কান ধরিয়ে বিচার কাজ সমাধা কি আইনের সঠিক প্রয়োগ!

মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম
 | প্রকাশিত : ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৩:২০

সম্প্রতি আরও আরেকটি কান ধরানোর বিচার দেখতে পেল বাংলাদেশের জনগণ। যদিও কান ধরানোর বিচার নতুন কোনো ঘটনা নয়। মূলত এই ধরনের বিচার শুরু হয়েছে ১-লা নভেম্বর ২০০৭ খ্রি.-এর পর থেকে। তার কারণ হলো- বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেসি যখন নির্বাহী তথা প্রশাসন বিভাগ থেকে একবারে পৃথক হয়েছিল তখন থেকে মোবাইল কোর্ট আইন-২০০৯ নামে নতুন একটি আইন প্রণয়ন করে নির্বাহী বিভাগ। তার পিছনের কারণ খতিয়ে দেখলে দেখা যায়- কোনোভাবেই বিচার বিভাগ বা বিচারিক হাকিম আদালত পৃথক হোক বা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পুরোপুরি নিশ্চিত হোক তা প্রশাসনের কর্তাব্যাক্তিরা চাননি। কেননা প্রশাসনে কর্মরত থাকা চাকরিজীবীগণ মনে করেন বিচারিক ক্ষমতা না থাকলে তাদের দেওয়া আদেশ-নিষেধ জনগণ মানবে না। ফলে তারা সরকারকে ভুল বুঝিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন-২০০৯ নামে নতুন করে বিচার বিভাগের আদলে সমান্তরাল বিচারব্যবস্থা চালু রেখেছে। কিন্তু সমস্যা হলো যারা নির্বাহী আদালতের হাকিম বা এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বলে আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তোলেন তারা কেউ আইনের ছাত্র নয়- ফলে ক্ষেত্রবিশেষে তারা অনেক সময় বিচারের নামে অবিচার ঘটিয়ে বসে। এই যেমন কান ধরিয়ে বিচার শেষ করা বা মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া বা শিশু আইন বলবৎ থাকা স্বত্ত্বেও শিশু আসামীদেরকে মোবাইল কোর্ট আইনে সাজা প্রদান করা ইত্যাদি।

কৃষি বা ডাক্তারদের মন্ত্রণালয় বা সচিবালয়ের প্রধান যখন একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বা ভিন্ন কোনো বিষয়ে পড়া মানুষ হয় তখন কী অবস্থা হয় একবার চিন্তা করে দেখুন। বিচার মানে সেখানে অপরাধ থাকবে এবং তা প্রমাণ হলে হয় সাজা, না হলে খালাস হবে। সেখানে শাস্তি বা পানিশমেন্টের থিওরি রয়েছে বা কখন কোন সাজা দিতে হবে বা কেন সাজা দিতে হবে সেসব পড়ানো হয়। আইন বিষয়ে অধ্যায়ন না করলে সাধারণত অন্যান্য বিষয়ে পড়াশোনা করলে শাস্তির মূলনীতি কী বা শাস্তির থিওরি কী এগুলো জানা হয় না। তাই একথা সাধারণ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ সহজে অনুমান করতে পারে যে- আইন না পড়ে যখন একজন ব্যক্তি নির্বাহী হাকিম বা ইউএনও হয় তখন তাকে দিয়ে কান ধরিয়ে বিচার করা অসম্ভব কোনো কাজ নয়। কারণ আইন না জানলে এমন বিচার যে হবে তা সহজেই অনুমেয়। এবার আসি মূল ঘটনায়।

ঈদের দিন গত ১১ই এপ্রিল ২০২৪ খ্রি. তারিখে শরীয়তপুরে জেলা প্রশাসন পরিচালিত একটি পার্কে টিকিট ছাড়া প্রবেশ করায় পাঁচ শিশুকে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। তাদের বয়স ১০ থেকে ১৪ বছর। কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকা শিশুরা কাঁদতে থাকে। যাদের বয়স ১০ বছরের নিচে, তাদের কাছ থেকে পার্কে প্রবেশের টাকা রেখে ছেড়ে দেওয়া হয়। আর যাদের বয়স ১৩ বছরের ওপরে, এমন দুজনকে আটকে রাখা হয়। রাত সাড়ে নয়টার দিকে পার্ক বন্ধ করার সময় গ্রাম পুলিশ সদস্যরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তখন ওই দুই শিশু তাদের চোখ এড়িয়ে পার্ক থেকে বের হয়ে যায়। এই খবর বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়ও আসে।

এ বিষয়ে প্রথম আলোতে ফলাও করে খবর ছাপা হয় এবং সম্পাদকীয়তে খবর আসে যে, ‘ইউএনওর কাজ কি শিশুদের কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখা’ লেখাটি আমার নজরে আসে। আমি দু’তিনবার খবরটি পড়ি। পড়ে এটা মনে হয়েছে- পাঁচ শিশুকে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখার ঘটনাটি কোন ধরনের অপরাধের বিচার বা এই বিচার আইনে কোথাও রয়েছে কি না বা ইউএনও যে আইন ফলো করে বিচার করে সেই আইনে এই ধরনের বিচারিক প্রক্রিয়া বা বিচারের ফলাফল সমর্থন করে কি না। যদি কোনো আইনে না থাকে তাহলে এই কান ধরিয়ে বিচার সমাধা করার বুদ্ধি ইউএনও সাহেবকে কে দিল; না কি তাকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে মাঠে নামানো হয়নি বা তার আইনী জ্ঞানের প্রচণ্ড অভাব; না কি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ বিচারের নামে স্বেচ্ছাচারিতা করছেন ইত্যাদি নানান প্রশ্ন মনে উঁকি দিচ্ছে। তবে আমার মনে যে প্রশ্নই আসুক না কেন তা সমাধানের কোনো পথ নেই। শুধু আমার কাছে নয়- খোদ প্রশাসনের নিকটেও সামধান নেই। তার কারণ- মোবাইল কোর্ট নামে সমান্তরাল বিচারব্যবস্থা চালু করলেও উক্ত বিষয়ে প্রশিক্ষণের জন্য মূলধারার বিচারকদের মতো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা ইউএনওদের পৃথক কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। যেটুকু রয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়- যদি প্রশিক্ষণ যথাযথ হতো তাহলে কান ধরিয়ে বিচার সমাধান করার ঘটনা বারবার ঘটতো না।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, সোমবার সন্ধ্যার পর পার্ক থেকে তাদের আটক করেন গ্রাম পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। পরে তাঁদের কান ধরে দাঁড় করানো হয়। সদর উপজেলা ইউএনওর নির্দেশ ও উপস্থিতিতে আটক শিশুদের এই শাস্তি দেওয়া হয়। শিশুদের কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখার ছবি তোলেন ও ভিডিও করেন পার্কে আসা দর্শনার্থীরা। এসব ছবি ও ভিডিওতে ইউএনওকে দেখা গেছে।

এ বিষয়ে ইউএনও সাহেব-এর বক্তব্য তুলে ধরার প্রয়োজন মনে করছি। ইউএনও বলেন যে- শিশুদের কান ধরিয়ে রাখার বিষয়টি তাঁর জানা নেই। কয়েকটি শিশু দেওয়াল টপকে পার্কে ঢুকেছিল। পাশে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা তাদের ধরে এনেছেন। ওরা দাঁড়িয়ে ছিল, ভয়ে হয়তো কানে হাত দিয়েছে। এটা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা মাত্র। ভয়ে কানে হাত দেওয়া আর কান ধরিয়ে রাখা এক কথা নয়। এখানেই ক্ষান্ত হননি ইউএনও। তিনি কান ধরা অবস্থায় শিশুদের উপদেশ দিয়ে বলেছেন, বিনা অনুমতিতে পার্কে ঢুকে তারা গর্হিত অপরাধ করেছে। এমন অপরাধ যেন তারা ভবিষ্যতে কখনো না করে।

প্রথম আলোর মতামত কলামে যুগ্ম-সম্পাদক ও কবি জনাব সোহরাব হাসান স্যার যথার্থই লিখেছেন যে- ইউএনও দেওয়াল টপকে পার্কে প্রবেশ করার মধ্যে অপরাধ দেখেছেন। কিন্তু শিশুদের অধিকারকে মূল্য দেননি। সরকারি পার্ক তো রাষ্ট্রীয় সম্পদ। যদি সেই পার্কে যাওয়ার সামর্থ্য শিশুদের না থাকে, রাষ্ট্রেরই উচিত তাদের সেখানে যাওয়ার ব্যবস্থা করা। ঢাকার শিশুপার্ক তো আগে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য খুলে দেওয়া হতো সপ্তাহে এক দিন। এখন আর পার্কটি খোলা নেই। সংস্কারের নামে কয়েক বছর ধরে বন্ধ আছে। একটি শিশু অভিযোগ করেছে, গার্ড তাঁকে দেওয়াল থেকে ঠেলে পার্কের ভেতরে ফেলে দিয়েছেন। এখানে শিশুটির অপরাধ কোথায়? এই অভিযোগের পর ইউএনওর উচিত ছিল গার্ডকে শাস্তি দেওয়া। তিনি সেটি না করে হর্ষচিত্তে শিশুদের কান ধরার দৃশ্য অবলোকন করলেন এবং তাদের সৎ হওয়ার পরামর্শ দিলেন।

ইউএনও একজন দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তা। তিনি উপজেলার প্রধান কর্মকর্তা। সে হিসেবে তাঁর জানা থাকার কথা, শিশুদের শাস্তি দেওয়া যায় না। এছাড়া বিদ্যালয়গুলোতেও নির্দেশনা দেওয়া আছে, তাদের যেন শারীরিক ও মানসিক শাস্তি দেওয়া না হয়। ১৮ বছরের নিচে যাদের বয়স, তাদের সবাইকে শিশু হিসেবে গণ্য করা হয় এবং তাদের শাস্তি দেওয়া যায় না। শিশুরা অপরাধ করলে তা শিশু আইন অনুযায়ীই বিচার হতে হবে। অথচ ইউএনও এবং ঐ পার্কের রক্ষীরা তাদের কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখলেন!

ইউএনওদের আইন হাতে তুলে নেওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। গত বছরের মার্চ মাসে বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শেখ মিজানুর রহমানকে থাপ্পড় দিয়েছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনোয়ার হোসেন। এ জন্য তাঁকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে লোকসমাগম যেন না হয় সে বিষয়টি দেখভালের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মনিরামপুর উপজেলার চিনাটোলা বাজারে অভিযানের সময় প্রথমে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে পড়েন দুই বয়ঃবৃদ্ধ। এর মধ্যে একজন বাইসাইকেল চালিয়ে আসছিলেন। অপরজন রাস্তার পাশে বসে কাঁচা তরকারি বিক্রি করছিলেন। তাদের মুখে মাস্ক ছিল না। তখন গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, পুলিশ ঐ দুই বৃদ্ধকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাস্তি হিসেবে তাদেরকে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখেন। তিনি নিজে (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) আবার মুঠোফোনে এ চিত্র ধারণ করেন। এরপর একজন বৃদ্ধ ভ্যান চালককেও অনুরূপভাবে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকার দণ্ড দেন। এসব ছবি দ্রুতই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

অনেকেই বয়স্ক নাগরিকদের এভাবে সাজা দেওয়াটাকে মেনে নিতে পারেননি সে সময়। এমন দণ্ড ভ্রাম্যমাণ আদালতকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। পাশাপাশি এই ছবি সরকারি ওয়েবসাইটে আপলোডের পর সংশ্লিষ্টদের মানসিক সুস্থতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটদের মোবাইল কোর্ট আইনের ক্ষমতা প্রয়োগে আরও প্রশিক্ষণ দরকার আছে কি না তা কর্তাব্যক্তিরা ভেবে দেখবেন। বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের এমন কাজ সকলেই ধিক্কার জানিয়েছিলেন সে সময়। মুরব্বিদের কান ধরিয়ে ছবি তুলে আবার প্রচার করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। মোবাইল কোর্ট আইন মেনে ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা প্রয়োগ হলো না কি করোনা ভাইরাস ছড়ানো রোধে সচেতনতা সৃষ্টি হলো সে বিষয়টি এখানে সুস্পষ্ট নয়। আগে ক্ষুধার্তদের খাবারের দায়িত্ব নেবে রাষ্ট্র, তাহলে কেউ রাস্তায় আসবে না। ঐ ছবিতে দেখা যায় যে- হাতে বাজারের ব্যাগ, তারা নিশ্চয়ই কেনাকাটার উদ্দেশ্যে বাজারে এসেছিল- করোনা ভাইরাস ছড়াতে নয়। কান ধরানোর দণ্ডের কথা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট স্বীকার করেন। তবে সরকারি ওয়েবসাইটে ঐ ছবি কেন দিলেন তা কিন্তু বোধগম্য হয়নি। তবে নাগরিকদের এভাবে কান ধরিয়ে দাঁড় করার বিষয়টি দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আহসান উল্লাহ শরিফী। তার উচিত পুরো বিষয়টি তদন্ত করে জড়িতদের শাস্তির ব্যবস্থা করা।

শিশুদের কান ধরানো বা বৃদ্ধদের কান ধারনোর ছবি বা উপজেলা চেয়ারম্যানকে থাপ্পড় দেওয়ার ছবি দেখে বা এরকম বিচারের কথা শুনে ও দেখে কেউ নিজের আবেগকে ধরে রাখতে পারবে না সেটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৫ (৫) অনুচ্ছেদ অনুসারে এ শাস্তি সম্পূর্ণ বেআইনি। এমন অরাজকতা ও বিচারের নামে কাউকে এ ধরনের অসম্মান মেনে নেওয়া যায় না। শাস্তি প্রদানকারী ঐ কর্মকর্তা যেই হোক তার বেআইনি কাজের শাস্তি দাবি করা যেতে পারে। বিচারে কখনও কাউকে কান ধরে উঠবস করাতে নেই। আইনের মধ্যে যতটুকু ক্ষমতা (দায়িত্ব) দেওয়া আছে, তার মধ্যেই বিচার কার্যক্রম সীমিত রাখা উচিত। একটা সার্ভিসের যদি কেউ আইনের বাইরে কোনো কাজ করে তার দায় সে নিজেই বহন করবে। যারা আইন ভঙ্গ করবে তাদের শাস্তি দেবে সার্ভিস এবং রাষ্ট্র। তবে এটা ঠিক আইনের বাইরে কাজ যে শুধু প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারাই করেন ব্যাপারটা এমন নয়। অনেক সার্ভিসের ব্যক্তিই এমন কাজ করে থাকেন। এ ব্যাপারটা এমন যে, পরিবারের অবাধ্য ছেলেটা অন্যের বাসার ফল চুরি করে, মারপিট করে এবং সে অপরাধ করলে সবাই বলে এটা স্বাভাবিক কিন্তু সবচেয়ে ভদ্র ছেলেটি যদি সামান্য অপরাধ করে তবেই হয়েছে। প্রত্যেক সার্ভিসেই এরকম কিছু ব্যক্তি আছেন। তারাই সমস্যা তৈরি করেন। এর দায় পুরো সার্ভিস নিবে না।

শিশুদের কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখা বা বৃদ্ধ কাউকে কান ধরানো চড়থাপ্পড়ের চেয়েও গুরুতর অপরাধ। এর মাধ্যমে শরীয়তপুর সদর উপজেলার ইউএনও ও তাঁর সহযোগীরা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন। ১৯৯০ সালে জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদে অনুস্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। সে অনুযায়ী শিশু আইন ২০১৩ প্রণীত হয়েছে। স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র হিসেবে কাগজে-কলমে অনেক উদ্যোগ নিলেও সামাজিক চর্চায় শিশুর অধিকার নিশ্চিত করা যায়নি, ইউএনওর কাণ্ডই তার প্রমাণ। শিশুরা কোনো অপরাধ করলে তার বিচার শিশু আইনে হবে। তড়িঘড়ি করে কান ধরিয়ে বিচার করতে চাইছে কেন ইউএনও সাহেব বা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা? কাউকে এভাবে শাস্তি দিলে যে সংবিধান বা বিদ্যমান মোবাইল কোর্ট আইন ও দেশের ফৌজদারী আইন সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করা হয় তা হয়তো তিনি বুঝতে পারেননি। যে ইউএনও বা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট বা বিচারক এই ধরনের ‘কান ধরানোর’ বিচার করলেন তিনি তো তার নিজের ক্ষমতা দেওয়া মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯ ভালো করে পাঠ করে আসতে পারতেন। সেটি তিনি না পড়েই বিচার কাজে নেমে গেছেন- যা ঠিক হয়নি। আইন জানা থাকলে মানতে ও প্রয়োগ করতে সুবিধা হয়। সেজন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণ জরুরি।

আইনে আছে সহস্র অপরাধী ছাড়া পায় পাক কিন্তু একজন নিরাপরাধ লোক যেন অন্যায়ভাবে শাস্তি না পান। বিচার করতে হলে এ বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হয়। বিচার করলেই শুধু হবে না এটাও দেখাতে হবে যে- সেখানে ন্যায় বিচার হয়েছে কি না। ভ্রাম্যমাণ আদালত বা মোবাইল কোর্টের বিচার অতঃপর ৫ জন শিশুকে বা সিনিয়র সিটিজেনকে কান ধরিয়ে দাঁড় করানো ও তার ছবি তোলার দৃশ্য বিদ্যমান ফৌজদারী বিচারের নীতির সাথে ঠিক যায় না। এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে না ঘটাই বাঞ্ছনীয়।

মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম: কলামিষ্ট ও আইন বিশ্লেষক

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :