ট্যুরিস্ট ভিসায় প্রতারণা, নিঃস্ব হয়ে দেশে ফিরছেন শ্রমিক

ছেলে মেয়েদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে ভালোভাবে জীবন কাটাতে চেয়েছিলেন জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার হরেন্দা গ্রামের অতিদরিদ্র পরিবারের দিনমজুর জাহাঙ্গীর সরকার। সুখের আশায় বাড়ির গরু ছাগল, বিভিন্ন এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ ও আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে ধারদেনা করে ভালো চাকরির প্রলোভনে পাড়ি জমিয়েছেন। কিন্তু দুবাই গিয়ে জানতে পারেন আদম ব্যবসায়ী তাকে এক মাসের ট্যুরিস্ট ভিসায় সেখানে পাঠিয়েছে। দালালের খপ্পরে পড়ে এভাবেই নিঃস্ব হয়েছেন তিনি।
দুবাইতে থাকা অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপনের বর্ণনা দিতে গিয়ে জাহাঙ্গীর সরকার বলেন, ২-৩মাস বন্দি অবস্থায় ছিলাম। মানুষের এঁটো খাওয়ার খেয়েছি। কোনো কোনো দিন শুধু পানি খেয়ে ছিলাম। একপর্যায়ে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছি।
দেশে ফিরে দালাল সেলিম চৌধুরীর বিচার চেয়ে জয়পুরহাট র্যাব ক্যাম্পে অভিযোগ করেছেন বলে জানান তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে সেলিমের কাছ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি জাহাঙ্গীরকে বৈধভাবে দুবাই পাঠিয়েছি। সে বিদেশে থাকতে না পেরে দেশে চলে এসেছে। এখন দেশে ফিরে আমার কাছে টাকা দাবি করছে। তিনি দাবি করে বলেন, আমি কোনো দালাল কিংবা আদম ব্যবসায়ী নই। মানুষকে প্রতারণার মাধ্যমে বিদেশ পাঠিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া আমার কাজ নয়।
একই এলাকার আমিপুর গ্রামের সৌদি প্রবাসী হুমায়ুন আহমেদের বাবা আব্দুল মজিদ পাঁচবিবি থানায় এক আদম ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। তার অভিযোগ ছিল, কয়েক মাস আগে স্থানীয় এক আদম ব্যবসায়ীর মাধ্যমে সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা দিয়ে ছেলেকে সৌদিতে পাঠিয়েছেন। কথা ছিল ছেলেকে ৫ বছরের জন্য কোম্পানিতে কাজ দিবে। কিন্তু তাকে দেওয়া হয়েছে ৩ মাসের জন্য পরিচ্ছন্নকর্মীর চাকরি। এখন টাকা ফেরত চাইলে ভয়ভীতি দেখায়। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এমন প্রতারণার ঘটনা ঘটছে অহরহ।
বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেশি বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের নিম্নবিত্ত পরিবারের বেকার যুবক ও দিন মজুরদের দুবাই, সৌদি, মালদ্বীপ, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও জর্ডানসহ বিভিন্ন দেশে পাঠাচ্ছে স্থানীয় কিছু বিদেশ ফেরত প্রবাসী, আদম ব্যবসায়ী ও কতিপয় দালাল। এক্ষেত্রে বিদেশগামী শ্রমিকের বেশিরভাগই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।
জানা গেছে, শ্রমিকদের কাছ থেকে ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় দালালরা। প্রথমে দীর্ঘ মেয়াদি প্রবাসে কোম্পানিতে কাজ করার কথা বললেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ট্যুরিস্ট ভিসায় পাঠিয়ে প্রতারণা করছে তারা। এদের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হয়ে দেশে ফিরছেন এসব শ্রমিকরা। দেশে ফিরে নিজেদের সঙ্গে হওয়া প্রতারণার বিচার চেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করলেও কাজে আসছেনা।
পাঁচবিবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.ফয়সাল বিন আহসান বলেন, এক শ্রেণির অসাধু আদম ব্যবসায়ীর খপ্পরে পড়ে গ্রামীণ মানুষ প্রতারিত হচ্ছেন। বেশি বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে দালালরা গ্রামের সহজ সরল মানুষদের বিদেশে পাঠাচ্ছে। প্রলোভনে পড়ে তারা প্রতারিত হচ্ছেন এবং নিঃস্ব হয়ে দেশে ফিরছেন। মাঝে মধ্যে এসব অভিযোগ নিয়ে মানুষ থানায় আসেন। অভিযোগের বিষয়টি আমলে নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয় বলে জানান তিনি। তবে এসব বিষয়ে সকলকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
(ঢাকাটাইমস/২৩ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/পিএস)

মন্তব্য করুন