দুদকের জালে চসিকের প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন

চট্টগ্রাম ব্যুরো, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২০:০৭

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) পূরকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জসিম উদ্দিন। মাত্র ১৬ বছরের চাকরি জীবনে বানিয়েছেন নামে বেনামে অঢেল স¤পদ। শহরের অভিজাত এলাকায় রয়েছে ফ্ল্যাট ও প্লট। এবার তার সম্পদের হিসাব চেয়ে চসিকের কাছে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গত ২৭ আগস্ট প্রদত্ত চিঠিতে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র, কাগজপত্রাদি সরবরাহ করার অনুরোধ করেছে দুদক। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তার বিরুদ্ধে সমস্ত রেকর্ডপত্র দুদকের কাছে সরবরাহের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে অনুরোধ করা হয়।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম দুদক তদন্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, দুদকের চিঠি পেয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। আগামি সাত কার্যদিবসের মধ্যে নির্বাহী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। আশা করছি, যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে তার সঠিক তথ্য-উপাত্ত যথাসময়ে পাঠিয়ে দেব।

তিনি জানান, দুদকের চিঠিতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জসিম উদ্দিন পুরকৌশল বিভাগের চাকরি যোগদানের পর থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রদেয় বছর ভিত্তিক বেতন, বোনাস ও বিলের বিবরণী, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক তার সম্পদের দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণী সরবরাহ করতে বলা হয়।

এছাড়া তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফাহিম কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী সাইফুল ইসলামকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক অদ্যাবধি যে সমস্ত কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে তার রেকর্ডপত্র সরবরাহ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক আমিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার এসফল্ট প্ল্যান্ট স্বত্বাধিকারী দিদারুল ইসলামকে অদ্যাবধি যে সমস্ত মালামাল ক্রয় বাবদ অর্থ প্রদান করেছে তার রেকর্ডপত্র সরবরাহ করতে বলা হয়।

জানা গেছে, ২০০৬ সালে আট হাজার টাকা বেতনে সিটি কর্পোরেশনে সড়ক পরিদর্শক পদে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ পান মো. জসিম উদ্দিন। এরপর ২০০৯ সালে বিভাগের ১১ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে পেছনে ফেলে বাগিয়ে নেন নির্বাহী প্রকৌশলীর পদ। বর্তমানে পুকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

এছাড়া তার পরিবারের সদস্য ও ভাইকে দিয়ে গড়ে তুলেছেন ঠিকাদারি ব্যবসা। আড়ালে থেকে ভাই ও পরিবারের সদস্যদের দিয়ে সুকৌশলে বাগিয়ে নেন সিটি কর্পোরেশনের কাজও। এমনকি সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব এ্যাসফল্ট প্ল্যান্ট থাকা সত্ত্বেও মাল কেনা হতো জসিম উদ্দিনের নিজস্ব কারখানা থেকে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ এলাকার আল-ফালাহ গলিতে আইএস অবকাশ নামের একটি ভবনে অন্তত ৪টি ফ্ল্যাট রয়েছে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জসিম উদ্দিনের। প্রতিটি ফ্ল্যাটের মূল্য প্রায় কোটি টাকার বেশি। নগরের খুলশী এলাকায় ১২ কাঠা জায়গার ওপরে নির্মাণাধীন রয়েছে তার ১০তলার একটি বহুতল ভবন। যার বাজারমূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা। তার রয়েছে একাধিক দামি প্রাইভেট গাড়িও, হাতে পরেন ২০ লাখ টাকার রোলেক্স ঘড়ি।

এছাড়া নগরীর পাঁচলাইশের হামজারবাগ হামজার খাঁ লেনের শাহ আমানত আবাসিকে স্ত্রী ও শ্যালিকার নামে রয়েছে চার কাঠা করে আট কাঠার দুটি প্লট। সেখানে একটি প্লটে আট তলার বহুতল ভবন উঠছে। আরেকটিতে সেমিপাকা ঘর রয়েছে। স্থানীয়দের মতে, নির্মাণাধীন ভবন ও জায়গার বর্তমান বাজারমূল্য ১৫ কোটি টাকা। এই আবাসিকের প্রায় ২৮টি ভবনের নেতৃত্ব জসিমের হাতে।

আরও জানা গেছে, চাকরির পাশাপাশি তথ্য গোপন করে ছোট ভাই সাইফুল ইসলামকে দিয়ে সিটি কর্পোরেশনের ঠিকাদারি কাজ করিয়ে যাচ্ছেন মো. জসিম উদ্দিন। তার ভাইয়ের প্রতিষ্ঠানের নাম ফাহিম কন্সট্রাকশন।

একইসঙ্গে নগরীর সাগরিকা রোডে আমিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার এ্যাসফল্ট প্ল্যান্ট নামে কারখানা রয়েছে জসিম উদ্দিনের। যেটির পরিচালনা করছেন তার আরেক ভাই দিদারুল ইসলাম। যদিও কাগজে-কলমে ওই কারখানার মালিক দেখানো হয়েছে নুরুল আমিন নামের এক ব্যক্তিকে। আইনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) ২০০৯ আইন অনুযায়ী, কর্পোরেশনের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক স্বজ্ঞানে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, স্বয়ং বা কোনো অংশীদার মারফত কর্পোরেশনের কোনো ঠিকাদারিত্বে স্বত্ব বা অংশ নেওয়া বেআইনি।

(ঢাকাটাইমস/৩সেপ্টেম্বর/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :