উপবৃত্তির টাকা দেওয়ার নামে প্রতারণা, গ্রেপ্তার ৮

শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা দেওয়ার নামে বিভিন্ন ক্রেডিট কার্ড-ডেবিট কার্ড ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রতারণার কাজে জড়িত মূলহোতাসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজধানী ঢাকাসহ জামালপুর, রাজশাহী, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও ফরিদপুরের বিভিন্ন এলাকায় র্যাব- ৪ ,৫, ৮, ১০, ১১ ও ১৪ যৌথ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।
সোমবার কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে র্যাব-৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মনীম ফেরদৌস এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
মনীম ফেরদৌস জানান, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা দেওয়ার নাম করে বিভিন্ন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড/ডেবিট কার্ড ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এক শ্রেণীর প্রতারক চক্র বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়।
গত ২৪ মার্চ সকালে রাজশাহীর বিএনসিসি অফিসে অবস্থানকালে অভিযোগকারীর ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে অজ্ঞাতনামা মোবাইল নম্বর থেকে তার মেয়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টের ব্যাংক শাখায় কর্মরত মো. মিজানুর রহমান বলে পরিচয় দিয়ে তার মেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পাওয়ায় শিক্ষা উপবৃত্তির ২২ হাজার ৫০০ টাকা এসেছে বলে উল্লেখ করে। এ টাকা অ্যাকাউন্টে চলে যাবে মর্মে একটি ব্যাংকের এটিএম কার্ডের ১৬ ডিজিটের নম্বর দিতে বললে ভুক্তভোগী তার ১৬ ডিজিটের নম্বর দেন। এরপর একটি ওটিপি যাবে বলে জানানো হয়। পরবর্তীতে বাদী মোবাইল মেসেজ অপশনে দেখতে পান তার অ্যাকাউন্ট থেকে চার বারে ১ লাখ ৫০ হাজার ৫০০ টাকা প্রতারণামূলকভাবে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা নিয়ে যায়। এ ঘটনা বাদী অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে আরএমপির বোয়ালিয়া মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জড়িতদের গ্রেপ্তারে অধিযাচনপত্র দিলে র্যাব-৫ জড়িতদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-৫ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজশাহীর রাজপাড়া থানা এলাকা থেকে শামীম হোসেনকে (২৯) গ্রেপ্তার করে।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মনীম ফেরদৌস বলেন, “গ্রেপ্তারকৃত শামীমের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় একটি বাড়িতে অভিযানচালিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির সিম কার্ডসহ বেশ কয়েকটি মোবাইল উদ্ধার করে। এ প্রতারক চক্রের সদস্য ফরিদপুরের মোহাম্মদ জিহাদ (৩৪) বর্তমানে জামালপুরে অবস্থান করছে। পরে তাকে বিপুল পরিমাণ সিম কার্ডসহ জামালপুর সদর থানা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।”
মনীম ফেরদৌস আরও জানান, জিহাদ ও শামীমকে এ চক্রের সদস্য কাজী সাদ্দাম হোসেন ওরফে আমির হামজা (২৬) বিভিন্ন স্থান থেকে বেনামি রেজিস্ট্রেশনকৃত সিম কার্ড সংগ্রহ করে দেন। পরবর্তীতে র্যাব মো. সাদ্দাম হোসেন ওরফে মো. আমির হামজাকে (২৬) কুমিল্লার হোমনা থেকে গ্রেপ্তার করে এবং তার দেওয়া তথ্যমতে মোবাইল সিম ক্রয়-বিক্রয় কাজে নিয়োজিত মো. আহাদ গাজীকে (২৪) নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত জিহাদ ও শামীমের দেওয়া তথ্যমতে মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে জয়কে (২৬) ঢাকার কাফরুল থানা এলাকা হতে গ্রেপ্তার করা হয়। মোস্তাফিজের দেওয়া তথ্য মতে ফরিদপুর জেলার ভাংগা থানা এলাকা হতে আরেক মূলহোতা মো. বাপ্পি মোল্লাকে (২০) গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যর ভিত্তিতে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তার মাধ্যমে মূলহোতা মো. জাকির হোসেন হাওলাদার (৪৭) এবং মো. উসমান গনি মোল্লা (৩৩)কে ভাংগা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে ২৩টি মোবাইল সেট, ৩১০টি সিম কার্ড এবং নগদ ৩ লাখ ১২৭০ টাকা উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত প্রত্যেকটি সিম কার্ডে বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অ্যাকাউন্ট রয়েছে বলেও জানান তিনি।
(ঢাকাটাইমস/২২এপ্রিল/এলএম/এফএ)

মন্তব্য করুন