কোথা সে ছায়া সখি কোথা সে জল

দিকে দিকে আজ নারীর জয়জয়কার। শিক্ষাক্ষেত্রে, কর্মক্ষেত্রে পুরুষকে টপকে যাচ্ছে নারী। নারীর হাজার বছরের লাঞ্ছনা, বঞ্চনার ইতিহাস ক্রমশ মুছে যাচ্ছে। নারী আজ তার অধিকার আদায়ে সোচ্চার। তারা স্বাবলম্বী হয়েছে, আত্মনির্ভরশীল হয়েছে। এর মধ্যে গভীর সত্যটা আসলে কী? সে আত্মনির্ভর নাকি বিচ্ছিন্নতাবোধে আক্রান্ত?
দেশে বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৮ কোটি। ২০২৩ সালের অর্থসমীক্ষা অনুযায়ী নারী ও পুরুষের অনুপাত ১০০ : ৯৮.১ । সংখ্যারৈখিকে যেমন নারীর অনুপাত বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি সমাজে এবং জাতীয় জীবনেও নারীর ভূমিকা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সাথে বাড়ছে মূলধারার জীবন থেকে বিচ্ছিন্নতাবোধ। বৈধব্য, বিবাহ বিচ্ছেদ, স্বামী কর্তৃক পরিত্যাগ, বিবাহের প্রতি মেয়েদের অনীহা এসব কারণে নারী মূলধারার জীবন থেকে ছিটকে পড়ছে।
দারিদ্র্যসীমার ভেতরে অথবা নিম্নে থাকা নারীকে প্রথম ঘর থেকে বাইরে আনার কৃতিত্ব এনজিওর। এরপর গার্মেন্টস শিল্পের। এনজিওগুলো সর্বপ্রথম নারীকল্যাণমূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। নারীর মাতৃত্ব, স্বাস্থ্য, শিশু স্বাস্থ্য, নারীশিক্ষা এরকম বেশকিছু কর্মসূচি গ্রহণ করে। এনজিওগুলোতে চাকরির ক্ষেত্রেও নারীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। আশি-নব্বইয়ের দশকে গার্মেন্টস শিল্পের বিকাশের যুগে মিল কারখানাগুলোতে পুরুষ অপেক্ষা নারী কর্মীদের অধিক নিয়োগ দেওয়া হতো। ফলে দরিদ্র নারীরা নিজেকে স্বাবলম্বী করার সুযোগ পায়। অনূঢ়া, তালাকপ্রাপ্তা, স্বামী পরিত্যক্ত, নির্যাতিত নারীদের একটা গতি হয়।
গার্মেন্টসে চাকরি করা মেয়েদের কেউ বিয়ে করতে চায় না- সাধারণত গার্মেন্টস কর্মীদের মধ্যেই বিবাহসম্পন্ন হয়; এমন ধারণা ও মানসিকতারও পরিবর্তন হয়েছে। গার্মেন্টসে সাধারণত বিভিন্ন জেলার লোকজন কাজ করতে আসে। নিম্নবিত্ত এসব নারী-পুরুষের যাপিত জীবনে অনেক নেতিবাচক বিষয়ও ঘটে থাকে। গ্রামে স্ত্রী, সন্তান পরিবার রেখে এখানে এসে আবার বিয়ে করে অনেকে। এভাবে কেউ কেউ দুই তিনটা বিয়ে পর্যন্ত করে ফেলে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এরা বউ-বাচ্চা ফেলে অন্যত্র চলে যায়। এই মেয়েদের সাধারণত আর বিয়ে হয় না। এরা নিজেরাই সন্তান প্রতিপালন করে। আবার গার্মেন্টসে কাজ করা অনেক অবিবাহিত মেয়ের বিয়ে হয় না। এরা বাবা-মাকে দেখাশোনা করে, ভাই-বোনের পড়াশোনার খরচ চালায়। বোনের বিয়ে দেয়, ভাইয়ের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়। অনেক ক্ষেত্রে তার পরিবারও চায় না মেয়েটির বিয়ে হোক।
বাসা বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে এদের বেশিরভাগ নারীই স্বামী পরিত্যক্ত। অথবা শ্বশুর বাড়িতে নির্যাতিত হয়ে ছেলেপুলে নিয়ে বের হয়ে এসেছে। এদের ছাড়াও বিভিন্ন পেশার সাথে যুক্ত নিম্নবর্গের নারীরা অধিকাংশই বিবাহ বিচ্ছেদপ্রাপ্ত বা দাম্পত্যবিচ্ছিন্ন জীবন কাটায়। এসকল পরিবারে নারীরাই প্রধান হয়ে ওঠে। পরিবারের সমস্ত দায়িত্ব তাকে কাঁধে নিতে হয়।
