নিয়ম মেনে হাঁটলে ডায়াবেটিস থাকবে দূরে

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৯ জুন ২০২৪, ০৮:৪৪
অ- অ+

নীরব ঘাতক ডায়াবেটিস রোগ দেহে বহু ব্যাধির আহ্বায়ক। ডায়াবেটিস হলে শরীরে ইনসুলিন হরমোন কম পরিমাণে বের হয় বা বের হলেও নিজের কাজটি ঠিকমতো করে উঠতে পারে না। এই হরমোন কাজ না করলে শরীরে বাড়তে থাকে সুগারের মাত্রা। শরীরে একবার সুগারের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে নানা ধরনের সমস্যার উদ্রেক হয়। বিশেষত, দীর্ঘদিনের অনিয়ন্ত্রিত সুগার অনেক গুরুতর সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এক্ষেত্রে কিডনি, চোখ, নার্ভ, হার্টের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। বহু গুরুতর অসুখ এই অঙ্গগুলোর ক্ষতি করে নানা জটিলতা তৈরি করতে পারে। তবে সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা নিয়ে অতিরিক্ত চাপ নেবেন না। বরং সারাদিনে কিছুটা সময় হেঁটেই ডায়াবেটিস কমানো যায় বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তাছাড়া সুস্বাস্থ্যের জন্য উৎকৃষ্ট ব্যায়াম হলো হাঁটা। যান্ত্রিক জীবনে অলসভাবে সবার সময় কাটে। এতে করে শরীরে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে। আবার অনেকে শরীরচর্চা করার সময় পান না।

ওজন কমানোই হোক কিংবা শরীর ভাল রাখা। যে কারণেই হাঁটুন না কেন। অন্তত নিয়মিত ১৫ থেকে ৩০ মিনিট হাটুন। পারলে দু’বেলাই হাঁটুন। এতে স্বাস্থ্য ভাল থাকে এবং শরীরের একাধিক সমস্যা নিয়ন্ত্রণে থাকে।

বাড়তি মেদ ঝরানোর পাশাপাশি নিয়মিত হাঁটলে কোলেস্ট্রল নিয়ন্ত্রণে থাকে। ডায়াবেটিস ও স্থুলতা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভাল থাকে। পাশাপাশি হার্ট, উচ্চ রক্তচাপ এমনকি ক্যানসারের মতো রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে নিয়মিত হাঁটার অভ্যেস। কেন আমাদের আরো বেশি হাঁটা প্রয়োজন এবং জেনে নিন হাঁটার উপকারিতা-

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে

হাঁটলে শরীরের পেশিতে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ে। ফলে রক্তের গ্লুকোজ কমে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। সম্প্রতি গবেষকদের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, আপনি যত বেশি হাঁটবেন, তত আপনার ডায়াবেটিস হবার সম্ভাবনা কম হবে। যিনি সপ্তাহে ৫ দিন প্রতিদিন ১০,০০০ স্টেপ হাঁটেন, তিনি ডায়াবেটিস থেকে তত দূরে থাকেন যিনি প্রতিদিন ৩,০০০ স্টেপ হাঁটেন। গবেষণায় দেখা গেছে, খাবার খাওয়ার পরে মাত্র দুই মিনিট হাঁটলেই রক্তে শর্করার পরিমাণ অনেকখানি কমে যেতে পারে। অনেক দিন ধরেই বলা হয়, রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে খাবার খাওয়ার পরে বেশ কিছুটা হাঁটতে। বিশেষ করে ১৫ থেকে ২০ মিনিট হাঁটাতে হবে। ১৫-২০ মিনিট সময় না পেলেও মাত্র দুই মিনিট হাঁটলেই শরীর রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতে শুরু করে।

মানসিক সুস্থতা ভালো থাকে

অফিসে বা কাজে হেঁটে যাওয়া অনেক ভালো একটি উপায়। সকালে হাঁটার অভ্যাসের পাশাপাশি কাজের জায়গায় গিয়ে আপনাকে মানসিকভাবে ভালো থাকতে সাহায্য করবে।‘ইট দিস ডট কম’ ওয়েবসাইটের এক গবেষণায় অ্যাংলিয়াস নরউইচ মেডিকেল স্কুলের প্রধান গবেষক অ্যাডাম মার্টিন বলেন, যারা গাড়িতে যাতায়াত করেন, তাদের মানসিক সুস্থতা বেশি খারাপ হয়। আর যারা বেশি হাঁটেন, তাদের মানসিক সুস্থতা ততই ভালো হয়।

ওজন কমাতে সাহায্য করে

খাবার খাওয়ার পর পরই হাটবেন না। বরং ঘন্টাখানেক পর কিছুক্ষণ পায়চারি করুন বা কিছুক্ষণ হাটুন। এই অভ্যেসের ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে ও স্থুলতার হাত থেকে রেহাই পাবেন।

হাড় শক্ত হবে

হাঁটলে গোটা শরীরের এক্সারসাইজ হয়। তাই নিত্য জীবনযাপনে হাঁটার অভ্যেস রাখলে শরীরের হাড় ও মাংশপেশী শক্তপোক্ত হয়।

শারীরিক গঠন অটুট রাখতে সাহায্য করে

আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাদেরকে সারাদিন চেয়ারে, সোফায় কিম্বা গাড়িতে বসে কাজ করতে হয়। এর ফলে শারীরিক গঠনে, বিশেষ করে পিঠে - ব্যথা হতে পারে। চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করা আপনাকে পিঠের ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে পারে

স্মৃতিশক্তি বাড়ায়

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রভাব পড়ে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর। কমে যায় স্মৃতি শক্তি। তাই স্মৃতি শক্তি ভাল রাখতে নিয়মিত হাঁটার অভ্যেস করুন। নিজেকে সুস্থ রাখুন।

বিষণ্ণতা কাটাতে সাহায্য করে

দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে? তা হলে রোজ হাঁটার অভ্যেস করুন। এতে মন ভাল হয় এবং শরীর ও মেজাজ দু’ই ফুরফুরে থাকে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিদের বেলাতে বিষণ্ণতা দেখা যায় বেশি। যতোই সক্রিয় থাকা যায় ততোই ভালো। রক্ত প্রবাহের সমস্যা থেকেও বিষণ্ণতা তৈরি হয় বলে ধারণা রয়েছে। আপনি যদি প্রচুর হাঁটেন, রক্ত প্রবাহের ক্ষেত্রে সমস্যা থাকলে সেগুলো কমে যায়। সেটা নাটকীয়ভাবেই হ্রাস পায়। কোন কোন ক্ষেত্রে হাঁটাহাঁটি করা এক ধরনের ভ্যাকসিন বা টীকার মতো কাজ করে। সাহায্য করে বিষণ্ণতা কমাতে।

সঠিক উপকারিতা পেতে হাঁটার সময় যেসব নিয়ম মেনে চলবেন

হাঁটার মাঝে মাঝে শ্বাস প্রশ্বাস ঠিক রাখতে লম্বা ও গভীর দম নিন ও ছাড়ুন। নাক দিয়ে দম নিয়ে, মুখ দিয়ে ধীরে ছাড়ুন। এতে আপনার শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও আরো হাঁটার শক্তি পাবে।

হাঁটার ১০ মিনিট আগে এক গ্লাস পানি পান করুন। সারাদিন এক ঘন্টা পর পর এক গ্লাস করে পানি খেলে হাঁটার সময় পানিশুন্যতা হবে না। হাঁটার সময় প্রতি ২০ মিনিটে এক কাপ করে পানি খাবেন। হাঁটার শেষে এক থেকে দুই গ্লাস পানি খাবেন।

অনেক অসুস্থ মানুষও এই হাঁটাকে ব্যায়াম হিসেবে নিতে পারেন। শুরু হোক ধীরে ধীরে। প্রথম দিন ১০-১৫ মিনিট। এরপর গতি বাড়ান, সময় বাড়ান। ২০-৩০ মিনিট। এরপর শীতল হন ১০ মিনিট। পাঁচ-১০ মিনিট ধীরে হেঁটে শীতল হন। ব্যয়বহুল জিম থেকে নিখরচায় হাঁটা অনেক ভালো।

জার্নাল অব হ্যাপিনেস স্টাডিজের একটি গবেষণায় তারা একদল স্বেচ্ছাসেবককে হাঁটার সময় তাদের সামনে থাকা ব্যক্তিদের সম্পর্কে তিনটি কৌশল মেনে চলতে বলেন। প্রথমটি হচ্ছে— তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে ভালোবাসা-দয়া রাখা; দ্বিতীয়টি হচ্ছে— পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকা এবং তৃতীয়টি হচ্ছে— কৌশলে বলা হয় অন্যান্য লোকদের বাহ্যিক উপস্থিতি এবং চেহারা বিবেচনা করতে। গবেষণাটিতে দেখা যায়, এ কৌশলগুলো অবলম্বন করার ফলে তারা কম উদ্বেগ, আরও সুখী, আরও সংযুক্ত, আরও যত্নশীল এবং আরও সহানুভূতি অনুভব করে।

ডায়াবেটিস গবেষণা জানাচ্ছে, যারা হাঁটার জন্য আলাদা করে সময় পাবেন না, তাঁরা এই কাজগুলো করতে পারেন- দোকান-বাজার হেঁটে করুন। অফিস থেকে ফেরার পথে একটা স্টপেজ আগে বাস থেকে নেমে যান, বাকি রাস্তা হেঁটে ফিরুন। যাতায়তের জন্য গাড়ি ব্যবহার করলে তা একটু দূরে রাখুন, বাকি রাস্তা হেঁটে যান। একটি হাঁটার গ্রুপে জয়েন করতে পারেন। এই কয়েকটি নিয়ম মেনে চললে শরীর সুস্থ থাকবে। সেই সঙ্গে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকতেও বাধ্য় হবে।

প্রতিদিন যত বেশি হাঁটবেন, মনে হবে আপনি ততই বেশি ভাল আছেন। ভাল থাকার ব্যাপারে আপনার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে। শরীরকে যথাযথভাবে কর্মক্ষম রাখার জন্যে নিয়মিত হাঁটুন। সুস্থ, প্রাণবন্ত ও নীরোগ থাকুন।

(ঢাকাটাইমস/৯ জুন/আরজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
আজ দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া, পথে পথে অভ্যর্থনা জানাবেন নেতাকর্মীরা
হিরো আলমের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও গর্ভপাত ঘটানোর অভিযোগে মামলা
প্যাথলজিক্যাল নমুনা বিদেশে পাঠাতে অনুমতি লাগবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের
বেইলি রোডে ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টারে আগুনের সূত্রপাত নিয়ে যা জানা গেল 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা