ঝিনাইদহে ট্রাক-ঈগলের চ্যালেঞ্জের মুখে নৌকা

আনুষ্ঠানিকভাবে শেষে হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা। ভোটাররা এখন নির্বাচনে পাস ফেলের চুলচেরা বিশ্লেষণ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শহরের রাজনীতিবিদ, সুধী সমাজ থেকে শুরু করে গ্রামের শ্রমিক, কৃষিজীবী মেহনতি মানুষে মধ্যে বইছে এখন নির্বাচনি আমেজ। আগামী ৭ জানুয়ারি কে পড়বেন বিজয়ের মালা।
বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও সামাজিকভাবে তাদের অনেকেই জড়িয়ে পড়েছেন এই নির্বাচনের সঙ্গে। সে কারণে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহের ৪টি আসনেই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা।
ঝিনাইদহ ১ ও ২ আসন নৌকার প্রার্থীরা রয়েছেন তীব্র চ্যালেঞ্জের মুখে। এই দুই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা হলেন- ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং বিশিষ্ট শিল্পপতি নজরুল ইসলাম দুলাল এবং নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুল। তারা নৌকার দুর্গে শক্ত করে আঘাত হানছে। এছাড়া ঝিনাইদহ-৩ আসনে নৌকা নির্ভার নয় এখানেও রয়েছে দুইবার নির্বাচিত এমপি ট্রাক প্রতীকের শফিকুল আজম চঞ্চল।
তবে ঝিনাইদহ-৪ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রতিপক্ষ রয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকের আব্দুর রশিদ খোকন। তিনি প্রয়াত এমপি আব্দুল মান্নানের ভাই হলেও নির্বাচনে অন্য তিন আসনের স্বতন্ত্রের থেকে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছেন। তারপরেও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আনোয়ারুল আজিম আনারকে শক্ত হাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে।
ঝিনাইদহ-১: জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নৌকার প্রার্থী আব্দুল হাই এমপিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে স্বতন্ত্র ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী বিশ্বাস বিল্ডার্সের চেয়ারম্যান শিল্পপতি নজরুল ইসলাম দুলাল মাঠ কাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন। ইতোমধ্যে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে একাধিক মামলা দিয়ে আব্দুল হাইকে নাজেহাল করে তুলেছেন তিনি। ২০০১ সাল থেকে পর পর ৪ বার নির্বাচিত এই জনপ্রতিনিধি এবং সাবেক প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী এখন চরম শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন। এর আগে কখনো এমন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়নি তাকে। এই আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ট্রাক প্রতীক নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন। ঝিনাইদহ-২: আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তাহ্জীব আলম সিদ্দিকীকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শক্ত অবস্থানে মাঠে রয়েছেন স্বতন্ত্র ঈগল প্রতীকের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুল। তিনি আওয়ামী লীগের একটি বৃহৎ অংশ এবং সাধারণ মানুষকে নিয়ে গড়ে তুলেছেন নিজস্ব ভোট ব্যাংক। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে বিপুল ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের বিরোধের শিকার হচ্ছেন। দলের একটি বড় অংশ তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তবে, শেষ সময়ে অনেকেই তার সঙ্গে ফিরে এসেছে বলে তার কর্মী সমর্থকরা দাবি করছেন। ঝিনাইদহ সদর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ সদরের বেশিরভাগ চেয়ারম্যান এবং হরিণাকুণ্ডু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ, যুবলীগের আহ্বায়ক, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক, কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ অনেক নেতাকর্মী রয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে। তাছাড়া বিএনপি-জামায়াতের একটি অংশও রয়েছে এই স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে। ফলে নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে তিনি অনেকটাই আশাবাদী। ঝিনাইদহ-৩: আসনটিতে আওয়ামী লীগের নতুন প্রার্থীর চমক থাকলেও দলীয় বিভেদের কারণে নৌকা মনোনীত প্রার্থীকে পড়তে হচ্ছে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে। এই আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী ক্লিন ইমেজখ্যাত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক সামরিক সচিব মেজর জেনারেল (অব.) সালাউদ্দিন মিয়াজী এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে দলের আরেক নেতা জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য দুইবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য শফিকুল আজম চঞ্চল। তিনি দীর্ঘদিন ধরে দলের তৃণমূলের সঙ্গে রাজনীতি করেছেন। অর্থনৈতিক এবং সামাজিকভাবে মূল্যায়ন করেছে তৃণমূলের নেতাদের, এখন তারা সবাই নৌকার বিরুদ্ধে গিয়ে চঞ্চলের পক্ষে কাজ করছেন। তবে গত কয়েকদিন আগে এই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের যুবলীগের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক এমপি নবী নেওয়াজ নৌকা মার্কা এবং তার সমর্থিত সালাহ উদ্দীন মিয়াজীকে সমর্থন জানিয়ে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছেন। ঝিনাইদহ-৪: এ আসনটিতে প্রতিদ্বন্দ্বি রয়েছে ৫ জন প্রার্থী। এদের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ মনোনীত বর্তমান এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের নৌকা প্রতীকের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রশিদ খোকনের ট্রাক প্রতীকের। এই আসনে অন্য প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা চোখে পড়ার মতো নয়। (ঢাকাটাইমস/০৫জানুয়ারি/ইএইচ)
মন্তব্য করুন