মধ্যবিত্ত শিক্ষিত নারী-পুরুষের সাথে প্রতিযোগিতা করেই বাইরে এসেছে। শ্বশুরবাড়ির দাসত্ব তারা মানতে চায়নি। শিক্ষিত হয়ে কেন গোলামী করবে, কেন নিপীড়িত হবে। এখন তো যৌথ পরিবার নাই। নারী পুরুষ একক পরিবার গঠন করছে। নারী-পুরুষ দুজনেই কোনো না কোনো পেশার সাথে জড়িত।
আজকাল শিক্ষিত মেয়েরা উচ্চাকাক্সক্ষী। তারা সাধারণত উন্নত পেশার সাথে সংশ্লিষ্ট। আজকাল অনেক স্বাবলম্বী মেয়ে বিয়ের প্রতি অনাগ্রহী। তারা যা উপার্জন করে তাতে চমৎকার জীবনযাপন হয়। সেই সাথে পরিবারকে সহযোগিতা করতে পারে। তারা বিয়েকে অপরিহার্য মনে করে না। তাদের এই অনাগ্রহের পেছনে রয়েছে চারপাশের ক্রমবর্ধমান দাম্পত্যসংকট, বিবাহ- বিচ্ছেদের আধিক্য। এই ব্যাপারগুলো তাদের নিকট বিবাহকে ভীতিজনক করে তুলেছে।
বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়ে যাচ্ছে আমাদের সমাজে। বিশেষ করে শিক্ষিত, চাকরিজীবী নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে বেশি ঘটছে। দাম্পত্য জীবনের একটা বিশেষ সময়ে এসে এই সংকটগুলো দৃশ্যমান হচ্ছে। সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টিগতভাবেই নারী এবং পুরুষকে আলাদা বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন এবং সংসারে তাদের দায়িত্বও আলাদাভাবে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে সেখানে দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা।
চাকরিজীবী নারীদের বিবাহবিচ্ছেদ সাধারণত ৩৫-৪০ বছরের মধ্যে হয় এবং যখন তাদের সন্তানেরা শিশুকাল পেরোয় না। এই সময়ে এসেই দূরত্ব সৃষ্টি হয়। পুরুষ তার নিজের প্রয়োজনেই স্ত্রীকে কর্মক্ষেত্রে বের করে। যার মূলে রয়েছে আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য। আবার সে যখন গৃহে অবস্থান করে তখন তার সেবাদাসী দরকার হয়। পুরুষের জন্ম হয়েছে সেবা নেওয়ার জন্য, দেওয়ার জন্য নয়। তাই পুরুষ নারীর মধ্যে বহুমাত্রিক চাহিদা খোঁজে। অর্থ উপার্জনের সহযোগী, দাসী, সেবিকা, প্রেমিকা। কিন্তু ঘরে বাইরের জাঁতাকলে স্ত্রী তার প্রেমিকা সত্তাটা কবেই হারিয়ে ফেলে। যখন সবগুলো ভূমিকা পালন করতে গিয়ে সে নিঃসাড় হয়ে যায় তখন শুরু হয় ভাঙনের খেলা।
ইদানীং শোনা যায় বিবাহিত নারী- পুরুষের অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা। এর পেছনেও প্রধান কারণ নারী- পুরুষের নিজস্ব দায়িত্বের জায়গাকে অবহেলা এবং নিজস্ব দায়িত্বের জায়গা থেকে সরে আসা।
সত্যিকার অর্থে নারী লোহার শিকল থেকে বেরিয়ে সোনার শিকল পরেছে। নারীর স্বাধীনতা এর চেয়ে বেশি নয়। নারী মুক্তি, নারী স্বাধীনতার ধুয়ো তুলে আসলে নারীকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। নারীকে বাইরে আনা হয়েছে, তার অধিকার দেওয়া হয়েছে কিন্তু তার অধিকার রক্ষায় কতখানি সমর্থন সে পেয়েছে? নারীর প্রতি পুরুষের দায়িত্ব-কর্তব্য প্রতিষ্ঠিত না হলে কোনোদিনও নারী তার নিজস্ব স্থানে অধিষ্ঠিত হতে পারবে না।
এই যে দাম্পত্য বিচ্ছিন্ন নারীর ক্রমবৃদ্ধি; সমাজ এই বিচ্ছিন্ন নারীদেরকে বাহবা দেয়। সমস্ত সংকট মোকাবিলা করে এরা ছেলেমেয়ের জন্য, পরিবারের জন্য প্রাণপাত করে। পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখে। এতো গেল বহিরঙ্গের ব্যাপার। অভ্যন্তরের ছবিটা কেমন?
