাথে প্যাঁচিয়ে এবং ছিড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। জাল ঠিক করতে কমছে কম এক সপ্তাহ সময় লাগবে।
এফ.বি তামান্না ট্রলারের মাঝি মো. ইউনুস মিয়া বলেন, ট্রলারে তৈল ও বরফ ভরে প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। ২৪ জুলাই সকালে সমুদ্রে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সাগর উত্তাল হওয়ার খবর পেয়ে আর যাওয়া হয়নি। মাছ ধরার উপযোগী হলে সমুদ্রে যাবো।
এফ.বি বিসমিল্লাহ-০১ ট্রলারের মাঝি একলাছ গাজী বলেন, ২৩ জুলাই গভীর রাতে আলীপুর ঘাট থেকে সমুদ্রে গিয়েছিলাম। ২৪ জুলাই দুপুরের জোয়ারে হঠাৎ সমুদ্র উত্তাল হয়ে ওঠে। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে দুই দিন ফিশিং করে ২৫ জুলাই রাত্রে ঘাটে এসে মাত্র এক লক্ষ টাকা বিক্রয় করেছি। বড় সাইজের ইলিশ ধরা পরেনি। ছোট ও মাজারি সাইজের ইলিশ আছে, তাও পরিমানে কম।
মৎস্য বন্দর আলীপুরের ব্যবসায়ী আ. জলিল ঘরামী সাথে কথা হলে তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন , ৬৫ দিনের অবরোধ শেষে জেলেরা সমুদ্রে গিয়েছিলো। সমুদ্র উত্তাল থাকার কারণে ঘাটে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। তারা শুধু খাবার মাছ পেয়েছেন। আমরা মৎস্য সংশ্লিষ্ট সকলে হতাশ। লাখ লাখ টাকা খরচ করে সমুদ্রে ট্রলার পাঠিয়েছিলাম। শুন্য হাতে তীরে ফিরে এসেছে জেলেরা। এই মৎস্য ব্যবসায়ী আরো জানান, ৬৫ দিনের অবরোধকালীন সময়ে ভারতীয় জেলেরা বঙ্গোপসাগরে ঢুকে মাছ ধরে চলে যাচ্ছে। সমুদ্রে প্রশানের নজরদারী না থাকায় ভারতীয় জেলে সহ বিদেশী ট্রলিং জাহাজ ফ্রি স্টাইলে মাছ ধরে নিয়ে গেছে। যার কারনে সমুদ্রে ইলিশ নেই। ভারতের সাথে মিল রেখে অবরোধ দিলে সুফল পাওয়া যাবে। অন্যথায় এর কুফল আমাদের ভোগ করতে হবে।
আলীপুর-মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মোঃ শাকিল আহম্মেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, অবরোধের পর ২৪-২৬ জুলাই পর্যন্ত এই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কাঙ্খিত মাছ আসেনি। গত ৩ দিনে ইলিশ সহ অন্যান্য প্রজাতির ২ মেট্রিকটন মাছ এখানে বেচাকেনা হয়েছে। যা অন্য সময়ের তুলনায় খুবই কম।
কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা ঢাকা টাইমসকে জানান, অবরোধ শেষে যে সকল ট্রলার গভীর সমুদ্রে গিয়েছিলো তা ঘাটে ফিরে এসেছে। সমুদ্রে প্রচন্ড ঢেউ ও স্রোত রয়েছে। চলমান জোর প্রভাবে সমুদ্র অস্বাভাবিক উত্তাল। আগামী দুই-তিন দিনেও সমুদ্র স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আমাবস্যার জো'র প্রভাব কেটে গেলে সমুদ্র স্বাভাবিক হবে। তখন জেলেদের জালে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ ধরা পরবে বলে আশা করছি।
(ঢাকাটাইমস/২৬জুলাই/এআর)

মন্তব্য করুন