পৃথিবীর কোথাও ফ্যাসিস্টদের পুনরুত্থান হয়নি, এদেশেও হবে না: রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘পৃথিবীর কোথাও ফ্যাসিস্টদের পুনরুত্থান হয়নি, এরা সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। ইতালি, জার্মানিসহ পৃথিবীর কোথাও গণতন্ত্রকামী মানুষ ফ্যাসিস্টদের পুনরুত্থান হতে দেয়নি। এ দেশেও হবে না।’
বৃহস্পতিবার ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নিহত তাহমিদ ও মাসুদ রানার পরিবারের সঙ্গে রাজধানীর মিরপুরে সাক্ষাৎ শেষে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমানের নির্দেশনায় আর্থিক সহযোগিতা করা হয়।
রিজভী বলেন, ‘যারা নিজ দেশের শিশুদের রক্ত পান করে তারা কিসের রাজনীতি করবে? তাদের পুনরুত্থান হলে তো আন্দোলনকারী যারা চোখ হারিয়ে অন্ধ হয়েছে, হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ হারিয়ে পঙ্গু হয়েছে তাদেরকে নির্বিচারে হত্যা করবে এবং গণতন্ত্রের পক্ষে যারা সোচ্চার ছিলেন, যাদের গত সাড়ে ১৫ বছর গুম, নির্যাতন এবং গায়েবি মামলায় বন্দি করে রাখা হয়েছিল, তাদের এবং তাদের পরিবারের ওপর নেমে আসবে শেখ হাসিনার প্রাণবিনাশী কর্মসূচি।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে রিজভী বলেন, ‘যে পরিবারগুলো আমরা দেখে গেলাম, তারা ছিল কর্মক্ষম পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। মাসুদ রানার রোজগার দিয়ে তার পরিবার চলতো। তার স্ত্রী অসহায়। তার শিশু কন্যাটি আর্তনাদ করছে। তাহমিদ এম এ পাস করলে তার চাকরি হতো। তার পরিবার নিম্ন-মধ্যবিত্ত। সেমি বস্তির মতো জায়গায় তারা বসবাস করে। কত স্বপ্ন নিয়ে তারা লেখাপড়া করেছে। এরা তো নিজের জীবন দিয়ে গণতন্ত্র কিনেছে। এটা যেন ব্যর্থ না হয়। এ সমস্ত পরিবার যেন না খেয়ে না থাকে। আপনাকে অনুরোধ করব, যেসব পরিবারে শহীদ হয়েছে তাদের কোনো ভাই বা স্ত্রী যেই থাকুক তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি কোনো চাকরি যেন দেওয়া হয়। এটা খুব জরুরি।’
সমবায় ব্যাংকে জমা রাখা ৭৩৯৮ ভরি সোনা ভুয়া মালিক সাজিয়ে বিক্রি করে দিয়েছেন ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান, যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের (দক্ষিণ) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ মহি উল্লেখ করেন রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ‘কী দেশ ছিল এটা! অনাচার অবিচার লুটপাট- এসবের লাইসেন্স দিয়েছিল শেখ হাসিনা, তার কথাই ছিল আমার ক্ষমতা ঠিক রেখে তোরা যা পারিস কর। শেখ হাসিনা তো প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না, তিনি দস্যু ও মাফিয়া সিন্ডিকেটের প্রধান ছিলেন। পুলিশ-সিভিল প্রশাসন প্রত্যেক জায়গায় শেখ হাসিনার আশীর্বাদপুষ্টরা শত শত কোটি টাকার মালিক। প্রশাসনিক কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম খান তার গ্রামের বাড়িতে ছয়তলা বাড়ি। এই তো প্রশাসন সাজানো হয়েছে। এরা এখন বিভিন্ন পর্যায়ে আছে। তারা তো শেখ হাসিনার পক্ষেই কাজ করবে।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘যারা প্রশাসন পরিচালনা করছেন, তাদের নিয়ে নানা কথাবার্তা শুনছি। এটা দুঃখজনক। বিপ্লবী সরকার পৃথিবীর দেশে দেশে দেখেছি ত্বরিত গতিতে দূষিত রক্ত বের করে দেয় সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা বিপ্লবী সরকার বলি। তাহলে কী করে এই সমস্ত ভয়ংকর দুর্নীতিবাজ টাকা লুন্ঠনকারীরা এখনো প্রশাসনে অবস্থান করতে পারে?’
রিজভী বলেন, ‘পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত অতি ধনী লোকের সৃষ্টি হয়েছে। তারা কারা? যারা বিদ্যুৎ উৎপাদনের নামে টাকা লুট করেছে, যারা মেগা প্রজেক্টের নামে টাকা লুট করেছে, যারা পদ্মা সেতুর নামে টাকা লুট করেছে, যারা শেয়ার বাজারসহ বিভিন্ন সেক্টরে লুট করেছে তারা আজ আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। এদের লোকজনই বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করছেন। নতুন করে ফ্যাসিজমের উত্থান ঘটুক দেশের মানুষ তা চায় না।’
শেখ হাসিনা সরকার বিশ্বের কোন দেশের সঙ্গে কী অসম চুক্তি করেছে তা জনগণের সামনে প্রকাশ করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘অসম চুক্তিসমূহ যদি জনসম্মুখে প্রকাশ করা না হয়, তাহলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যোগ্যতা এবং দক্ষতা নিয়ে মানুষ প্রশ্ন করা শুরু করবে। এই পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সমস্ত নিয়ম-কানুনকে অগ্রাহ্য করে যে জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সরকারি সংস্থা কিনে সেটা দিয়ে দেওয়া হলো প্রাইভেট খাতে বসুন্ধরাকে। কারণ বসুন্ধরার হাতে টাকা থাকলে ওটা শেখ হাসিনার টাকা হিসেবেই গণ্য হবে। জনগণের পকেট কেটে জনগণকে রাস্তার ভিখারী বানিয়ে ওরা আজকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সেকেন্ড হোম বানিয়েছে, রাজপ্রাসাদ বানিয়েছে সুখে শান্তিতে থাকার জন্য। এই দর্শন নিয়ে শেখ হাসিনা দেশ চালিয়েছে, সুতরাং তাদের প্রত্যাবর্তন তো জনগণ চায় না। নতুন করে ফ্যাসিজমের আত্মপ্রকাশ হবে এটা তো জনগণ চায় না। জনগণ চায় শেখ হাসিনা অন্য দেশের সঙ্গে যে সমস্ত চুক্তি করেছে সেই চুক্তিগুলো বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রকাশ করুক। কোন দেশের সঙ্গে কি চুক্তি করেছে, সেই চুক্তির মধ্যে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, মুক্ত স্বাধীনতা কিভাবে বিক্রি করেছে।’
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ গণতন্ত্রের পক্ষে হাঁটতে শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেন এই বিএনপি নেতা। এ সময় অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থার করুন।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন আমরা বিএনপি পরিবার-এর উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল, আমরা বিএনপি পরিবার-এর আহ্বায়ক সাংবাদিক আতিকুর রহমান রুমন, সদস্য সচিব মিথুন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আরিফুর রহমান তুষার।
(ঢাকাটাইমস/০৩অক্টোবর/জেবি/এজে)

মন্তব্য করুন