‘সোমালিয়ায় জিম্মি বাবা, আমাদের জীবনের সবচেয়ে কষ্টকর ঈদ’

চাটখিল (নোয়াখালী) প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ০৯ এপ্রিল ২০২৪, ২০:১৩ | প্রকাশিত : ০৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯:৫৯
সোমালিয়ায় জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজের ইঞ্জিন ফিটার সালেহ আহমেদের তিন কন্যা

‘রোজা ৩০টা সম্পূর্ণ হলে ঈদের বাকি মাত্র একদিন অথচ বাবা এখনো জলদস্যুদের হাতে জিম্মি। বাবাকে ছাড়া এই ঈদ আমাদের পরিবারের জন্য জীবনের সবচেয়ে কষ্টের ঈদ হবে।

ভারাক্রান্ত গলায় এমনটাই বলছিল, ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি থাকা মো. সালেহ আহমেদের (৪৮) বড় মেয়ে রিয়াজুল জান্নাত তাসফি (১৪)।

তিন কন্যা সন্তানের জনক সালেহ আহমদ জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজের ইঞ্জিন ফিটার কর্মরত। বড় মেয়ে তাসফি স্থানীয় চাটখিল পাঁচগাও উচ্চবিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। তাসফির চোখে মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। বাবা কবে মুক্ত হবেন— এই প্রশ্ন তার চোখে মুখে। বাবা দ্রুত মুক্ত হয়ে ফিরবেন; এমনটাই প্রত্যাশা তার। ভালো পড়াশোনা করে ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছে জানিয়ে তাসফি জানায়, বাবা জিম্মি হয়ে যাওয়ার পর থেকে পড়াশোনায়ও আর মন দিতে পারছে না এই মেধাবী শিক্ষার্থী।

তাসফি ঢাকা টাইমসকে বলে, বাবা ঈদের আগেই ফিরবেন বলে আশা করছিলাম। ফিরে আসেনি দেখে খুব খারাপ লাগছে আমাদের। আপনারা সবাই আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন।

একই বিদ্যলয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ফাহমিদা আক্তার ফাইজা (১২) সালেহ আহমেদের মেঝো মেয়ে। বয়সের কারণে এবং বাবা বেশিরভাগ সময় জাহাজে থাকেন বলে বাবার অনুপস্থিতি তেমনটা টের পাচ্ছে না সে। ঘরের বড়দের কান্নাকাটি দেখে সেও মন খারাপ করে, কান্না করে। বাবার কথা জানতে চায়।

ছোট মেয়ে হাফসা বিনতে সালেহর বয়স মাত্র তিন বছর। তেমন কিছু বুঝতে না পারলেও ঘরের অন্যদের মলিন মুখে অপলক চেয়ে থাকে মেয়েটি।

অপহৃত মো. সালেহ আহমেদ নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার নোয়াখলা ইউনিয়নের সিংবাহুড়া গ্রামের মুন্সি বাড়ির মৃত সাখাওয়াত উল্লাহর ছেলে। চার ভাই এক বোনের মধ্যে মো. সালেহ আহমেদ সবার বড়। সোমবার (৮ এপ্রিল) তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় নিস্তব্ধ হয়ে আছে পুরো ঘর।

স্ত্রী তানিয়া আক্তারের সঙ্গে শনিবার (৬ এপ্রিল) সর্বশেষ কথা হয়েছিলো সালেহ আহমেদের। তারা সবাই সুস্থ আছেন ভালো আছেন। তার স্ত্রীকে এমনটা জানিয়েছিলেন তিনি। এরপর আর যোগাযোগ হয়নি।

স্ত্রী তানিয়া আক্তার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কোম্পানির লোকজন নিয়মিতভাবে খোঁজ খবর নিচ্ছেন। এতোদিন ঈদের আগে মুক্ত হবেন বলে আশায় ছিলাম। এখন আবার খুব টেনশন হচ্ছে৷ সে মুক্ত হবার আগে আমাদের দুশ্চিন্তা কিছুতেই কমবে না। দিনদিন বেড়েই চলেছে।’

এই শঙ্কার মধ্যেও নিজের জন্য এখনো কিছু না নিলেও বাচ্চাদেরকে ঈদের নতুন জামা-কাপড় কিনে দিয়েছেন মো. সালেহ আহমেদের স্ত্রী তানিয়া আক্তার।

নোয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ঢাকা টাইমকে বলেন, ‘জিম্মিদের মধ্যে নোয়াখালী জেলার যে দুইজন রয়েছেন; আমরা সার্বক্ষণিক তাদের পরিবারের খোঁজ-খবর নিচ্ছি। আশা করি ঈদের পরপরই আমরা তাদের পরিবারকে সুসংবাদ দিতে পারবো।’

২৩ জন জিম্মি হওয়া বাংলাদেশি নাবিকের মধ্যে দুই জনের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলায়। অ্যাবল সিম্যান হিসেবে কর্মরত মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক রাজুর (২৯) বাড়ি কোম্পানীগঞ্জ ও ইঞ্জিন ফিটার পদে কর্মরত মো. সালেহ আহমেদে বাড়ি চাটখিল উপজেলায়।

মো. সালেহ আহমেদের চাচাতো ভাই মনির হোসেন সোহেল ঢাকা টাইমসকে বলেন, তার অপহরণের খবর শুনে এলাকার সবাই কান্নাকাটি করছিলো। এই রমজানে আমরা প্রতিবেশি হিসেবেও তাকে নিয়ে শঙ্কায় কাটিয়েছি। তবে সালেহ ভাই ভালো আছেন সুস্থ আছেন; এটা ভালো খবর। আর তিনি শীঘ্রই ছাড়া পাবেন। এটাই আমার প্রত্যাশা করছি।

সোমালিয়ায় জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজের ইঞ্জিন ফিটার সালেহ আহমেদগত ১২ মার্চ (মঙ্গলবার) বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টার দিকে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহতে জিম্মি আছেন ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিক ও ক্রু। জাহাজটি ৪ মার্চ আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর ছেড়ে আসে। ১৯ মার্চ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। তার আগেই এর দখল নেয় জলদস্যুরা।

এমভি আব্দুল্লাহ দেশের শীর্ষ শিল্প গ্রুপ কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজ। প্রথমে জাহাজটির নাম ছিল ‘গোল্ডেন হক’। বাংলাদেশের কেএসআরএম গ্রুপের বহরে যুক্ত হওয়ার পর এর নাম হয় ‘এমভি আবদুল্লাহ’। এটি একটি বাল্ক কেরিয়ার।

(ঢাকাটাইমস/০৯এপ্রিল/প্রতিনিধি/এসআইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :