অটিজম কেন হয়? যেসব লক্ষণে বুঝবেন আপনার শিশুও এ রোগে আক্রান্ত

ফিচার ও স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ০২ এপ্রিল ২০২৪, ১৪:০১

জন্মের পর প্রত্যেক শিশু একটি নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত প্রায় একই রকম আচরণ করে। সে হাসে, চোখের এক্সপ্রেশন দেয়, কাছের মানুষের সঙ্গে মজা করে, পাড়া প্রতিবেশীদের সঙ্গে মিশুকে হয়, বড় ভাই-বোনদের সঙ্গে খেলা করে। এটি প্রত্যেক শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ।

কিন্তু যখন শিশু বয়সে বড় হয়, তারপর কারও কথা শুনতে, কারও সঙ্গে কথা বলতে এবং সামাজিক ক্ষেত্রেও অসুবিধার সম্মুখীন হয়, তখন শিশুর এই অবস্থাটি ‘অটিজম’-এর লক্ষণ হতে পারে। তাই প্রতি বছর ২ এপ্রিল বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস পালিত হয়।

এই বিশেষ দিবসটির একমাত্র উদ্দেশ্য হলো- মস্তিষ্কের বিকাশে বাধা সৃষ্টিকারী এই রোগ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা এবং অটিজম আক্রান্তদের যথাযথ যত্ন নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করা।

অটিজম কোন কোন ক্ষতি ডেকে আনে

অটিজমের কারণে বাচ্চারা সমবয়সিদের সঙ্গে মিশতে এবং প্রয়োজনের জন্য সঠিকভাবে যোগাযোগও করতে পারে না। প্রতিভা এবং সম্ভাবনায় পরিপূর্ণ, অনেক অটিস্টিক শিশু ভালো দিকনির্দেশনার অভাবে জীবনের সঠিক লক্ষ্য অর্জন করতে পারে না। তাই পরামর্শদাতা এবং প্রশিক্ষকদের দায়িত্ব হলো- শিশুদের অবস্থা বুঝে তাদের বিভিন্ন বিষয়ে শেখানো, তাদের দক্ষতাকে সম্মান করা এবং তাদের আত্মনির্ভরশীল এবং সফল ব্যক্তিতে গড়ে তোলা।

যদিও অটিজমে আক্রান্ত শিশুর পক্ষে শেখা একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে। কারণ এই ব্যাধিতে আক্রান্ত শিশুদের বিকাশজনিত অক্ষমতা থাকতে পারে। এক্ষেত্রে তাদের দুর্বলতার দিকে নজর দেওয়া উচিত। অটিজমে আক্রান্ত অনেক শিশুই গণিত, বিজ্ঞান এবং সংগীতে মেধাবী হয়।

অটিজম আক্রান্ত শিশুদের কীভাবে সঠিকভাবে শিক্ষা অর্জনে সহায়তা করা যেতে পারে, সে প্রসঙ্গে অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষার কৌশল শেয়ার করেছেন ভারতের অটিজম বিশেষজ্ঞ ডা. গুপ্তা।

হঠাৎ উদ্দীপনা নয়

হঠাৎ পরিবর্তন বা রুটিনে নতুন সংযোজন হলে শিশুরা উদ্বিগ্ন বোধ করতে পারে। যেমন- হঠাৎ কোনো ক্লাস কুইজ বা পরীক্ষা নেওয়া হলে তাদের মানসিক বিপর্যয় হতে পারে। যদি আগে তাদের থেকে ভালোভাবে জানানো হয়, তবে তারা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে যে কোনো পরীক্ষা দিতে পারে। একইভাবে, গ্রুপ কথোপকথনের সময় বিরতির জন্য একটি সংকেত দেওয়ার ব্যবস্থা রাখলে তারাও সামাজিক প্রোটোকল বজায় রাখতে পারে।

সংবেদনশীলতা

শিক্ষার পরিবেশকে কম চাপমুক্ত রাখতে এটি গুরুত্বপূর্ণ। ক্লাসে ঝিকিমিকি আলো, অপ্রীতিকর শব্দ, নির্দিষ্ট টেক্সচার ইত্যাদি থাকলে পড়ুয়ারা অস্বস্তি বোধ করতে পারে। কিছু বাচ্চা এমন থাকে, যারা এমন কোনো শিক্ষকের কাছাকাছি বসতে চাইতে পারে, যার কাছ থেকে মায়ের মতো গন্ধ আসে। অনেকে আবার একটি লাইব্রেরির শান্ত কোণে বা কাজ করার সময় গুনগুন করতেও পছন্দ করে।

সম্ভাব্য আচরণের একটি তালিকা

প্রত্যাশিত আচরণের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করা থাকলে অটিজম আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে। এই তালিকাটি তাদের সামনে নিয়ে আসা হলে এটি আরও কার্যকর হবে।

নমনীয়তা

বই পড়া এবং বোঝার জন্য আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের সময় দিন। নমনীয়তা বজায় রাখুন। এতে তাদের আগ্রহ আরও বাড়তে পারে।

সরাসরি নির্দেশনা

আলংকারিক ভাষার ব্যবহারে স্পষ্ট এবং সরাসরি নির্দেশনা শিক্ষার্থীদের তাদের সহকর্মীদের সঙ্গে কথোপকথনে সাহায্য করবে।

জোরপূর্বক কিছু নয়

সুস্পষ্টভাবে তাদের লিখতে বাধ্য না করা, কাজ শেষ করতে তাদের যতটা সময় লাগে নিতে দেওয়া, অসুবিধা হলে তাদের ক্লাস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া, এক্ষেত্রে খুবই সাহায্য করবে।

ইতিবাচক ভাব বজায় রাখুন

সহপাঠীদের সামনে তাদের প্রশংসা করে তাদের জন্য একটি ইতিবাচক সামাজিক পরিবেশ তৈরি করুন। তাদের কৃতিত্বের জন্য সমবয়সিদের সঙ্গে তাকেও ভালো বলুন। স্কুলের কোনো ইভেন্টে তাদের দায়িত্ব দিন।

তাদের কথা বলতে উৎসাহিত করুন

কোনো কিছু লিখে সেটাকে সবার সামনে পড়ার জন্য তাদের অনুরোধ করুন। সে পড়তে শুরু করলে তাকে বাহবা দিন।

অটিজম কেন হয়?

চিকিৎসকদের মতে, মানসিক বিকাশে বাধার এই অবস্থা সাধারণত জন্মগত। যখন মা-বাবা শিশুর জন্মের আগে ও পরে টিকা দিতে পারেন না, তখন শিশুর মধ্যে এই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

গর্ভাবস্থায় মা গুরুতর অসুস্থতায় ভুগলেও এই সমস্যা হতে পারে। সেই সঙ্গে যেসব শিশু সময়ের আগে জন্ম নেয় বা যাদের গর্ভে সঠিকভাবে বিকাশ হয় না, তারাও এই সমস্যার শিকার হতে পারে। এটিও দেখা গেছে যে, এই রোগটি মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের বেশি প্রভাবিত করে।

(ঢাকাটাইমস/০২এপ্রিল/এজে)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :