মুক্তিযুদ্ধে বিজয় ও সাংষ্কৃতিক শক্তির ভূমিকা

আলী রেজা
 | প্রকাশিত : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৪৫

গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে সাংষ্কৃতিক শক্তি যুক্ত হলে যেকোনো জাতি অপ্রতিরোধ্য শক্তির অধিকারী হয়ে ওঠে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতি সেই অপ্রতিরোধ্য শক্তিরই অধিকারী হয়ে উঠেছিল এবং বিজয় অর্জন করেছিল। মুক্তিযুদ্ধে বিজয় বাঙালি জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমেই বাঙালি জাতি হাজার বছরের পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্তিলাভ করে। বাঙালি জাতি হাজার বছর বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর শাসন ও শোষণে, নির্যাতন ও নিপীড়নে, অনাদর ও অসম্মানে নিষ্পেষিত ছিল। আত্মমর্যাদা ও আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠার জন্য বাঙালি জাতি যুগে যুগে অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। রক্ত দিয়েছে, জীবন দিয়েছে কিন্তু কাঙ্ক্ষিত মুক্তি আসেনি বাঙালির জাতীয় জীবনে। জাতীয় জীবনের এই পরাধীনতা থেকে বাঙালি জাতি প্রথম মুক্তিলাভ করে একাত্তরে। তাই একাত্তর বাঙালি জাতিকে দিয়েছে আত্মমর্যাদা, আত্মপরিচয়, মুক্তি ও স্বাধীনতার স্বাদ। জাতির পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তির এই সংগ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ যেমন অবিস্মরণীয়, তেমনি মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণার উৎস হিসেবে সাংস্কৃতিক শক্তি তথা সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ভূমিকাও অতুলনীয়। বাঙালি জাতির সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রধান উপাদান হিসেবে সাহিত্য ও সংগীত একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল মুক্তিযুদ্ধে। সাহিত্য ও সংগীতের শক্তি সেদিন বাঙালির অকুতোভয় মুক্তিসেনার সামনে এগিয়ে চলার পথে সাহস ও উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছিল। বাঙালি জাতির হাজার বছরের শোষণের ইতিহাস বাঙালির সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করেছে । রাজনীতি ও অর্থনীতির সাথে হাত ধরাধরি করেই বাঙালির সংস্কৃতিও পুষ্টিলাভ করেছে। তাই রাজনৈতিক শোষণের ইতিহাস থেকে বাঙালির সংষ্কৃতিকে আলাদা করা যায় না।

বাঙালি জাতির শোষণ শুধু অর্থনৈতিক নয়, নয় শুধু রাজনৈতিক। বাঙালি জাতির আত্মপরিচয়বাহী যে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সে ঐতিহ্যও শোষণের শিকার হয়েছে বারবার। রাজভাষা হিসেবে পাল ও সেনযুগে সংস্কৃত, সুলতানি ও মোগল আমলে আরবি-ফারসি, ইংরেজ আমলে ইংরেজি ও পাকিস্তান আমলে উর্দু চেপে বসেছে বাংলা ভাষার ওপর। বাঙালি জাতির নিজস্ব সংস্কৃতি বার বার কোণঠাসা হয়েছে বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসনে। এই জাতির সাংস্কৃতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা সে বিষয়গুলো বুঝতে পারি। এই যে চড়াই-উতরাই পার হয়ে টিকে আছে বাঙালি জাতি তাতে বোঝা যায় বাঙালির একটি সমৃদ্ধ সংগ্রামী জীবনধারা আছে। এই জীবনধারাকে বেগবান করেছে বাঙালির সংস্কৃতি। সংষ্কৃতি বাঙালিকে শুধু আনন্দ দেয়নি, শক্তিও দিয়েছে। সংস্কৃতির এই শক্তি হাজার বছরের পরাধীন বাঙালির চেতনাকে জাগ্রত রেখেছে। এই জাগ্রত চেতনাই বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। তাই বাঙালি জাতির মুক্তির সংগ্রামে সংস্কৃতিই প্রধান জ্বালানি শক্তি হিসেবে কাজ করেছে।

স্বাভাবিক সময়ে সংস্কৃতি মানুষের চেতনাকে বহমান রাখে। কিন্তু সংগ্রামের সময়ে সংষ্কৃতি সেই বহমান চেতনাকে উজ্জীবিত করে। স্বদেশি আন্দোলন থেকে দেশভাগ পর্যন্ত ব্রিটিশবিরোধী সকল রাজনৈতিক সংগ্রামে সংষ্কৃতির শক্তি একটি প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। বলা যায় ভারতবর্ষে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সংস্কৃতি হয়ে উঠেছিল প্রধান হাতিয়ার। সংস্কৃতির শক্তিকে বুকে ধারণ করে পরাধীন ভারতীয় জনগণ সেদিন ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াতে পেরেছিল। সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গও সেদিন হয়ে উঠেছিলেন এক একজন বিপ্লবী। রাজনৈতিক আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য, রাজনৈতিক আন্দোলনের কর্মীদের উজ্জীবিত করে সামনে এগিয়ে চলার প্রেরণা সৃষ্টির জন্য সাহিত্য ও সংষ্কৃতি জ্বালানি বা চালিকাশক্তি হয়েছিল। আমাদের মুক্তিযুদ্ধেও সাংস্কৃতিক শক্তি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণে সীমাহীন প্রেরণা জুগিয়েছিল। সেই শক্তির উৎস অনুসন্ধানের জন্য আমাদের একটু পেছনে ফিরে তাকাতে হবে।

বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের মূল সংগ্রাম হলো ভাষা আন্দোলন। ভাষা আন্দোলন ছিল একটি জাতীয় চেতনা সৃষ্টিকারী জাতীয় আন্দোলন। হাজার বছর ধরে শোষিত বাঙালি জাতির ভাষা আর শাসকগোষ্ঠীর ভাষা ছিল ভিন্ন। ভাষাগত ভিন্নতা দিয়ে শাসক শ্রেণি সব সময় শোষিত শ্রেণিকে দূরে ঠেলে রাখত। শাসকশ্রেণির ভাষা যারা রপ্ত করতে পারত তারাই সমাজে এলিট হিসেবে বিবেচিত হতো। সাতচল্লিশের দেশভাগের পর আশা করা গিয়েছিল যে, এবার বৃহৎ জনগোষ্ঠীর ভাষা যথাযোগ্য মর্যাদা লাভ করবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর প্রধান অংশ হয়ে যায় অবাঙালি। তারা বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতিকে অবজ্ঞা করে এবং বাংলা ভাষাকে বাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিতেও কুণ্ঠাবোধ করে। শুরু হয় বাংলাভাষার রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। বাংলা ভাষাভাষী সকলের আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠার এ সংগ্রামে বিজয় অর্জন করার মাধ্যমেই বাঙালি জাতির চেতনায় জাগ্রত হয় মুক্তিলাভের আকাক্সক্ষা। এই ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ভাষা আন্দোলনের চেতনায় যে সমৃদ্ধ সাহিত্য ও সংগীত রচিত হয়েছিল তা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণার উৎস হয়েছিল। বাঙালি তার ভাষাকে ভালোবাসার শক্তি পেয়েছিল সাহিত্য ও সংগীত থেকেই। মধ্যযুগের বাঙালি কবি আবদুল হাকিম বাংলা ভাষার প্রতি গভীর অনুরাগ থেকে বাংলা ভাষার প্রতি অবজ্ঞা দেখে খেদোক্তি করেছিলেন- ‘যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী /সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।’ ভাষাপ্রেমে গণমানুষকে উজ্জীবিত করতে কবির এ বাণী আজও মুখে মুখে উচ্চারিত হয়।

উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়েই স্বাধীনতা ও মুক্তির আকাক্সক্ষা জাগ্রত করার মহান বাণী প্রচার করেছিলেন রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে, কে বাঁচিতে চায়/ দাসত্ব শৃঙ্খল বলো কে পরিবে পায় হে, কে পরিবে পায়’- পরাধীনতার গ্লানি ও স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা সম্বলিত রঙ্গলালের এ বাণীর মাঝে যে অসীম শক্তি আছে তা যেকোনো পরাধীন ব্যক্তি বা জাতিকে মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রাণিত করে। সাহিত্যের এ শক্তি যেকোনো মারণাস্ত্রের শক্তির চেয়ে হাজার গুণ বেশি। এ শক্তি লক্ষ্যভেদী, সুদূরপ্রসারী ও চেতনায় বহমান।

সাহিত্যের যে শক্তি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে বিপ্লবীদের উজ্জীবিত করেছিল সেই শক্তিই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করার সাহস জুগিয়েছিল। রাজনৈতিক আন্দোলনে প্রেরণাদায়ী সাহিত্যের অপরিসীম শক্তি খুঁজে পাওয়া যায় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘আনন্দমঠ’ (১৮৮২ খ্রি.) উপন্যাসে। উপন্যাসের ‘বন্দে মাতরম’ ধ্বনি সেদিন ভারতবর্ষে হিন্দু জাতীয়তাবাদী শক্তিকে স্বাধীনতার চেতনায় ক্ষেপিয়ে তুলেছিল। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ (১৯২৬ খ্রি.) বিপ্লবীদের এতটাই উজ্জীবিত করেছিল যে, ব্রিটিশ সরকার ‘পথের দাবী’ নিষিদ্ধ করতে বাধ্য হয়েছিল। সাহিত্যের এ শক্তি অগণিত মারণাস্ত্রের শক্তির চেয়েও বেশি কার্যকর। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে নজরুলসাহিত্য ধূমকেতুর শক্তি নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিল। নজরুল বলেছিলেন, ‘ধূমকেতু সর্বপ্রথম ভারতের স্বাধীনতা চায়।’ নজরুল যেসময় কথাটি বলেছিলেন সেসময় কোনো সর্বভারতীয় নেতাও এত সরাসরি স্বাধীনতার দাবি করতে সাহস করেনি। নজরুলসাহিত্যের পরতে পরতে যে শক্তি ছিল যেকোনো সামরিক শক্তিও তার তুলনায় নস্যি। ‘এ দেশ ছাড়বি কি না বল/ তা নইলে কিলের চোটে হাড় করিব জল’ কিংবা ‘শিকল পরা ছল মোদের এই শিকল পরা ছল/ এই শিকল পরেই শিকল তোদের করব রে বিকল’ কিংবা ‘বল বীর/ চির উন্নত মম শির’ কিংবা ‘ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান/ আসি অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা দিবে কোন বলি দান’ কিংবা ‘আমি আপনারে ছাড়া করি না কাহারে কুর্নিশ’- এরকম অসংখ্য বিপ্লবী এবং মুক্তির সংগ্রামে প্রেরণাদায়ী পঙ্ক্তি গণআন্দোলনকে প্রভাবিত করেছে।

