বিশ্বব্যাপী সাড়ে ৭ কোটির বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা এবং আফ্রিকার দেশ সুদানে সংঘাতের ফলে বিশ্বজুড়ে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষের (আইডিপি) সংখ্যা ২০২৩ সালের শেষে দিকে সাত কোটি ৫৯ লাখে দাড়িয়েছে৷ মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছে ইন্টারনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টার (আইডিএমসি)৷
আইডিএমসি জানিয়েছে, নিজের দেশে বাস্তুচ্যুত হওয়া লোকের সংখ্যা গত পাঁচ বছরে ৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে৷
২০২২ সালের শেষে এই সংখ্যা ছিল সাত কোটি ১১ লাখ৷ শরণার্থী বলতে তাদেরই বোঝায়, যারা বিদেশে ‘পালিয়ে’ যেতে বাধ্য হয়েছেন৷ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষ বলতে বোঝায়, নিজ দেশে যারা গৃহহীন হয়ে পড়েছেন৷
অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি সংক্রান্ত বার্ষিক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে আইডিএমসি বলেছে, ছয় কোটি ৮৩ লাখ মানুষ সংঘাত ও সহিংসতার কারণে এবং ৭৭ লাখ মানুষ দুর্যোগের কারণে বিশ্বব্যাপী বাস্তুচ্যুত হয়েছেন৷
বিগত পাঁচ বছরে, সংঘাতের ফলে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা দুই কোটি ২৬ লাখ বৃদ্ধি পেয়েছে৷ ২০২২ এবং ২০২৩ সালে সবচেয়ে বড় দুটি বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে৷
সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০০৮ সালের পর একক দেশ হিসাবে সুদানের বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সর্বোচ্চ ৯১ লাখে৷
গাজা উপত্যকায় ২০২৩ সালের শেষে ১৭ লাখ ফিলিস্তিনি অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন৷ এ ছাড়াও গত বছরে ৩৪ লাখ ‘নতুন চলাচল’ লক্ষ্য করা গিয়েছে৷ অর্থাৎ ২২ লাখ জনসংখ্যার ৭৭ শতাংশ নিজের বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন৷ জাতিসংঘের পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে বার্তাসংস্থা এএফপি এই গণনা করেছে৷ গত বছরের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ পরিস্থিতি শুরু হয়৷
আইডিএমসি পরিচালক আলেকজান্দ্রা বিলাক বলেন, ‘গত দুই বছরে, উদ্বেগজনকভাবে নানা স্তরের মানুষ দেখছি যারা সংঘাত এবং সহিংসতার কারণে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন৷’
তার কথায়, ‘সংঘাত হলো ধ্বংসাত্মক প্রক্রিয়া৷ লাখো মানুষ বছরের পর বছর ধরে তাদের জীবনটা কোনোভাবেই আর গড়ে তুলতে পারছে না৷’
এই পর্যবেক্ষণে অভ্যন্তরীণ স্থানচ্যুতির সংখ্যাও জানিয়েছে৷ তারা জানায়, সমস্ত আইডিপির প্রায় অর্ধেক মানুষই সাব-সাহারান আফ্রিকার বাসিন্দা৷
গত বছর চার কোটি ৬৯ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে বাধ্য হয়েছেন৷ এর মধ্যে দুই কোটি পাঁচ লাখ মানুষ সহিংসতা ও সংঘাতের কারণে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির শিকার৷ এ ছাড়াও দুর্যোগের কারণে ২ কোটি ৬৪ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হন৷ ২০২৩ সালে সুদান, কঙ্গো এবং ফিলিস্তিন অঞ্চলে সংঘাত এর দুই-তৃতীয়াংশের জন্য দায়ী৷
২০২৩ জুড়ে সুদানে সহিংসতার কারণে ৬০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন৷ যা আগের ১৪ বছরের মোট হিসাবের তুলনায় বেশি৷ ২০২২ সালে ইউক্রেনের ক্ষেত্রে যা ছিল এক কোটি ৬৯ লাখ৷ তারপরই রয়েছে সুদানের ২০২৩ সালের পরিসংখ্যান৷
১৯৯৮ সালে আইডিএমসি প্রতিষ্ঠা করেন জ্যান এজেল্যান্ড৷ নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের প্রধান এজেল্যান্ড বলেন, ‘এত বেশি মানুষকে নিজের বাড়ি এবং নিজস্ব সম্প্রদায় থেকে দূরে চলে যেতে কার্যত বাধ্য করা হয়েছে, এমনটা আগে কখনও দেখিনি৷’
তার কথায়, ‘শান্তিচুক্তি ব্যর্থ হয়েছে৷ সংঘাতও আটকানো যায়নি৷’
দুর্যোগের কারণে দুই কোটি ৬৪ লাখ বাস্তুচ্যুতি ঘটেছে মূলত চীন এবং তুরস্কে৷ প্রতিকূল আবহাওয়া, একাধিক দুর্যোগ এবং ভূমিকম্পই এর কারণ৷
জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামী বছরগুলোতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে৷
আইওএমের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল উগোচি ড্যানিয়েলস বলেছেন, ‘দুর্যোগ এবং সংঘাত সবমিলিয়ে পৃথিবীর অবস্থা সঙ্গিন৷ নতুন করে ৪৭ লাখ মানুষের অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির বিষয়টা অত্যন্ত হতাশার৷’
তিনি বলেন, ‘এই রিপোর্টগুলো দেখে বোঝা যাচ্ছে, আমাদের সবরকম দুর্যোগের ঝুঁকি কমানোর প্রচেষ্টা বাড়াতে হবে, শান্তিপ্রক্রিয়াকে সমর্থন করতে হবে এবং মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে৷ কোনো মানুষ ঘরছাড়া হওয়ার আগেই যেন তা আটকানো যায়, সেটা দেখতে হবে৷’
সূত্র: ইনফোমাইগ্রেন্টস/এএফপি
(ঢাকাটাইমস/১৬মে/এমআর)

মন্তব্য করুন