দিনের শেষে আর্থিক, মানসিক সমস্ত চাপ এই নারীদের ওপরই। এর সাথে রয়েছে সামাজিক চাপ। উনিশ শতকের বাংলা কথা সাহিত্যে আমরা প্রায়ই পিসি চরিত্র পাই। এই পিসিরা বিধবা ছিল নয়তো কৌলিন্য প্রথার শিকার কুলীন ব্রাহ্মণের কন্যা ছিল। সারাজীবন বাপ, ভাই অথবা ভাইয়ের ছেলের সংসারে কাটিয়ে দিতো। আশ্রিতা হয়ে, বোঝা হয়ে। পরিবারের ছোটো শিশুদের লালন পালন করা, গৃহস্থালির কাজে সাহায্য করাই ছিল তাদের কাজ। নিজস্ব কোনো জীবন, কোনো আশা আকাক্সক্ষা তাদের ছিল না। আজকের এই বিচ্ছিন্ন নারীরা কিছুটা তাদের মতোই জীবন কাটিয়ে দেয়। সমাজ এই নারীদেরকে প্রশংসায় আচ্ছাদিত করে রাখে। যাতে এরা খোলসের বাইরে বের হতে না পারে। ব্যক্তিগত সুখ-সুবিধা বিসর্জন দেয়। পুরুষ যেখানে প্রধান, পুরুষ যেখানে নিয়ন্ত্রক সেখানে নারীকে পুরুষের ওপরই নির্ভর করতে হয়। হয় বাবা, নয় ভাই, নয়তো পুত্র বা পুত্রস্থানীয় কারো ওপর।
এই মহিলাগণ প্রতিনিয়ত কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হয়। এক্ষেত্রে নিম্নবিত্ত মধ্যবিত্ত বলে কথা নেই। যার যার অবস্থানে তাকে লড়তে হয়। নিম্নবিত্ত নারীদের অবস্থা আরও সংকটজনক। প্রতিনিয়ত দারিদ্র্যের সাথে লড়াই সেই সাথে যুক্ত হয় আশেপাশের লোকজনের অশালীন ইঙ্গিতপূর্ণ হাতছানি। নানান কৌশলে তারা উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায়। অনেক সময় এগুলো এড়ানো কঠিন হয়ে পড়ে। জীবন সংকটাপন্ন হয়ে ওঠে। কিন্তু মধ্যবিত্ত শিক্ষিত বিধবা অথবা বিবাহবিচ্ছেদ প্রাপ্ত নারীদের চিত্র একটু আলাদা। তাদের অনেকের অবস্থান ভালো থাকায় সরাসরি কেউ কিছু বলতে পারে না। এখানে পুরুষের লালসা অনেকটা সরীসৃপের মতো আসে। কৌশলটা ভিন্ন। গায়ে পড়ে সহানুভূতি দেখানো, অযাচিত সহমর্মিতা প্রকাশ করতে আসে যখন-তখন। দুঃখটাকে তার সামনে আয়নার মতো প্রতিফলিত করে। তারা বন্ধু হতে চায়, সুখ-দুঃখ ভাগ করতে চায়। এই অপশক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হয়। এগুলো কেউ প্রকাশ করতে পারে না। যেহেতু মানসম্মান জড়িত এর সাথে। বিবাহ বিচ্ছেদপ্রাপ্ত নারীদের সম্পর্কে আমাদের সমাজদৃষ্টি অত্যন্ত নীচু।
এই দুঃস্থ, বিচ্ছিন্ন নারীদেরকে শুধুমাত্র ভোগের সামগ্রী মনে করে পুরুষ। এদেরকে কখনো তারা ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে না। এরা এদেরকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে বিয়ে করতে চায় না। অথচ ভোগ করতে চায়। অনেক পুরুষ আছে যারা অসুস্থ স্ত্রী নিয়ে সংসার করে। তারাও নিজেদের প্রয়োজনে আরেকটা বিয়ে করতে পারে না। এরাও এই নারীদের কাছে ভিড় করে। তারা গোপনে বিয়ে করতে চায় এবং বিয়েটা সমাজে গোপন রাখতে চায়।
আমাদের সমাজে এখন বিয়ে দায়িত্ব পালনের ভিত্তিতে হয় না। সেখানে ভিত্তি হয় প্রেম ভালোবাসা এবং বিশ্বাস। নোভেল, নাটক আর সিনেমা শিখিয়েছে আমাদের এই তথাকথিত প্রেম আর বিশ্বাস। এই প্রেম আর বিশ্বাসের ভণিতা করে দাম্পত্য জীবনে নারী-পুরুষের দায়িত্ব পালনের দায়বদ্ধতা শিথিল হয়ে যায়। অথচ যেখানে দায়িত্ব পালনই বিশ্বাস এবং প্রেম জন্ম দেয়। অনেক ক্ষেত্রেই লোক দেখানো প্রেম ভালোবাসার জন্য পুরুষরা দ্বিতীয় বিবাহ করতে পারে না।
