কয়েকটি ফল খেলেই দূর হবে কিডনিতে জমা পাথর!
মানবদেহের অন্যতম অঙ্গ কিডনি। এটি এক দিকে দেহের বর্জ্য পদার্থ পরিশুদ্ধ করে। অন্য দিকে বিভিন্ন খনিজ লবণের ভারসাম্য বজায় রাখতেও সহায়তা করে। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করলে কিডনিতে পাথর জমতে পারে। কিডনিতে পাথর কিন্তু মানুষের বয়স দেখে জমে না। অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, অনিয়মিত খাওয়াদাওয়ার অভ্যাসের মতো বহু কারণে কিডনিতে পাথর জমে।
কিডনিতে যে পাথরগুলো জমে, সেগুলেকে রেনাল পাথর বা নেফ্রোলিথিয়াসিস বলা হয়। কঠিন বর্জ্য পদার্থ দিয়ে গঠিত হয় এই পাথরগুলো। ক্যালসিয়াম অক্সালেট, স্ট্রুভাইট, ইউরিক অ্যাসিড এবং সিস্টাইন মিলে কিডনির পাথরগুলো তৈরি হয়।
যদিও কিডনিতে ছোট ছোট পাথর জমা খুব জটিল সমস্যা নয়, তবে বড় পাথরগুলো মূত্রনালীতে বাঁধা সৃষ্টি করতে পারে। কিডনিতে অত্যাধিক পাথর জমলে রোগী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। যেমন- পেটে ব্যথা, রক্তবর্ণের প্রসাব, কিডনির অবস্থানে (কোমরের পেছন দিকে) ব্যথা, বমিসহ রক্তপাতও হতে পারে।
সাধারণত কিডনির অসুখ ধরা পড়ে অনেক দেরিতে। অনেক ক্ষেত্রেই একটি কিডনি বিকল হয়ে গেলেও অন্যটি দিয়ে কাজ চলতে থাকে। ফলে ক্ষতি সম্পর্কে আগে থেকে আঁচ পাওয়া যায় না। এ কারণে কিডনি ভালো রাখতে খাওয়াদাওয়ার বিষয়ে বিশেষ সচেতন থাকা জরুরি।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, কিডনিতে পাথর হওয়ার সমস্যা দূরে রাখতে পারে কয়েকটি ফল। নিয়ম করে সেগুলো খেলে কিডনি ভালো থাকবে।
লেবু
পাতি, কাগজি, গন্ধরাজ লেবু তো সব বাজারে প্রায়ই পাওয়া যায়। প্রতিদিনকার খাবারের তালিকায় আমরা এই লেবুগুলিই রাখি। এছাড়া একটি বড় লেবু আছে। ইংরেজিতে যাকে সিট্রন বা সাইট্রাস মেডিকা বলে। এর আকৃতি ছোট লেবুর মতো গোলাকার নয়। এটি দেখতে করলার মতো এবং এর রঙ হলুদ বা সবুজ। কিন্তু এর বীজ কিছুটা বড়।
চিকিৎসকের মতে, আপনি যদি কিডনিতে পাথরের সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে তা থেকে মুক্তি পেতে বড় লেবু ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য, আপনার প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এই লেবুর রস ২০ মিলি পান করা উচিত। তিন-চার সপ্তাহের বেশি খাবেন না। এর অতিরিক্ত সেবনে আমবাতের ঝুঁকি বড়াতে পারে।
আপেল
প্রচলিত আছে ‘প্রতিদিন একটা আপেল খান আর ডাক্তারকে দূরে রাখুন’। কথাটা কিডনির ক্ষেত্রেও সত্য। আপেল উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার, এতে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটোরি আছে যা বাজে কোলেস্টেরল দূর করে হৃদরোগ প্রতিরোধ করে। এছাড়া এটি ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়।
সাইট্রাস জাতীয় ফল
