কিডনি সুস্থ রাখতে কোন কোন তেল খাবেন, জানুন প্রতিদিন কতটুকু তেল খাবেন

কিডনি মানুষের দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর একটি। কিডনি রক্ত পরিশোধন, বিষাক্ত পদার্থ অপসারণ এবং দেহে তরল ভারসাম্য রক্ষা করে। তাই কিডনির সুস্থতা বজায় রাখতে চাইলে খাদ্যাভ্যাসে আনা দরকার কিছু পরিবর্তন। বিশেষ করে রান্নার জন্য আমরা তেল ব্যবহার করি সেটা যদি স্বাস্থ্যকর না হয় তবে শরীরে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তেল খাওয়ার অসুবিধে এড়াতে যদি তেল ছাড়া খাবার খান তাহলে ভুল করছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে ওমেগা ৩ ফ্যাটগুলো মস্তিষ্কের বিকাশ, হরমোন উত্পাদন, সেলুলার স্বাস্থ্য এবং ইমিউন সিস্টেমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই আপনার এমন তেল খাওয়া উচিত যাতে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে।
পুষ্টিবিদদের মতে এমন কিছু তেল আছে যা কিডনি ড্যামেজ থেকে রক্ষা করে। কিডনি মানুষের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এই অঙ্গটি বহু জটিল কাজ করে। দেহে বিপাকের ফলে নানা ক্ষতিকর পদার্থ তৈরি হয়। তা শরীর থেকে বের করে দেয় কিডনি। এটাই কিডনির মূল কাজ। এছাড়াও ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণ করা থেকে শুরু করে নানা হরমোন তৈরি করে এই অঙ্গ।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, কিডনির নানা অসুখ আমাদের ঘিরে রেখেছে। খাবারদাবার ঠিক না থাকা থেকে শুরু করে ভুল জীবনযাত্রা ও কিছু রোগ একসঙ্গে এই অঙ্গের পিছনে পড়েছে। তবে চিন্তা নেই, এমন কিছু তেল রয়েছে যা খেলে কিডনির অসুখে কার্যকরী।
চিকিৎসকের মতে, তেল শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এতে থাকে এসেনশিয়াল ফ্যাট। তবে বেশি পরিমাণে খেলে তা শরীরের জন্য় ক্ষতিকর। এক্ষেত্রে হাই ফ্যাট কোলেস্টেরল বাড়ায়, ব্লাড প্রেশার বৃদ্ধি করে। এই কারণে হার্ট থেকে কিডনির অসুখ হতে পারে।
তবে আপনি চাইলে কিছু তেল খেতে পারেন যা কিডনিকে সুস্থ করে। এবার সেই সকল কুকিং অয়েল সম্পর্কে জানা যাক-
অলিভ তেল
অলিভ তেলের গুণ নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। এই তেল অত্যন্ত উপকারী। এই তেল পারে নানা জটিল সমস্যার সমাধান করতে। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, এই তেলে রয়েছে মোনো স্যাচুরেটেড ফ্যাট। সেই ফ্যাট কোলেস্টেরল হু হু করে কমায়। এবার কোলেস্টেরল কমার সঙ্গে সঙ্গে হার্টের রোগে পড়ার আশঙ্কা কমে। ঠিক তেমনই কিডনিও সুস্থ থাকতে পারে। এবার থেকে তাই পারলে অলিভ তেল খাওয়ার চেষ্টা করুন।
সানফ্লাওয়ার তেল
এখন সানফ্লাওয়ার তেল সর্বত্র পাওয়া যায়। এই তেল কিন্তু শরীরের জন্য উপকারী। দেখা গিয়েছে যে এরমধ্যে রয়েছে কম পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট। তাই কিডনি রোগীদের জন্য অবশ্যই ভালো হতে পারে এই তেল। এবার থেকে তাই সূর্যমুখীর তেল পাতে রাখতেই পারেন। আশা করছি ভালো থাকবেন।
তিসির তেল
