জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগে বোয়ালমারীর কয়েক হাজার পৌরবাসী

আমীর চারু বাবলু, বোয়ালমারী (ফরিদপুর)
  প্রকাশিত : ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৫:৫৩
অ- অ+

প্রথম শ্রেণির পৌরসভা ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, খাল ভরাট করে যত্রতত্র বাড়িঘর নির্মাণ ও স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় সামান্য বৃষ্টি হলেই চরম দুর্ভোগে পড়েন কয়েক হাজার পৌরবাসী। অধিকাংশ এলাকায় তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। নিচু এলাকার ঘরবাড়িতেও উঠে যায় পানি। স্কুলগামী শিশু-কিশোর, বয়োবৃদ্ধ নারী-পুরুষ, অসুস্থ রোগীদের নিয়ে বিপাকে পড়তে হয় এলাকাবাসীপল।

পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় তিন থেকে ছয় মাস দুর্গন্ধযুক্ত নোংরা ও ময়লা আবর্জনা মিশ্রিত পানির মধ্যে বসবাস করতে হয় ওই নগরবাসীকে। ফলে পানিবাহিত রোগ, মশার উপদ্রব, চলাফেরায় দুর্ভোগসহ চরম বিপাকে পড়ে তারা।

১৯৯৯ সালে ঘোষণার পর ২০০০ সালে বোয়ালমারী সদর, গুনবহা ও চতুল ইউনিয়নের প্রায় ১৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ১৯টি মহল্লা নিয়ে গঠিত হয় পৌরসভাটি। বিগত সরকারের আমলে প্রথম শ্রেণির পৌরসভাতে উন্নীত হয় দক্ষিণবঙ্গের প্রাচীন এই জনপদ। প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও ভিশন বা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নানা জটিলতায় অধিকাংশ নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত পৌরবাসী। বিশেষ করে জলাবদ্ধতা সমস্যা বর্তমানে ১৫ থেকে ২০ হাজার পৌরবাসীর গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রতি বছরের মতো এবারও বর্ষা মৌসুমে পৌরসভার স্টেডিয়াম পাড়া, আধাঁরকোঠা জেলেপাড়া, থানা এলাকা, দক্ষিণ কামারগ্রাম ঋষিপাড়া, ছোট কামরগ্রাম মহিলা কলেজ সংলগ্ন এলাকা, ছোলনা দক্ষিণ পাড়া, ৭ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের অধিকাংশ এলাকা, বাজারের ডাকবাংলো এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ এলাকাগুলোতে কোথাও কোথাও হাঁটুপানি আবার কোথাও কোমরপানি জমে থাকে মাসের পর মাস।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, দীর্ঘস্থায়ী জলবদ্ধতার কারণে মহল্লার ভেতরের অনেক সড়কে জমেছে হাঁটুপানি। একটু নিচু এলাকায় ঘরের মধ্যে ঢুকে গেছে পানি। এসব এলাকায় ঘর থেকে বের হতে অনেকে বাঁশের সাঁকো বানিয়েছে। তা দিয়ে পারাপার হচ্ছে তারা। আবার কেউ কলার ভেলা বানিয়ে নিয়েছে।

স্কুলগামী শিশু-কিশোরদের পানি ভেঙে সড়কে এসে পোশাক বদলের দৃশ্য চোখে পড়ার মতো। এসব এলাকায় ঘরের মেঝেতে বা বারান্দায় অস্থায়ী চুলায় চলে রান্নাবান্না। টিউবওয়েল ডুবে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছেন অনেকেই। সবচেয়ে বিপাকে পড়তে হয় কেউ অসুস্থ হলে বা কারো মৃত্যু হলে।

শহরের স্টেডিয়াম পাড়ার খান রফিকুল কাদের জানান, ‘২০-৩০ বছর আগে এমন ছিল না। আমাদের এ এলাকায় গোরস্থান সড়কের পাশ দিয়ে একটি সুরু খাল ছিল, ওই খাল দিয়ে ছোলনা হয়ে পানি দাদুড়িয়া বিলের দিকে নেমে যেত। বর্তমানে যে যার মতো ঘরবাড়ি, দোকানপাট, অফিস নির্মাণ করায় খালটির চিহ্নও নেই। পরে পৌরসভা একটি ড্রেন করে, কিন্তু সেটা ভূমির স্বাভাবিক উচ্চতার চেয়ে উঁচু, ফলে পানি নিষ্কাশিত হয় না।’

আঁধারকোঠার সুবোধ রাজবংশী বলেন, ‘বছরের চার-পাঁচ মাস জলের মধ্যে বাস করতে হয় আমাদের। ঘর থেকে বের হওয়ার উপায় নেই। ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে আতঙ্কে থাকি। মশা-মাছি, জলপচা গন্ধ, এ ছাড়া জল ভেঙে যাওয়া-আসায় পায়ে ঘা হয়ে যায়। এর সমাধান না হলে আমাদের বাপ-দাদার ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে।’

বোয়ালমারী জর্জ একাডেমি সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা শাহনেওয়াজ বুলবুল টুলু জানান, অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, ব্রিজ-কালভার্টের মুখে ব্যক্তিগত জায়গায় বাড়িঘর, অফিস নির্মাণ হওয়ায় পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে প্রায় ছয় মাস পানির মধ্যে বসবাস করতে হয় আমাদের। কী যে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, এটা ভাষায় বোঝানো সম্ভব নয়!’

সাবেক প্যানেল মেয়র মমিন খান জানান, জলবদ্ধতাকে প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে আমরা একটি পরিকল্পনা করেছিলাম, সে কাজ রেললাইন ও ব্যক্তিগত মালিকানা জমিতে অপরিকল্পিত ঘরবাড়ি নির্মিত হওয়ায় কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। পরে বিকল্প পথে পানি নিষ্কাশনের জন্য নতুন করে পরিকল্পনা নেওয়া হয়। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে আমাদের দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেয়া হয়েছে। এখন এটি কী অবস্থায় আছে জানি না।’

অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ঘরবাড়ি নির্মাণের কারণে বেশ কিছু এলাকায় জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়- এ কথা উল্লেখ করে পৌরসভার প্রশাসক ও বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর হাসান চৌধুরী বলেন, জলবদ্ধতা নিরসনে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ চলছে। কাজ করতে গিয়ে কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছে এ জন্য পৌরবাসীদের সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। সবাই এগিয়ে এলে আশা করি অচিরেই জলবদ্ধতার সমাধান করা যাবে।’

(ঢাকাটাইমস/৬নভেম্বর/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
টঙ্গীতে প্রতিবন্ধী তরণীকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করে হত্যা 
নুসরাত ফারিয়ার বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে, নির্দোষ হলে ছেড়ে দেওয়া হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত বাইডেন দুই মাসের মধ্যে মারা যেতে পারেন: লরা লুমার
ফ্যাসিবাদের পতন হলেও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়নি: নজরুল ইসলাম খান
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা