ঢাবির ভর্তি বিজ্ঞপ্তি থেকে ‘ট্রান্সজেন্ডার’ শব্দ অপসারণের দাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্ডারগ্র্যাজুয়েড প্রোগ্রামে (স্নাতক প্রথম বর্ষ) ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে ‘হিজড়া’ কোটা থেকে ‘ট্রান্সজেন্ডার’ শব্দটি অপসারণের দাবিতে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। ট্রান্সজেন্ডার শব্দটিকে বিতর্কিত উল্লেখ করে লাগাতার আন্দোলন করে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৩ জানুয়ারি) দুপুরে এ আন্দোলন শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো ধরনের সাড়া না পেলে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন এবং নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে জানায় শিক্ষার্থীরা।
'দুই শূন্য দুই চার, প্রত্যাহার কর ট্রান্সজেন্ডার', 'ঢাবি শিক্ষার্থীরা চায় কী, ট্রান্স শব্দের বিলুপ্তি', 'সার্কুলার সংশোধন করতে হবে' স্লোগান সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে অবস্থান করছে তারা।
অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেওয়া আরবি বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী মুনতাসীর আহমেদ মুয়াদ বলেন, 'ট্রান্সজেন্ডার' শব্দটি আমাদের দেশীয় শব্দ নয়। এমনকি বাংলা একাডেমির কোনো অভিধানে কোথাও 'ট্রান্সজেন্ডার' শব্দটির কোনো উল্লেখ নেই। তবে হিজড়া শব্দের প্রতিশব্দ হিসেবে hermaphrodite ও eunuch-এর উল্লেখ থাকলেও এগুলো ব্যতীত অন্যকোনো শব্দের উল্লেখ নেই। এমতাবস্থায় একটি বিতর্কিত শব্দকে কেন ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে যুক্ত করা হলো তা- আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা মনে করি ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে এই শব্দ সংযুক্তির মাধ্যমে দেশীয় কৃষ্টি ও সংস্কৃতির ওপর আঘাত করা হয়েছে। আমাদের দেশজ সংস্কৃতি রক্ষায় এই শব্দটি প্রত্যাহার করা অত্যন্ত জরুরি।
বাংলা বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী মোসাদ্দেক আলী ইবনে মুহাম্মদ বলেন, হিজরাদের কোটা থাকা যুক্তিযুক্ত। আমরা হিজড়াদের বিরুদ্ধে নই। কিন্তু ট্রান্সদের কোটা দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই৷ নিজেদের বিকৃত করে কোটার দাবিদার হওয়া যায় না। উপাচার্য স্যার বলেছেন ট্রান্সজেন্ডার শব্দ দ্বারা হিজড়াকে বুঝানো হয়েছে। কিন্তু ট্রান্সজেন্ডার একটি গুচ্ছে শব্দ। তাহলে কেন অন্য আরও সমার্থক শব্দ থাকলেও হিজড়া শব্দের পাশে ‘ট্রান্সজেন্ডার’ শব্দ উল্লেখ করতে হবে? ট্রান্সজেন্ডার' শব্দটি ভুলভাবে ব্যবহৃত হওয়ার মাধ্যমে একটি ভিন্ন গোষ্ঠীর জন্য সুযোগ তৈরী করবে। ফলে সুবিধাবঞ্চিত হিজড়া জনগোষ্ঠীর নিজেদের প্রাপ্য অধিকার থেকেও বঞ্চিত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। এর মাধ্যমে সমকামিতার বীজ আমাদের মাঝে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ ডিসেম্বর প্রকাশিত ২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে কোটার অংশে হিজড়া/ ট্রান্সজেন্ডার কোটার কথা উল্লেখ করা হয়। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম নেয়। গত ২১ ডিসেম্বর ট্রান্সজেন্ডার কোটা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন পালন ও উপাচার্য বরাবর স্মারক লিপি প্রদান করে শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড এ এস এম মাকসুদ কামাল শিক্ষার্থীদেরকে স্পষ্ট করেন ট্রান্সজেন্ডার কোটায় শুধু হিজরারাই স্থান পাবে, চিকিৎসার মাধ্যমে রূপান্তরিত কেউ এই কোটার যোগ্য হবে না। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তখন ভর্তি বিজ্ঞপ্তি থেকে বিতর্কিত ট্রান্সজেন্ডার শব্দটি বাতিলের দাবি জানায়। গত ৩০ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত আল্টিমেটাম দেয় তারা।
(ঢাকাটাইমস/৩জানুয়ারি/এআর)

মন্তব্য করুন