আমার আশেপাশে প্রায় পনেরো জন মহিলা আছে ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সের মধ্যে। যারা দাম্পত্য সম্পর্কবিচ্ছিন্ন। আমি ওদের নিয়ে ভাবি। ওদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবি। ওদের সাথে কথা বলি। কেউ বসে থেকে কারো অন্ন ধ্বংস করে না। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতায় জীবন আকীর্ণ। সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে তারা নিঃসঙ্গ। বহু বিবাহ নিন্দনীয়। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তো পুরুষকে দুইটা, তিনটা, চারটা বিয়ে করার অনুমতি দিয়েছেন। আজ যদি এটা আইনীভাবে কার্যকর হতো তবে পুরুষের লোলুপ দৃষ্টি অসহায় নারীদেরকে লেহন করত না। অপরিহার্য প্রয়োজনে সে আরও দুই একটা বিয়ে করতে পারত। অনেক অসহায় দুঃস্থ নারী নিরাপত্তা লাভ করতো, অবলম্বন পেতো। এক নারী নিয়ে সংসার করতে করতে পুরুষদের এমন অরুচি ধরে যায় তার প্রমাণ পাওয়া যায় কেউ বিপত্নীক হলে। বিয়ে বিচ্ছেদপ্রাপ্ত পুরুষ বা বিপত্নীক ৪০-৫০ বছরের বয়সের হলেও সে আবার বিয়ের জন্য অষ্টাদশী কুমারী খোঁজ করে। তখন আর সে ৩০-৩৫ বছর বয়স-এর ধারে কাছে যায় না।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর জন্য নিয়ম-কানুন তৈরি করেছে পুরুষ। পরিবারে এবং সমাজে সেসকল অনুশাসন বাস্তবায়ন করে নারীরা। দুইশ’ বছর আগেও যেমন বিধবা নারীদের বিয়ে সমাজ মানত না; আজও বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত নারীদের বিয়ে সমাজ মানতে চায় না। একজন পুরুষ একলা হলে তার জন্য সবাই উৎকণ্ঠিত হয়ে ওঠে, পুরুষ মানুষ কীভাবে একা থাকবে। কিন্তু নারীর বেলায় কী বলে? যা কপালে ছিল হয়েছে, এখন আর কী করবে? বাচ্চাগুলারে মানুষ কর ইত্যাদি ইত্যাদি। বাস্তব কথা হচ্ছে এগুলো থেকে পরিত্রাণের উপায় নেই। কেননা শিশু সন্তানের দায়িত্ব মাকেই পালন করতে হয়। কেউ তার শিশুদের দায়িত্ব নিবে না। পিতা তার পুত্র-কন্যাকে ফেলে আরেকটা বিয়ে করলেও সমাজ কিছুই মনে করে না। কিন্তু মায়ের ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয় এবং সমাজও তা মানতে চায় না।
সমাজে নারীর যৌনতাকে কখনোই স্বীকৃতি দেওয়া হয় না। নারীর যৌনতার স্বীকৃতি হয় পুরুষের চাহিদার ভিত্তিতে। পুরুষ কীভাবে তাকে কামনা করে সেই ভিত্তিতে। তাই সমাজ নারীদেরকে এমন প্রশস্তিগাথার জালে আবদ্ধ রাখে সেখান থেকে নারী বেরিয়ে আসতে পারে না। নারীর আত্মত্যাগকে মহত্ত্ব দান করে। যাতে সে নিজের জীবন সম্পর্কে, অধিকার সম্পর্কে ভাবতে না পারে। নারীকে দেবাংশী করে তোলে পুরুষ। আবার সেই জাল থেকে সামান্য বেরিয়ে এলে তাকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
দেখো নারী, পুরুষ তোমাকে স্বাধীনতা দিবে, বাইরে বের করবে, তোমাকে একলা ছেড়ে দিবে। কোনো সমস্যা নাই। তুমি ইভ টিজিংয়ে পড়ো, তুমি ধর্ষিত হও। দেখো তোমার স্থান কোথায়। তুমি হচ্ছো ঘুড়ি, নাটাই পুরুষের হাতে। তার দেওয়া স্বাধীনতার সামান্য ব্যত্যয় ঘটাবে, তোমাকে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করবে। আমাদের প্রথাগত সামাজিক বাস্তবতায় এটাই সত্যি।
সময়ের মতো সময় চলে যায়। ছেলে-মেয়ে বড়ো হয়। তাদের আলাদা সংসার হয়। সংসারের ঘানি টানতে টানতে অবসন্ন শরীর। কারো আবার ছেলে মেয়েও থাকে না। একাকিত্ব আর ভারাক্রান্ত মন। এটাই বিচ্ছিন্ন নারীদের প্রাপ্তি।

মন্তব্য করুন