বগুড়ায় ভরা মৌসুমেও সবজির দাম চড়া

বগুড়া প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ০৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫:৩৫ | প্রকাশিত : ০৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫:১১

এখন শীতকালীন সবজির ভরা মৌসুম। উত্তরাঞ্চলের বৃহৎ সবজির মোকাম বগুড়ার মহাস্থানহাটও সবজিতে টইটম্বুর। এমন অবস্থাতেও কাঙ্ক্ষিত দামে নেমে আসেনি কোনো সবজির দর। হাট-বাজারে সবখানে অতীতের বছরগুলোর চেয়ে সব ধরনের সবজির দাম বেশি। গত বছর সবজি দিয়ে এক ট্রাক ভরাতে খরচ পড়তো এক লাখ ৮০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা। সেখানে এবার খরচ পড়ছে প্রায় ৬ লাখ টাকা। এখন প্রতিদিন মহাস্থান হাটে লেনদেন হচ্ছে প্রায় ১২ কোটি টাকা।

সরেজমিনে মহাস্থান হাটে গিয়ে দেখা গেছে, শীতকালীন সবজিতে টইটম্বুর অবস্থা। হাটে শীতকালীন সবজির মধ্যে মূলা এবং ফুলকপির পরিমাণ বেশি। এ ছাড়া বাঁধাকপিও সারিবদ্ধভাবে হাটের মাঝে মাঝে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। তবে সাদা মূলা সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া আলু, বেগুন, পটল, টমেটো, কাচা মরিচ, লাউ, সবুজ লাউ, ধনিয়া পাতা, শসা, খিরাসহ সব ধরনের সবজির সরবরাহ দেখা গেছে।

হাটে সাদা আলু ৪৫-৫৫ টাকা কেজি, লাল আলু ৬০ টাকা কেজি, পাকরি ৭০ টাকা কেজি, বেগুন ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি, ফুল কপি ২২ থেকে ২৬ টাকা কেজি, বরবটি ২৫ টাকা কেজি, করলা ৭০ টাকা, শিম ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি, কাচা মরিচ ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি, মুড়িকাটা নতুন পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি, টমেটো ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি, গাজর ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি পিস বাঁধা কপি বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৭ টাকা।

৩০০ বছরের পুরোনো এই হাটে বগুড়া জেলার কৃষক ছাড়াও গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, নওগাঁর কৃষকরা সরাসরি তাদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে আসেন। কিছু কৃষক হাটে দাঁড়িয়ে তাদের পণ্য বিক্রি করেন। তবে অধিকাংশ কৃষকই আড়তদার ও খুচরা ব্যাপারীরা কিনে নেন। কেউ কেউ আবার উৎপাদিত সবজি জমিতেই বিক্রি করে দেন। এই সবজিগুলো বগুড়ার বিভিন্ন হাট বাজারসহ ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশালসহ বিভিন্ন এলাকায় থেকে মহাস্থান হাট থেকে সরবরাহ করা হয়।

শিবগঞ্জ উপজেলার কৃষক মোস্তফা বলেন, তিনি দুই বিঘা জমিতে ফুলকপি লাগিয়েছেন। এক ভ্যান কপি নিয়ে এসেছিলেন। আজকে তিনি বিক্রি করেছেন ১০০০ টাকা মণে। হাটে আসার পরপরই তার সব কপি বিক্রি হয়ে গেছে। গত কয়েক দিন আগেও তিনি বিক্রি করেছেন ১৩০০ থেকে ১৫০০ টাকা মণ।

মহাস্থান হাটের আড়তদার ব্যবসায়ী মো. ইউসুফ আলী বলেন, প্রতি বছরের তুলনায় এবার সবজির দাম অনেক বেশি। সাধারণত আগাম জাতের শীতকালীন যখন বাজারে নামে তখন সরবরাহ কম থাকায় দাম একটু বেশি থাকে। এবারও তেমনই ছিল। কিন্তু এখন সবজির ভরা মৌসুম। এ সময় দাম আগাম জাতের সবজির সময়ের চেয়ে পার্থক্য খুব বেশি নেই। এখন যেমন ফুল কপি ১০০০ টাকা মণ পাইকারিতে বিক্রি হয়েছে। আগাম সবজি নামার সময় দাম ছিল ১৩০০-১৫০০ টাকা। এছাড়া আগের বছরগুলোতে এরকম সময় ফুলকপি পাইকারি দাম ছিল ৩-৪ টাকা কেজি। সেখানে এবার পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা কেজি। বাধা কপি এ সময় ছিল ৫-৬টাকা পিস, সেখানে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৬ টাকা ১৮ টাকা পিস।

তিনি বলেন, আমি প্রতিদিন সর্বনিম্ন ১ ট্রাক সবজি চট্টগ্রাম পাঠাই। কোনো কোন দিন ৩ ট্রাকও পড়ে যায়। এখন এক ট্রাক সবজির দাম পড়ছে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা। গত বছর এই সবজিই ১ লাখ ৮০ থেকে ২ লাখ টাকার মতো খরচ পড়তো। আমরা প্রতিটি পণ্যে কেজি প্রতি ১-২ টাকা লাভ করি। একটা গাড়িতে ১৪ হাজার কেজি মাল যায়। এক গাড়ি থেকে আমার ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা লাভ হওয়ার কথা। কিন্তু সেটা তো হয় না। লাভ-লসের মধ্য দিয়েই ব্যবসা পরিচালনা করছি। কারণ চট্টগ্রামে তো শুধু বগুড়ার মোকাম থেকেই মাল যায় না। অন্য মোকাম থেকেও মাল যায়। হয়ত অন্য মোকামে সরবরাহ বেশি থাকায় দাম কিছুটা কম পেলো। সেক্ষেত্রে তারা কম দিয়ে বিক্রি করলো। সেখানে আমি বেশি দাম দিয়ে কিনে নিয়ে গেলাম। ওই তো আর আমার লাভ হবে না।

লিয়াকত আলী নামের এক পাইকার বলেন, তিনি ৩১ বছর মহাস্থান হাট থেকে পাইকারি দরে সবজি কিনে সিলেট, মৌলভীবাজারসহ বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন। মহাস্থান হাট থেকে তিনি প্রতিদিন ১৪-১৫ টন মাল কেনেন।

তিনি বলেন, মাল কিনে প্রতিদিনই লাভ হবে এমন নয়। তবে কোনো দিন হয়ত ১০ হাজার টাকা লোকসান হলো, পর দিন দেখবেন হয়ত ৫০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। এভাবে তিনি ব্যবসা চালিয়ে যান।

মহাস্থান হাট ইজারাদারের প্রতিনিধি মনিরুজ্জামান মটু বলেন, সবজির সরবরাহ ভালো। তবে গত বছরের চেয়ে এবার সবজির দাম বেশি। গত বছর এরকম সময় ফুলকপির দাম ছিল ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা মণ। আজকের বাজারে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা মণ। গত বছর বেগুন ছিল ৩০০-৪০০ টাকা মণ বর্তমানে ২০০০ টাকা মণ। গত বছর পেঁয়াজ ছিল এরকম সময় ৫০০-৬০০ টাকা মণ বর্তমানে ৩০০০ হাজার টাকার উপরে। কদু ছিল প্রতি পিস ৭-৮টা এখন কদু বিক্রি হচ্ছে ২২-৩০ টাকা। প্রতিটা সবজির ক্ষেত্রেই এরকম। মহাস্থানে ৪০টির মতো আড়তদার রয়েছেন। প্রতিটি আড়ৎ থেকে ১টি করে ট্রাক হলেও ৪০ ট্রাক সবজি বিভিন্ন যাচ্ছে। সেখানে গড়ে ৬০ ট্রাক সবজি বগুড়ার বাইরে যাচ্ছে বলা যায়। এতে দিনে লেনদেন হচ্ছে প্রায় ১২ কোটি টাকার।

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. মতলুবর রহমান বলেন, বগুড়ায় এবার শীতকালীন শাক-সবজির যথেষ্ট ভালো উৎপাদন হয়েছে। উৎপাদনে কোনো ঘাটতি নেই। বাজারে প্রচুর সরবরাহ আছে। বগুড়ার চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অন্যান্য জেলারও চাহিদা মেটাচ্ছে। জেলা এবার সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ১৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি। এখন পর্যন্ত চাষ হয়েছে ১৩ হাজার ৪১ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ১৮ হাজার ৩৩০ মেট্রিক টন, সেখানে এখন পর্যন্ত উত্তোলন হয়েছে ১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৮ মেট্রিক টন সবজি। আগামী এপ্রিল পর্যন্ত জমি থেকে ফসল উত্তোলন করা যাবে। এতে করে আমাদের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করি।

(ঢাকা টাইমস/০৩জানুয়ারি/প্রতিনিধি/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :