বাংলাদেশ-মিয়ানমার করিডোর: অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা

মোঃ সাইফুল ইসলাম মাসুম
  প্রকাশিত : ১৫ মে ২০২৫, ১৮:২৩
অ- অ+

বাংলাদেশ-মিয়ানমার করিডোর একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক সংযোগ প্রকল্প হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত হয়ে আসছে। এই করিডোর শুধুমাত্র বাংলাদেশ মিয়ানমারের মধ্যে নয়, বরং দক্ষিণ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য, যোগাযোগ কৌশলগত সহযোগিতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

সুবিধাসমূহ

. আঞ্চলিক সংযোগ বৃদ্ধি: করিডোরের মাধ্যমে বাংলাদেশ চীন, মায়ানমার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে আরও সরাসরি সংযুক্ত হতে পারে।

. অর্থনৈতিক সম্ভাবনা: করিডোর চালু হলে বাণিজ্যিক পরিবহন সহজ হবে, নতুন বাজারে প্রবেশ সহজ হবে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে।

. পর্যটন সাংস্কৃতিক বিনিময়: সীমান্ত পারাপার সহজ হলে পর্যটন শিল্প বিকাশ লাভ করবে এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়বে।

. OBOR উদ্যোগে অংশগ্রহণ: এই করিডোর চীনের Belt and Road Initiative-এর আওতায় আসতে পারে, যা অবকাঠামোগত উন্নয়নে সহায়তা করবে।

অসুবিধাসমূহ

. নিরাপত্তাজনিত আশঙ্কা: সীমান্ত এলাকায় বিদ্রোহী গোষ্ঠীর তৎপরতা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা করিডোর ব্যবস্থাকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারে।

. রোহিঙ্গা সংকট: রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হলে করিডোর বাস্তবায়নে বাধা আসতে পারে।

. ভারত চীনের প্রতিক্রিয়া: করিডোরে চীনের সক্রিয় অংশগ্রহণ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে।

. সার্বভৌমত্ব নিয়ন্ত্রণ প্রশ্ন: করিডোর ব্যবস্থাপনায় বিদেশি প্রভাব বাড়লে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।

যুক্তিতর্ক

পক্ষে:

- আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।

- বাণিজ্যে বৈচিত্র্য পরিসর বাড়বে।

- রপ্তানি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

বিপক্ষে:

- নিরাপত্তা হুমকি রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে।

- আঞ্চলিক শক্তির দ্বন্দ্বে বাংলাদেশকে সামলাতে হতে পারে।

ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

. চীন-মিয়ানমার সম্পর্ক: চীন মিয়ানমারের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক রাজনৈতিক মিত্র, এবং এই করিডোরে চীনের প্রভাব বিস্তার ঘটবে।

. ভারত-চীন প্রতিযোগিতা: ভারত করিডোরকে চীনের কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ মনে করতে পারে এবং এটি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে।

. আসিয়ান সংযোগ: বাংলাদেশ আসিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে সংযোগ বাণিজ্য সম্প্রসারণে আগ্রহী, এই করিডোর তা সম্ভব করতে পারে।

. রোহিঙ্গা সংকট: আন্তর্জাতিক মানবাধিকার পরিস্থিতি শরণার্থী সমস্যা করিডোর বাস্তবায়নে অন্তরায় হিসেবে থাকতে পারে।

করিডোরের রূপরেখা মানচিত্র

BCIM (Bangladesh-China-India-Myanmar) অর্থনৈতিক করিডোরটি প্রায় ,৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এটি কলকাতা, ঢাকা, সিলচর, ইম্ফল, মান্দালয়, টেংচং এবং কুনমিংকে সংযুক্ত করে। এই করিডোরের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে পণ্য পরিবহন, বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তি বিনিময় আরও সহজ হবে।

উপসংহার

বাংলাদেশ-মিয়ানমার করিডোর শুধুমাত্র একটি পরিবহন প্রকল্প নয়, বরং এটি একটি কৌশলগত মেরুদণ্ড হয়ে উঠতে পারে। এই করিডোর বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন যথাযথ কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, নিরাপত্তা বিবেচনা এবং আঞ্চলিক শক্তির সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা। রোহিঙ্গা ইস্যুর সুষ্ঠু সমাধান, স্বচ্ছ চুক্তি এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার নিশ্চয়তা থাকলে এই করিডোর বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।

লেখক: ব্যাংকার, জিওপলিটিক্যাল এনালিস্ট কলামিস্ট

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
পাবনায় বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষ: মোটরসাইকেল ও অফিস ভাঙচুর, হাসপাতালে ভর্তি ৫
বিএনপি মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চায়: আমিনুল হক 
অভ্যুত্থানের পর সরকারের কর্তব্য ছিল শিক্ষাখাতের সংস্কারে মনোযোগ দেওয়া: সাকি
৫ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে পুশ-ইন করেছে বিএসএফ 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা