ঈদ যাত্রায় সড়ক নিরাপত্তা: সমন্বিত উদ্যোগেই দুর্ঘটনা প্রতিরোধ সম্ভব

তামান্না মিজান
  প্রকাশিত : ০১ জুন ২০২৫, ১৩:৫৫| আপডেট : ০১ জুন ২০২৫, ১৪:০২
অ- অ+

আসছে ঈদুল আজহা। বাংলাদেশে গত ২৬ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিলের মধ্যে ১১ দিনের ঈদুল ফিতরের ভ্রমণের সময়কালে বাংলাদেশে ২৫৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ২৪৯ জন নিহত এবং ২,০০০ এরও বেশি আহত হয়েছেন (রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের সংকলিত তথ্য অনুসারে)। আসন্ন ঈদুল আজহায় সড়ক দুর্ঘটনারোধে একটি সমন্বিত সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন জরুরি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি পথচারী, সাইকেল ও মোটরসাইকেল আরোহী। তাই সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত কমাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সড়ক নিরাপত্তা আইনু জরুরি হয়ে পড়েছে। প্রসঙ্গত, বিশ্বজুড়ে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সড়কে অকালমৃত্যু কমিয়ে আনার লক্ষ্যে জাতিসংঘ প্রতি দুই বছর পরপর সড়ক নিরাপত্তা সপ্তাহ পালন করে থাকে। এবার সপ্তাহটির প্রতিপাদ্য ছিল জীবনের জন্য সড়ক হাঁটা ও সাইকেল চালানো নিরাপদ করা। বিশ্বের অন্যতম জনবহুল শহর ঢাকায় যানজট একটি মারাত্মক সমস্যা। এই সমস্যার কারণে দৈনিক ব্যাপকভাবে কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। এক্ষেত্রে হাঁটা ও সাইকেল চালানো একটি ভালো সমাধান হতে পারে। এজন্য প্রয়োজন পথচারী ও সাইকেলবান্ধব নিরাপদ সড়ক অবকাঠামো এবং তা নিশ্চিত করা। বিশেষ করে ঈদের মতো বড় উৎসবের সময় সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করার জন্য নিরাপদ গতি সীমা নির্ধারণ করতে হবে এবং সর্বদা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে। উপরন্তু গতি সীমা ব্যবস্থাপনার জন্য একটি নির্দেশিকা জরুরি ভিত্তিতে প্রণয়ন করতে হবে।

ঈদ যাত্রার সময়, মোটরসাইকেল আরোহী এবং যাত্রী উভয়কেই মানসম্পন্ন হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক করতে হবে। প্রধান সড়ক ও মহাসড়কে মোটরসাইকেলের জন্য নির্দিষ্ট লেন স্থাপন করতে হবে। উপরন্তু স্ট্যান্ডার্ড হেলমেট ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য একটি প্রয়োগকারী নির্দেশিকা তৈরি করতে হবে এবং সেটার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

নিরাপদ হাঁটা ও সাইকেল চালানোর পরিবেশ নিশ্চিত করতে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। নগর পরিকল্পনা, সমন্বিত সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রয়োগ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব।

চালকদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিশ্চিত করার জন্য তাদের কর্মঘণ্টা নিয়ন্ত্রিত এবং কার্যকর করতে হবে। ঈদ যাত্রার সময় গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত যানবাহন যেমন নসিমন, করিমন চলাচল সীমিত করা উচিত। তাছাড়া অন্যান্য সড়কে ধীরগতির এবং দ্রুতগতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেন নির্ধারণ করতে হবে।

পরিবহন নিরাপত্তার পাশাপাশি পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ফুটপাত এবং ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে উৎসাহিত করা, রাস্তা পারাপারের সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা, জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং রাস্তা থেকে পুরোনো গণপরিবহন এবং ফিটনেস সার্টিফিকেটবিহীন যানবাহন অপসারণ করতে হবে। নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করে গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ করার আইন প্রয়োগ করতে হবে। চালক এবং যাত্রী উভয়ের জন্যই সিটবেল্ট ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য একটি নির্দেশিকা তৈরি করতে হবে। তাছাড়া গাড়ি, জিপ এবং মাইক্রোবাসের মতো যানবাহনের জন্য, শিশুদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে উপযুক্ত শিশু সুরক্ষা আসন প্রদানের জন্য নিয়ম চালু করা উচিত।

সবশেষে সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে এবং প্রাসঙ্গিক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য সড়ক নিরাপত্তা প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে কার্যকর সমন্বয় নিশ্চিত করার জন্য একটি জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করা উচিত। সড়কে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগের।

লেখক: রোড সেফটি প্রোগ্রাম, ব্র্যাক

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
উপদেষ্টার নির্দেশনা ছাড়া পিএসরা দুর্নীতি করে নাই: আমিনুল হক 
নারায়ণগঞ্জে ৫ কোটি টাকা মূল্যের অবৈধ ভারতীয় পণ্য জব্দ 
ডিসেম্বরে রূপপুরের বিদ্যুৎ যুক্ত হবে জাতীয় গ্রিডে: অর্থ উপদেষ্টা
লায়ন্স ৩১৫বি৩ দ্বিতীয় ভাইস জেলা গভর্নর হলেন ডা. মাজহারুল ইসলাম
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা