পৃথিবীর সকল মা ভালো থাকুক

আমার মা সাদিয়া খাতুন এবং বেগম নাসরিন জাহানকে উৎসর্গ করে এই নিবন্ধের অবতারণা করছি। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার এই দিনটি পালিত হয় মায়েদের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য। দশটি মাস গর্ভে ধারণ করে যে মা সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখান, সেই মায়ের সম্মানে তাঁরই চরণে এ দিনে নত তাবৎ পৃথিবীর সন্তানেরা। মাকে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানাতে কোনো দিনক্ষণ প্রয়োজন নেই। মায়ের জন্য প্রতিদিনই সন্তানের ভালোবাসা থাকে। তবুও আলাদা করে একটু ভালোবাসা জানাতেই মাকে নিয়ে লিখনীর জন্য আজকের দিনটি বেছে নিলাম। প্রতিটা দিনই মায়ের জন্য অন্তত আমাদের মতো দেশে। এ বিষয়টি মাথায় রেখে আমি বুঝেশুনে লেখাটি নির্দিষ্ট দিবসে না পাঠিয়ে আজ পাঠালাম। সন্তানরা মনে রাখলে ভালো লাগার আবেশে চোখ বুজে আসে মায়েদের।
‘তুমি আমার মা
আমার পৃথিবী
তোমাকে খুব মিস করছি
অনেক অনেক ভালোবাসি
পৃথিবীর সব মা ভালো থাকুন।’
প্রাচীন গ্রিসে বিশ্ব মা দিবস পালন করা হলেও আধুনিককালে এর প্রবর্তন করেন এক মার্কিন নারী। ১৯০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আনাজারভিস নামের নারী মারা গেলে তার মেয়ে আনা মারিয়া রিভস জারভিস মায়ের কাজকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য সচেষ্ট হন। ওই বছর তিনি তার সানডে স্কুলে প্রথম এ দিনটি মাতৃদিবস হিসেবে পালন করেন। ১৯০৭ সালের এক রবিবার আনা মারিয়া স্কুলের বক্তব্যে মায়ের জন্য একটি দিবসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন। এরপর ১৯১৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রোউইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। বাংলাদেশে দিনটি ঘরোয়া পরিবেশে উদযাপন করা হয়। সন্তানরা মায়েদের ফুল, উপহার ও ভালোবাসার বার্তা দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করেন কবিতা, ছবি ও স্ট্যাটাসের মাধ্যমে। এছাড়া ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো বিশেষ কালেকশন প্রকাশ করে। সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার উপস্থিতি নেই বললেই চলে, তাই আমি গণমাধ্যমে আমার মনের ভাব প্রকাশ করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করে থাকি। মা দিবসের মূল বার্তা হলো মায়ের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, ত্যাগ ও স্নেহের প্রতি সম্মান জানানো। এই দিনে আমরা আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষটিকে মনে করি, যিনি আমাদের প্রথম শিক্ষক, অভিভাবক ও বন্ধু। নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসার যদি কোনো উদাহরণ থেকে থাকে তবে সেটা মায়ের ভালোবাসা। মা মানে নাড়ির টান! একজন মা জীবনের সব কিছুকে ত্যাগ করে সন্তানের সুখের জন্য সব কিছু করতে পারেন। এই দিন বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মাকে ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে তোলার একটি বিশেষ দিন। তাই কঠোর পরিশ্রমের মাঝেও তাদের মুখে হাসি ফোটানোই প্রত্যেকটি সন্তানের কর্তব্য। তার সুখের জন্য সব কিছু করে থাকেন। আর এই বিশেষ দিনে সন্তানরাও তার মাকে খুশিতে রাখার জন্য ঘুরতে নিয়ে যান, তাদের সঙ্গে সময় কাটান।
তবে পৃথিবীর সব জায়গাতেই নানাভাবে পালিত হয় ‘মা’ দিবস। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অনুসারে একে অপরের থেকে আলাদা। তবে আমাদের দেশে এই বিশেষ দিনে সবাই তার মায়েদের জন্য উপহার আনেন। সুন্দর শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান। আবার বিদেশেও কিন্তু অনেকে তার মায়েদের কার্ড ও ফুল দিয়ে ভালোবাসা প্রকাশ করেন। জাপানে মা দিবসের উপহার হলো ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা। নেপালে মা দিবস উদযাপনের একটি বিশেষ উৎসব পালন করা হয়, যাকে বলা হয় ‘মাতা তীর্থ আউন্সি’। এই বিশেষ দিনে প্রত্যেকটি সন্তান যেন নিজেদের মায়ের সঙ্গে প্রচুর সময় কাটান। জাপানে মা দিবসের দিন মায়েদের নানান উপহার দেওয়া হয়। মা মানে অসীম আকাশ যার নেই কোনো শেষ।
আমি যদি সত্য থাকতাম ভালো হতো বেশ।
মা মানে কত আদর নতুন নতুন বায়না,
মায়ের মতো এত আদর আর তো কোথাও পাই না।
মা মানে খুব কাছের অফুরন্ত ভালোবাসা।
মাকে নিয়ে বলতে গেলে ফুরিয়ে যায় ভাষা
মা মানে ছোটবেলায় গামলায় বসে স্নান,
তুমি হলে এমন মা ছেলে অন্ত প্রাণ।
ছোটবেলায় মা চোখে পড়াতো কাজল কত যত্ন করে,
পুরোনো স্মৃতি আর কত কথা যে মনে পড়ে।
না মানে কোলে বসে আদর করে খাওয়ানো,
ঘুম পেলে মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমানো।
মা মানে সারাদিন শুধু আমার কথা চিন্তা করে,
এমন মা যেন পাই জনম জনম ধরে।
মা বিদ্যা মা বুদ্ধিমান মা জ্ঞানদাতা,
মায়ের কাছে মাথা নত স্বয়ং বিধাতা।
মা সকাল এবং মা সন্ধ্যা মা হলো আঁধার,
মা ছাড়া এ জগতে শুধু নীরাধার।
মা শীত মা গ্রীষ্ম মা হলো বর্ষা
সব ঋতুর প্রধান মা সবার আশা ভরসা।
মা সৃষ্টি মা ধ্বংস মা লালন পালন
মা প্রকৃতি মা ধরা মা মাঠের ফলন।
প্রত্যেক সন্তানই যেন তার মাকে নিয়ে ভালো থাকেন, এমনই কামনা করা উচিত। তাই তাদের খুশি করার জন্য তাদের সঙ্গে ঘুরতে যান। নিজের হাতে রান্না করেও মাকে খাওয়াতে পারেন।
৩৬৫ দিবসে পৃথিবীর সব মা’ই যেন সুখী থাকেন, সন্তান হিসেবে এই যেন হয় আমাদের সবার প্রত্যাশা।
লেখক: প্রেসিডেন্ট আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী সংগঠন ফ্রিডম ইন্টারন্যাশনাল এন্টি অ্যালকোহল

মন্তব্য করুন