তিসির তেল শরীরের জন্য খুবই ভালো। এই তেলে রয়েছে নানা উপকারী উপাদান। তাই এই তেল নিয়মিত ব্যবহার করা দরকার। দেখা গিয়েছে যে কিডনির জন্য এই তেল দারুণ কার্যকরী। বিভিন্ন গবেষণা বলছে, এই তেল কিডনিকে সহজে কাজ করতে সাহায্য করে। তাই কিডনি সুস্থ হয়ে ওঠে। তাই এই তেল আপনি নিয়মিত খান। তবেই ভালো থাকতে পারবেন।
রাইস ব্র্যান তেল
অনেকেই রাইস ব্র্যান তেল খেতে চান না। তবে দেখা গিয়েছে যে এই তেল কিন্তু শরীরের জন্য খুবই ভালো। এই তেলে এমন একটি উপাদান রয়েছে যা শরীর থেকে কোলেস্টেরল শুষে নিতে পারে। এছাড়া এই তেল ক্যালশিয়ামকে অতিরিক্ত মাত্রায় শরীরে জমতে দেয় না। ফলে কিডনিতে স্টোন হওয়ার আশঙ্কা কয়েকগুণ কমতে পারে। তাই আপনি এই তেল অবশ্যই খেতে পারেন। কোনও সমস্যা নেই খাওয়ার ক্ষেত্রে।
বাদাম তেল
বাদামের তেল এখন বাজারে মেলে। অবশ্য কিছুটা দাম বেশি। তবে আপনার পকেটে সইলে এই তেল অনায়াসে খাওয়া যায়। এই তেলে রয়েছে মোনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট। এই ফ্যাট ওজন বাড়তে দেয় না। এমনকী ডায়াবিটিসেও খুব ভালো। এবার আপনারা এতদিনে নিশ্চয়ই জেনে গিয়েছেন যে কিডনির সরাসরি ক্ষতি করে দেয় ডায়াবেটিস। তাই এই অসুখ নিয়ে সাবধান আপনাকে থাকতে হবে। তবেই বৃক্ক রক্ষা পাবে। তাই বাদাম তেল খেতে পারেন।
প্রতিদিন কতটুকু তেল খাবেন
যতই ভালো তেল খান না কেন, তা খেতে হবে মাপে মাপে। তাই বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন প্রতিদিন খুব কম পরিমাণে তেল খাওয়ার কথা। অংকের হিসাবে ২০ থেকে ২৫ গ্রাম তেল রোজ খাওয়া যায়। তবে সাধারণের বোঝার স্বার্থে সহজে বলা যায়, ৪ থেকে ৫ চা চামচ তেল প্রতিদিন খেতে পারেন। এই নিয়মেই ভালো থাকবেন।
পুষ্টিবিদদের মতে, প্রক্রিয়াজাত খাবার শরীরে জন্য ভাল নয়। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের অনেকেই মনে করেন, যথাসম্ভব টাটকা খাবার যেমন খাওয়া উচিত, তেমন অপরিশোধিত ভোজ্য তেলই রান্নায় ব্যবহার করা ভাল। কারণ, বিভিন্ন ধরনের গাছ ও বীজ থেকে তৈরি হওয়া তেল পরিশোধন মানেই তার খাদ্যগুণ নষ্ট হওয়া।
পুষ্টিবিদরা পরামর্শ দিয়েছেন, অপরিশোধিত তেল গরম করার পর তা ঠান্ডা করে রান্নায় ব্যবহার করতে। তবে গরম করতে হবে ধোঁয়া ওঠার আগে পর্যন্ত। তেল গরম করার পর ঠান্ডা করে ব্যবহার করায় তেলের স্থায়িত্ব বাড়ে। অপরিশোধিত তেলে বেশ কিছু জিনিস থেকে যায়, যেমন উদ্ভিদের অবশিষ্টাংশ, গন্ধ। তেল একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত গরম করলে সেই অশোধিত অংশগুলো বাষ্পীভূত হয়ে উবে যায়। এই পদ্ধতিতে তেলের ক্ষতিকর অংশ বেরিয়ে যায়।
তেল গরম করার ফলে ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সমান্য হলেও কমে যায়। তবে এটা নির্ভর করে কত ক্ষণ ধরে কোন তাপমাত্রায় তা গরম করা হচ্ছে। তেল থেকে ধোঁয়া ওঠা মানেই পুষ্টিগুণ বেরিয়ে যাওয়া।
কারণ, অপরিশোধিত তেলে ‘পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট’, ‘অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট’, ভিটামিনের মতো কিছু উপাদান থাকে। যা অতিরিক্ত গরমে নষ্ট হয়ে যায়।
(ঢাকাটাইমস/৪ মে/আরজেড)

মন্তব্য করুন