পাঠ্যপুস্তক সংশোধন কমিটির কামরুল-লুৎফাকে প্রত্যাহার ও শিক্ষাবিদ আলেম অন্তর্ভুক্তির দাবি

ইসলামবিদ্বেষী আখ্যা দিয়ে জাতীয় পাঠ্যপুস্তক সংশোধন কমিটির দুই সদস্য কামরুল হাসান মামুন ও সামিনা লুৎফাকে অপসারণের দাবিতে জানিয়েছেন সচেতন নাগরিক সমাজ। একইসঙ্গে কমিটিতে ইসলামিক স্কলার অন্তর্ভূক্তির দাবি জানানো হয়েছে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে।
বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ইসলাম ও দেশপ্রেমিক প্রায় সব ঘরানার প্রতিনিধির অংশগ্রহণে ‘সচেতন নাগরিক সমাজ’ ব্যানারে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। ডা. মেহেদী হাসানের সঞ্চালনায় বিক্ষোভের প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেন সচেতন নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার মাওলানা আব্দুল হাই মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
মানববন্ধনে ‘আমাদের সন্তানদের গিনিপিগ বানানো চলবে না’, ‘পাঠ্যপুস্তক সমন্বয় কমিটিতে ইসলামবিদ্বেষী কেন?’ ‘পাঠ্যপুস্তকে পশ্চিমা বিকৃত মতবাদ ঢুকানো যাবে না’, ‘পাঠ্যপুস্তকের সংস্কার, আলেম ছাড়া আশঙ্কার’, ‘ইসলামবিদ্বেষী কুলাঙ্গার, কমিটি থেকে বহিষ্কার’ ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিক্ষুব্ধ শ্লোগানসহ মানববন্ধনে অংশ নেন কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও আলেম প্রতিনিধি।
বক্তারা বলেন, প্রায় শখানেক আলেম-হাফেজের শাহাদাত বরণ, প্রায় দেড়সহস্র ইসলামদরদী ছাত্র-জনতার জীবন দান এবং প্রায় ত্রিশ হাজার আহত মানুষের রক্তের বিনিময়ে স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর এই সরকার গঠিত হয়েছে। এই সরকার দেশের সর্বস্তরের মানুষের প্রতিনিধিত্বের সরকার। এই সরকারের সহায়তায় বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর বিকৃত চিন্তা প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা হবে গোটা জাতির সঙ্গে বেঈমানি।
সম্প্রতি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রণীত ও মুদ্রিত সব পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জনে ১০ সদস্যের সমন্বয় কমিটি গঠন করেছে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, এটি ছিলো অভিভাবক ও সচেতন নাগরিকদের প্রাণের দাবি। কিন্তু কাদের ইশারায় কাদের খুশি করার জন্য এমন কিছু ব্যক্তিকে কমিটিতে রাখা হয়েছে যারা বিগত দিনগুলোতে তাদের ক্লাসে ও সামাজিক মাধ্যমে সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধবিদ্বেষী নানা বক্তব্য দেওয়া চরম ধর্মবিদ্বেষী লোক। এমন কিছু নামধারী মহিলাও কমিটিতে আছেন, যারা বাংলাদেশের প্রচলিত আইন ও এদেশের সকল ধর্মের মানুষের মূল্যবোধ পরিপন্থি সমকামিতা ও লিঙ্গ স্বাধীনতার নামে বিকৃত মতবাদের সক্রিয়কর্মী।
অবিলম্বে এই বিকৃত চিন্তার এজেন্টদের পাঠ্যপুস্তক সংশোধন কমিটি থেকে প্রত্যাহার করতে হবে। একইসঙ্গে দেশের সর্বস্তরের মানুষের সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী এবং আলেম প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেম, জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুফতী রেজাউল করীম আববার, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন ইউনুস, জামায়াতের উলামা পরিষদের সভাপতি ড. খলিলুর রহমান মাদানি, ধানমন্ডি তাকওয়া মসজিদের খতিব মুফতি সাইফুল ইসলাম, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. মোখতার আহমাদ, মাওলানা মুহাম্মদ রজীবুল হক, মাওলানা গাজী ইয়াকুব, অনলাইন এক্টিভিস্ট মাওলানা সাইমুম সাদী, ড. হাবীবুর রহমান প্রমুখ।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন মাওলানা আবু মুহাম্মাদ রহমানী, মাওলানা আবদুল গাফফার, মাওলানা নিজাম বিন মুহিব, মাওলানা গাজী সানাউল্লাহ রাহমানী, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. সারোয়ার হোসেন, ডা. শামসুল আরেফীন শক্তি, শরীফ আবু হায়াত অপু, মাওলানা ইসমাঈল হোসেন সিরাজী সহ দেশবরেণ্য বহু গবেষক ও শিক্ষাবিদ প্রমুখ।
মানববন্ধন থেকে বক্তারা দুই দফা দাবি তুলে ৩৬ ঘণ্টার আল্টিটমেটাম দেন। দাবিগুলো হলো—
এক. কামরুল হাসান মামুন এবং সামিনা লুৎফাকে পাঠ্য পুস্তক সংশোধন এবং পরিমার্জন কমিটি থেকে বাদ দিতে হবে।
দুই. একজন আলেম প্রতিনিধি এবং একজন ইসলামপন্থী শিক্ষাবিদ কমিটিতে যুক্ত করতে হবে।
৩৬ ঘন্টার মধ্যে দাবি না মানলে এনসিটিবি ঘেরাও করার হুঁশিয়ারি দেন বক্তারা।
(ঢাকাটাইমস/২৬সেপ্টেম্বর/এসআইএস)

মন্তব্য করুন