শ্যামলী স্কয়ার শপিংমল: ঈদে পুরুষের পোশাকের বিক্রি বেশি

ঈদ উৎসবকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে শ্যামলী স্কয়ার শপিংমল। সুপরিচিত এ মার্কেটে পুরুষের পোশাক ক্রেতাদের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে। এলাকাভিত্তিক ক্রেতা তো রয়েছেই, দূর-দূরান্ত থেকেও পোশাক কিনতে আসছেন ক্রেতারা। তবে নারী ও শিশুদের পোশাকের তুলনায় বেশি বিক্রি হচ্ছে পুরুষের পোশাক। শুরু থেকেই পুরুষের পোশাকের চাহিদা থাকলেও নারী ও শিশু ক্রেতা কম হওয়ায় ভিন্ন ভাবনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের। নারী ও শিশুদের পোশাকের বদলে শপিংমলজুড়েই আগামীতে শুধুই পুরুষের পোশাক রাখতে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। বুধবার বিকালে রাজধানীর শ্যামলী স্কয়ার শপিংমল ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
অভিজাত এই শপিংমলের একটি ফ্লোরজুড়ে নারী ও শিশুদের পোশাক রয়েছে। পুরুষের পোশাক রয়েছে আরেকটি ফ্লোরে। তবে পুরুষের ফ্লোরে ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। পাশাপাশি বিক্রিও বেশি হচ্ছে।
পুরুষের পোশাক চাহিদার শীর্ষে থাকায় মিরপুর থেকে কেনাকাটা করতে এসেছেন আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায়ী জি এম রনি। সুপরিচিত এই মার্কেটে এসে সুলভ মূল্যে মানসম্পন্ন পোশাক পাওয়ায় সন্তুষ্ট তিনি।
জি এম রনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘অনেক সুনাম শুনেছি এই মার্কেটের। তাই এই ঈদের কেনাকাটা করতে মিরপুর থেকে এসেছি। আমি নিজেও ব্যবসায়ী। সে অভিজ্ঞতায় মনে হয়েছে এখানে পোশাকের সংগ্রহ ভালো। এছাড়া কম দামেও পোশাক কিনতে পেরেছি।’
এলাকাভিত্তিক ক্রেতার সংখ্যা বেশি থাকলেও পোশাকের দাম কম হওয়ায় এবং মানে ভালো থাকায় শুধু ঈদের মৌসুমই নয়, বছরজুড়েই বিক্রি হওয়ার কথা জানালেন বিক্রেতারা।
শপিংমলের ছেলেদের পোশাক ব্র্যান্ড ব্রাদারহুডের স্বত্বাধিকারী নূর ইসলাম রনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এই ঈদে পোশাকের সংগ্রহ বেশি আবার বিক্রিও ভালো। এছাড়া আমাদের এখানে শুধু ঈদের মৌসুমেই নয়, সারা বছরই ছেলেদের পোশাকের বিক্রি বেশি হয়।’
মৌসুম ছাড়া স্বাভাবিক সময়েও ভালো বিক্রি বেশি হওয়ার ব্যাখ্যা দিয়ে নূর ইসলাম রনি আরও বলেন, ‘আমাদের এখানে পোশাকের দাম কম রাখা হয়, আবার কাপড়ের মানও ভালো থাকে। ফলে সারা বছরই অন্যান্য মার্কেটের তুলনায় এখানে বেশি বিক্রি হয়।’
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে নাজেহাল রাজধানীবাসী ঈদের মার্কেট কম করছেন। ব্যয় কমানোর প্রভাব পড়েছে এই মার্কেটেও। গত ঈদের তুলনায় এবার বিক্রি কমে গেছে বলে জানান বিক্রেতারা।
ফাতেমা’স কালেকশনের পরিচালক ফয়সাল হক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এই মার্কেটে ১০ বছর ধরে আছি। গতবারের তুলনায় এবার বিক্রি অর্ধেক কমে গেছে। সব জিনিসেরই দাম বাড়ছে। মানুষের হিসাব করে কেনাকাটা করতে হচ্ছে।’
পুরুষের পোশাকের ভালো বিক্রি হলেও নারী ও শিশুদের ফ্লোরে ক্রেতার আনাগোনা কম। ক্রেতারা মূলত দোকানগুলোর অনলাইন পেইজ দেখে এখানে সরাসরি কিনতে আসেন। তবু বিক্রিও কম।
ফেমিজ ফ্যাশনের বিক্রয়কর্মী জুথী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের অনলাইন পেইজ আছে। সেখানে ফলোয়ার যারা আছে তারাই বেশিরভাগ এখানে কিনতে আসে।’
অন্তু বুটিকের বিক্রয়কর্মী তানহা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মার্কেটে মেয়েরা কম আসে। আমাদের অনলাইনের কাস্টমাররাই পোশাক কিনতে আসে।’
এই শপিংমলের পাশে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা একটি মার্কেট নতুন করে খোলা হয়েছে। এ কারণে এই মার্কেটের ক্রেতা কমে যাওয়ার আশঙ্কা নেই বলে জানান বিক্রেতারা।
এ বিষয়ে ব্রাদারহুডের স্বত্বাধিকারী নূর ইসলাম রনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘যতই নতুন মার্কেট আসুক না কেন আমাদের মার্কেটের মতো নতুন কালেকশন আর পরিচিতি তৈরি করতে সময় লাগবে।’
নারী ও শিশুদের পোশাক কম বিক্রি হওয়ায় শপিংমলটি নিয়ে নতুনভাবে ভাবছে কর্তৃপক্ষ। এ শপিংমলের জেনারেল ম্যানেজার মো. কামাল হোসাইন চৌধুরী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের এখানে পুরুষের আইটেমগুলো বেশি বিক্রি হয়। কিন্তু নারী ও শিশুদের পোশাকের বিক্রি কম। তাই আমরা নতুন করে শপিংমলটি সাজাবো। নারী ও শিশুদের পোশাকের ফ্লোর বাদ দিয়ে সেখানেও পুরুষের আইটেম নিয়ে আসবো।’
চলন্ত সিঁড়িতে সমস্যা থাকায় কয়েকটি ফ্লোরে কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে সেগুলো মাড়িয়ে চলতে ক্রেতাদের কষ্ট হচ্ছে।
তবে এ বিষয়ে জেনারেল ম্যানেজার মো. কামাল হোসাইন চৌধুরী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের টেকনিক্যাল সব সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে। তবে নিয়ম অনুযায়ী চলন্ত সিঁড়ি দিনের নির্দিষ্ট একটি সময় কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ রাখা হয়।’
নারী ও শিশুদের পোশাক কম বিক্রির কারণ জানিয়ে কামাল হোসাইন বলেন, ‘আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখেছি নারীরা সাধারণ শুধু পোশাক কেনার জন্য আসেন না। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে যে সাজ-সরঞ্জাম রয়েছে সেগুলোও কিনে থাকেন। পাশাপাশি গৃহস্থালীর বিভিন্ন আইটেমও কিনে নিয়ে যান। কিন্তু আমাদের এখানে পোশাকের সুবিধার পাশাপাশি অন্য সুবিধা না থাকায় নারী ক্রেতা কম।’
(ঢাকাটাইমস /০৩এপ্রিল/টিএ/কেএম)

মন্তব্য করুন