সাংস্কৃতিক শক্তি যেহেতু চেতনায় বহমান তাই এ শক্তিকে পরিমাপ করা যায় না। এ শক্তির বহিঃপ্রকাশ লক্ষ করা যায় চেতনায় উজ্জীবিত হওয়ার উন্মাদনা দেখে। সংষ্কৃতি হিসেবে সাহিত্য ও সংগীত বাঙালির জীবনে বহমান চেতনার ধারক। এই চেতনাকে শানিত করার শক্তি জোগায় প্রথমত সাহিত্য ও সংগীত। সাহিত্যের শক্তি রাজনৈতিক আন্দোলনে মনোবল সঞ্চার করে। রাজপথে যখন বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন চলছে; বাঙালির দামাল ছেলেরা যখন ব্যারিকেড উপড়ে ফেলছে; ১৪৪ ধারা ভাঙছে; তখন পর্যন্ত এটা দাবি আদায়ের সংগ্রাম হিসেবেই চলছে। কিন্তু কবিতায় যখন উচ্চারিত হলো ‘এখানে যারা প্রাণ দিয়েছে/ রমনার ঊর্ধ্বমুখী কৃষ্ণচূড়ার তলে/ যেখানে আগুনের ফুলকির মতো/ এখানে ওখানে জ¦লছে অসংখ্য রক্তের ছাপ/ সেখানে আমি কাঁদতে আসিনি’ (কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি, মাহবুবুল আলম চৌধুরী) কিংবা গানে যখন সুরের অনুরণন বেঁজে উঠল- ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি’ অথবা ‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইরা নিতে চায়/ ওরা কথায় কথায় শেকল পরায় আমার হাতে পায়’ তখন ভাষা আন্দোলন হয়ে উঠল এক জাতীয় চেতনার নাম। কাব্য-গানে তখন সে চেতনা ছড়িয়ে পড়ল প্রাণে প্রাণে। শহর থেকে গ্রামে, রাজপথ থেকে আলপথে। অধিকার আদায়ের সংগ্রাম রূপ নিল জাতিসত্তার আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে। এ শক্তির উৎস সাহিত্য ও সংস্কৃতি। বায়ান্নো থেকে একাত্তরের ঘটনা পরম্পরা মূলত রাজনৈতিক। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিশ্বও একে রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ বলেই গণ্য করেছে। কিন্তু একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ মূলতই রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহে নয়। একাত্তরে যখন অরাজনৈতিক কোটি কোটি বাঙালি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তখন মুক্তিযুদ্ধ পরিণত হয়েছিল জাতিসত্তার আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে। একটি জাতিকে জাতীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে রাজনৈতিক আন্দোলনের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রয়োজন পড়ে। কারণ একটি জাতির সংস্কৃতি সেই জাতির চেতনায় রক্তধারার মতোই বহমান। জাতির নিজস্ব সংস্কৃতি শুধু চলমান বিষয় নয়; নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে অনুসন্ধান করে, ব্যক্তিকে আবেগতাড়িত ও অতীতাশ্রয়ী করে। তাই সাংস্কৃতিক বন্ধনই শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। সাহিত্য ও সংস্কৃতিই জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে। যেমন বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেøাগান হলো ‘জয় বাংলা’। এই ‘জয় বাংলা’ কোনো ধাতব মারণাস্ত্র নয়; কিন্তু ‘জয় বাংলা’র শক্তিতে গর্জে উঠেছিল হাজার হাজার শানিত হাতিয়ার। ‘জয় বাংলা’ একটি চেতনা যা শিরায় শিরায় রক্তের মতোই বহমান। জিহ্বায় উচ্চারিত ‘জয় বাংলা’ একজন মুক্তিযোদ্ধাকে যেমন জীবন উৎসর্গ করতে তাড়িত করেছিল তেমনি সাধারণ মানুষকেও করে তুলেছিল বিক্ষুব্ধ।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান শুধু যুদ্ধাবস্থায় নয়; যুদ্ধ পরবর্তী দেশ গঠনেও জাতিকে উজ্জীবিত করে আসছে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে দেশপ্রেমের চেতনা বহমান রাখতে সাহিত্য ও সংস্কৃতি যে ভূমিকা পালন করে তা অন্য কোনোভাবে সম্ভব নয়। সাহিত্য ও সংস্কৃতি জাতির চেতনাকে জিইয়ে রাখে যুগ থেকে যুগান্তরে। ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’ কিংবা ‘জয় বাংলা বাংলার জয়, হবে হবে হবে- হবে নিশ্চয়’ কিংবা ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেব রে’ কিংবা ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা’- এসব গান যুদ্ধকালে শুধু নয়; যুদ্ধপরবর্তী সময়েও, এমনকি আজও জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে প্রেরণা জোগায়। দেশপ্রেমে উজ্জীবিত করে গণমানুষকে। এ গানের সুর ও বাণীর শক্তি এতই ব্যাপক ও শক্তিশালী যে, তা জীবনকে তুচ্ছ করার সাহস ও শক্তি জোগায়। এ শক্তি নিরন্তর বহমান থাকে চেতনায়। সাহিত্য ও সংস্কৃতির এ অসীম শক্তি আমাদের মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনে সহায়ক হয়েছিল। শুধু মুক্তিযুদ্ধে নয়, বাঙালি জাতির হাজার বছরের যে আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম সে সংগ্রামেও সাহিত্যের শক্তিই ছিল প্রধান হাতিয়ার। তাই মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতির বিজয় অর্জনে সাংস্কৃতিক শক্তির ভূমিকা অপরিসীম।

আলী রেজা: পিএইচডি গবেষক, ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ শিক্ষক।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :