কথিত মানবসেবার আড়ালে অপকর্ম
বাবাকে পিটিয়ে এলাকা ছাড়েন মিল্টন, ওষুধ বিক্রির টাকা চুরি করে চাকরিচ্যুত

বরিশালের উজিরপুরের মিল্টন সমাদ্দারের উত্থান নিজ বাবাকে পিটিয়ে। এই অপরাধে এলাকাবাসী তাকে বাড়িছাড়া করেন। এরপর ঢাকার শাহবাগে এসে একটি ফার্সেমিতে কাজ শুরু করেন তিনি। ওষুধ বিক্রির টাকা চুরি করায় সেখানে বেশিদিন টিকতে পারেননি।
এরপর মিটু হালদার নামে এক নার্সকে বিয়ে করেন মিল্টন। বিয়ের পর ‘ওল্ড অ্যান্ড চাইল্ড’ নামে একটি কেয়ার সেন্টার স্থাপনের স্বপ্ন দেখেন তিনি। পরবর্তীতে মিরপুর এলাকায় ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ নামে একটি কেয়ার সেন্টার স্থাপন করেন। তিনি খুঁজে গরীব বৃদ্ধ এবং শিশুদের সেখানে নিয়ে আসতেন। বিভিন্ন মিডিয়ায় সে জানিয়েছে, তার কেয়ার সেন্টারে অপারেশন থিয়েটার আছে এবং সেখানে সে মানুষের সেবা দেয়। অপারেশন থিয়েটার থাকলে তো লাইসেন্স থাকতে হবে, তার লাইসেন্স ছিল না।’
বুধবার রাতে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্য ালয়ের সামনে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ।
ডিবি প্রধান বলেন, ‘মিল্টনের বিরুদ্ধে আমরা অজস্র অভিযোগ পেয়েছি। সে বলেছে তার দুইটা আশ্রম রয়েছে৷ সাভারের আশ্রমে ৫ থেকে ৭ শত লোক রয়েছে৷ কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানে ২০ থেকে ৩০ জনের বেশি লোক নেই।’
হারুন অর রশিদ বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে রাতে মরদেহ দাফনের অভিযোগ রয়েছে। তিনি ইতোমধ্যে ৯০০ মরদেহ দাফন করেছেন বলে মিডিয়ায় এসেছে। এর মধ্যে ৮৩৫টি মরদেহের কোনো ডকুমেন্ট তিনি দেখাতে পারেননি।’
এছাড়া ডেথ সার্টিফিকেটে নিজেই সিল বানিয়ে চিকিৎসকের স্বাক্ষর দিতেন, এসব অভিযোগও বিস্তারিত তদন্ত করে দেখা হবে বলে জানান হারুন।
হারুন বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে মানবপাচার, শিশু ও বৃদ্ধদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রি করার অভিযোগ আছে। এগুলো আমরা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে দেখবো। এছাড়া তিনি যে অনুদানের টাকা পেতেন তা যথাযথভাবে খরচ করা হতো কিনা, তার শেল্টার হোমে শিশু ও বৃদ্ধ যারা আশ্রিত থাকতেন, তাদের অভিভাবকরা এলে তাদের যে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে সেগুলোও খতিয়ে দেখা হবে।’
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা তাকে নিয়ে এসেছি। কিছু অভিযোগকারী রয়েছে তারাও মামলার রুজু করবে। আমরা মিল্টনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবো কত সংখ্যক মানুষ কাছে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিল, কত সংখ্যক মানুষ মারা গেলো। তার আশ্রমে যে অপারেশন থিয়েটার রয়েছে এর মাধ্যমে কিডনি বিক্রি করেছেন কিনা সেটাও তদন্ত করা হবে।’
এর আগে বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে মিরপুরের নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবির একটি দল। গ্রেপ্তারের পর তাকে নেওয়া হয় ডিবি কার্যালয়ে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি মিল্টন সমাদ্দারের বিভিন্ন অপকর্ম নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। যদিও সব অভিযোগ অস্বীকার করেন মিল্টন সমাদ্দার।
(ঢাকাটাইমস/০১মে/এলএম/কেএম)

মন্তব্য করুন