যখন-তখন ফেসবুক বন্ধ করে কি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া সম্ভব? যা বলছেন ব্যবহারকারীরা
ডিজিটালাইজেশনের এই যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম। অর্থনীতিতেও রাখছে অনেকখানি ভূমিকা। বিশেষ করে ফেসবুক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আনছেন ফ্রি-ল্যান্সাররা। কিন্তু সাম্প্রতিক শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি বন্ধ করার মতো ঘটনা ঘটছে। এতে করে ফ্রিল্যান্সাররা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, পাশাপাশি ব্যবহারকারীরাও পড়ছেন বিপাকে। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে যখন-তখন ফেসবুক বন্ধ করে কি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া সম্ভব?
সবশেষ আজ শুক্রবারও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচির মধ্যে মোবাইল নেটওয়ার্কে বন্ধ করা হয়েছে ফেসবুক ও টেলিগ্রাম। দুপুর সোয়া ১২টার পর মোবাইল নেটওয়ার্কে মেটার প্ল্যাটফর্মগুলোর ক্যাশ বন্ধ পাওয়া হয়। টেলিগ্রামও বন্ধ করা হয়েছে এই নেটওয়ার্কে। এর আগে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ১৪ দিন বন্ধ ছিল মেটার প্ল্যাটফর্ম ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইনস্টাগ্রাম।
সরকারের ভাষ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে গুজব প্রতিরোধে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করা হয়।
তবে সরকারের এমন দাবিকে ‘মাথা ব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলা’র সঙ্গে তুলনা করছেন সচেতন নাগরিকরা। ভ্লগ, ইউটিউব ও ফেসবুকে এ নিয়ে সরকারের কড়া সমালোচনা করতে দেখা গেছে। তারা বলছেন, দেশের ফ্রি-ল্যান্সার, ছোট খাটো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এই ফেসবুককে ঘিরেই তৈরি হয়েছে। ফেসবুকবিহীন তা একদম অচল। গুজবরোধে সরকার যথাযথ মনিটরিং ও সেন্সরিং ব্যবস্থায় না গিয়ে ফেসবুক বন্ধের মতো ক্ষতিকর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
খন্দকার রবি নামে একজন তার ফেসবুকে লিখেছেন— নেটের গতি এমন স্লো + ফেসবুক বন্ধ থাকলে- ডিজিটাল বাংলাদেশ এর বয়ান আর চলবে না। অসংখ্য অনলাইন ব্যবসায়ী এবং ফ্রিল্যান্সার পথে বসে গেছে।
শাহেদ আবুল ফজল নামে এক ফেসবুক ব্যবহারী নিজের আইডিতে লিখেছেন, মাননীয়, ফেসবুক বন্ধ থাকায় যদি ৩ লাখ উদ্যোক্তা বা ফ্রিল্যান্সার সমস্যায় থাকে এবং তাদেরকে প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এটা অবশ্যই ভালো। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যে সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরি করে এমন সুন্দর একটা আয় রোজগারের ব্যবস্থা করলো সেই সরকারের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা কী? গত কয়েকদিনে তাদের ভূমিকা কী ছিলো?
চিকিৎসক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব আব্দুন নূর তুষার লিখেছেন—
আমি নেট এর জন্য মাসিকভিত্তিতে পয়সা দেই। এটা বন্ধ রেখে আমার কাছ থেকে পয়সা নেবে কেন? ভোক্তা অধিকার এখন কোথায়?
এক লোকের পাতলা পায়খানা হচ্ছে। সে কিছুতেই সেটা বন্ধ করতে না পেরে- কমোডে তালা মেরে দিলো। তাতে কি আর পায়খানা থামে? না দুর্গন্ধ কমে? উল্টা তার বাড়ির নরমাল হাগুও তখন যেতে না পেরে সবখানে ব্লক। সব মাখামাখি। সেই রকম ফেসবুক ইউটিউবে অজস্র পোস্ট আর প্রতিবাদ বন্ধ করতে না পেরে নেট বন্ধ করা একই ধরনের উজবুকি। আগে নিজেদের কুকাজগুলো বন্ধ করেন। তাহলে নেট নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না। যখন নেট বন্ধ করছেন- তখন নিজেরাই স্বাক্ষী দিচ্ছেন যে এই কুকাজগুলো লোকে জানুক- সেটা আপনারা চান না।
আর কী বলার আছে!
ইশতিয়াক আহমেদ নামে একজন আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সমালোচনা করে ফেসবুকে লিখেছেন, ভিপিএন দিয়ে অনলাইনে ঢুকবো, খুব বেশি ইচ্ছে ছিলো না। সারাদিন ইউটিউবে আর কতটুকু নিউজ মেলে? তারপরও তাকিয়ে থাকতাম রিফ্রেশ দিতে দিতে।..........কোনো সন্দেহ নাই, এই ডিজিটাল বাংলাদেশের সবচেয়ে এনালগ গলিটির নাম আইসিটি মন্ত্রণালয়।
ফেসবুক বন্ধ করে দিলে যদি তাদেরকে পথে ভিক্ষা করতে হয় তাহলে ফেসবুক ফিরেয়ে দেওয়ার পর ভবিষ্যতে তাদের সরকারের জন্য করণীয় কী? শুধুই কি গুজব ছড়ানো? নাকি পজিটিভ?
১৭ জুলাই রাত থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ইন্টারনেট ও ফেসবুক বন্ধ থাকায় দেশের অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা খাতে প্রায় এক হাজার ৭৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)।
বর্তমানে বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং, সফটওয়্যার তৈরি, ডিজাইনসহ নানামুখী কাজে যুক্ত প্রায় ছয় লাখ মানুষ। এ খাত থেকে বছরে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয় কমবেশি ২০০ কোটি ডলার। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই খাতে ২০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/০২আগস্ট/এএইচ/এলএম/ইএস)