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ সাইট্রাস গোত্রের ফল কিডনিতে পাথর জমতে দেয় না। তাই এই ধরনের ফল নিয়ম করে খাওয়া যায়। কমলালেবু, আনারস, পাতিলেবু, স্ট্রবেরি কিডনি ভালো রাখে। অ্যাসিড-জাতীয় উপাদান ছাড়াও এই ফলে থাকা ভিটামিন সি কিডনি সুরক্ষিত রাখে।
বেদানা
কিডনি ভালো রাখতে বেদানাও দারুণ কার্যকরী। বেদানায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, যা যে কোনো রকম সমস্যা থেকে দূরে রাখে কিডনিকে। বেদানা কিডনির কার্যকলাপ সচল রাখে। ফলে বেদানা রাখা জরুরি প্রতিদিনের ডায়েটে।
বেরি
স্ট্রবেরি, ব্লুবেরিতে রয়েছে অক্সালেটস নামক অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। এই উপাদান কিডনির সুরক্ষা বজায় রাখে। কিডনি সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যার ঝুঁকি কমায়। অন্যান্য ফলের সঙ্গে তাই নিয়ম করে খেতে পারেন বেরিও। উপকার পাবেন।
ক্যানবেরি জুস
চেরির মতো ক্যানবেরিতেও রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি ও ম্যাগনেসিয়াম। এই দুটি উপাদান কিডনির ক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত ক্যানবেরি জুস খেলে মূত্রথলির সংক্রমণ কমে যায়। সেই সঙ্গে এটি কিডনিও পরিষ্কার করে। এছাড়া কিডনিতে পাথর জমার ঝুঁকিও কমে যায়।
ডাবের পানি
ডাবের পানিতে রয়েছে ভালো পরিমাণে ইলেকট্রোলাইটস। এই ইলেকট্রোলাইটস কিন্তু কিডনির জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজন। আপনি যদি কিডনি সুস্থ রাখতে চান, তবে ডাবের পানি পান করতে হবে। সপ্তাহে একবার বা দুইবার করতে পারেন। আবার পকেটে কুলালে প্রতিদিন পান করতে পারেন।
তরমুজ
প্রতিদিন তরমুজ খেতে পারলেও খুব ভালো। তরমুজের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণ পানি। এছাড়া থাকে লাইকোপেন, পটাশিয়াম। যা কিডনির কার্যকারিতা বাড়ায়। সেই সঙ্গে প্রস্রাবের অম্লতা নিয়ন্ত্রণে রাখে। বেদানার রসেও প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম থাকে। এছাড়া থাকে অ্যাস্ট্রিনজেন্ট। যা কিডনিতে পাথর হতে দেয় না।
বিট রস
কিডনি পরিষ্কার রাখতে বিট রসের জুড়ি নেই। পাশাপাশি এটি আপনার লিভার স্বাস্থ্যকে উন্নত করবে। এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা মুক্ত মৌলি দূর করে। বিট রস প্রস্রাবের অ্যাসিডিটি বৃদ্ধি করে যা কিডনিতে পাথর গড়ে ওঠায় দায়ী ক্যালসিয়াম অপসারণ করতে সাহায্য করে। বিট রস শরীরের রক্তকে পরিচ্ছন্ন করে তুলতে সহায়তা করে, যা কিডনিকে পরিষ্কার রাখে।
ছাড়তে হবে ধূমপান-অ্যালকোহল
ধূমপান, অ্যালকোহল কিডনির অনেক ক্ষতি করে। অনেকের কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ারও ঘটনা ঘটে। কিডনিকে সুস্থ রাখতে চাইলে ধূমপান, অ্যালকোহল পরিহার করতে হবে।
ধূমপান আমাদের শরীরে বিভিন্ন অঙ্গের রক্ত প্রবাহকে ধীর করে দেয়। রক্ত যখন কিডনিতে পৌঁছায়, তখন তাদের স্বাভাবিকভাবে কাজ করার ক্ষমতা কমে যেতে পারে। তাই ধূমপান এবং অ্যালকোহল ছাড়ুন আজই। নইলে কিন্তু বিপদের শেষ থাকবে না।
(ঢাকাটাইমস/২১আগস্ট/এজে)