আগাম দাম দিয়েও হয়রান কৃষক
কৃত্রিম সংকট আর সিন্ডিকেটে বাড়ছে বীজ আলুর দাম

দেশের বৃহত্তম আলু উৎপাদন অঞ্চল জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে আগাম জাতের বীজ আলু রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রান্তিক কৃষকেরা। মৌসুমের শুরুতেই বীজ আলুর বাজারে দেখা দিয়েছে দাম নিয়ে অস্থিরতা। বাজারে বীজ আলুর চাহিদা বাড়ায় একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বীজ আলু বিক্রি করছেন। তাদের এই দুর্নীতি আড়াল করতে কোনো রসিদ কিংবা দোকানের মেমো দিচ্ছে না তারা। এই চক্রের কারণে যেমন কৃষকের আলু উৎপাদনে খরচ বাড়ছে, অন্যদিকে বীজ আলু পেতে হয়রানির পোহাতে হচ্ছে তাদের। আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে দ্রুত সংশ্লিষ্টদের বাজার মনিটরিংয়ের দাবি কৃষকদের।
বাজারে চাহিদা যেসব বীজ আলুর
বিআইডিসি বীজ আলুর পাশাপাশি ব্র্যাক, এসিআই, টিএমএসএস, সানসাইন, হীরা, পাওয়ার, কৃষিকল্যাণ, ইয়নসহ বিভিন্ন কোম্পানির বীজ আলু বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে গুণগত মানের ওপর ভরসা করায় ব্র্যাকের বীজ আলুর চাহিদা বেশি বাজারে। এই সুযোগে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরী করে কতিপয় ব্যবসায়ী বস্তাপ্রতি বীজ আলুতে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা বেশি নিচ্ছেন তারা। নিরুপায় কৃষকেরাও বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
বীজ আলুর কৃত্রিম সংকট
উপজেলার কুসুম্বা, আওলাই, বাগজানা ও মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ফসলের মাঠ ঘুরে ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত দুই বছরে আলুর বাম্পার ফলন ও দাম পেয়ে অনেক কৃষকের ভাগ্য বদল গেছে। এ কারণে দিন দিন এ অঞ্চলে আলুর চাষ বেড়েই চলেছে। প্রতিবছর আলু রোপণের সময় বীজ আলু বিক্রেতাদের মধ্যে একটা সিন্ডিকেট তৈরি হয়। কৃষকেরা বীজ আলুর সংকটের কথা চিন্তা করে কেউ কেউ এক-দই মাস আগে অগ্রিম টাকা দিয়ে বীজ আলুর বুকিং রাখেন ব্যবসায়ীর কাছে। আর ব্যবসায়ীরা সংকটের কথা বলে পরে বেশি দামে কৃষকদের কাছে বিক্রি করে।
পাঁচবিবির প্রান্তিক কৃষকদের অভিযোগ
সোনাকুল গ্রামের বাসিন্দা গোলাম রাব্বানী, কুয়াতপুর গ্রামের মিজানুর রহমানসহ একাধিক কৃষক জানান, প্রতি বছরই আলু লাগানোর সময় স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা ডিলারদের সঙ্গে যোগসাজশে আলুর কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন। এ বছর প্রকারভেদে বীজ আলুতে ব্যবসায়ীরা ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত বেশি নিচ্ছেন প্রতি বস্তায়। তারা রশিদ কিংবা মেমো দেয় না। কাউকে দিলেও সেখানে ন্যায্য মূল্য লেখা থাকে।
কৃষকেরা আরও জানান, এখন ব্যবসায়ীর ঘরে বা দোকোন গেলে আলু পাওয়া যাবে না। তারা অনত্র বীজ আলু সরিয়ে রাখেন। বেশি দাম দিলে গোপনে নিজেদের পরিবহনে কৃষকদের বাড়িতে বীজ আলু পৌঁছে দেন। বীজ আলু না পাওয়ার ভয়ে কৃষকরা ব্যবসায়ীদের কারসাজির প্রতিবাদ করেন না বলে জানান তারা।ডিলারে ঘরে কারসাজি, গড়ে ওঠে সিন্ডিকেট
উপজেলা পর্যায়ে নেওয়া বিভিন্ন কোম্পানির ডিলাররা তারা উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে রিটেইলার বা ব্যবসায়ীর সঙ্গে আগাম চুক্তিবদ্ধ হন। রিটেইলার বা ব্যবসায়ীর চুক্তি অনুযায়ী ৩/৪ মাস আগেই বীজ আলুর বুকিংয়ের টাকা জমা নেন ডিলাররা। চুক্তি অনুযায়ী ডিলাররা মৌসুমের শুরুতে ব্যবসায়ীদের বুকিংকৃত বীজ আলু তাদের ঘরে পৌঁছে দিবেন এটাই নিয়ম। কিন্তু অভিযোগ আছে, মৌসুমের শুরুতে বীজ রিটেইলারের ঘরে পৌঁছে দেয় ধীরগতিতে।
রিটেইলার ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ
উপজেলার শালাইপুর, চাঁনপাড়া ও গোড়না এলাকার একাধিক রিটেইলার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তারা মৌসুম শুরুর দু-তিন মাস আগেই বিভিন্ন কোম্পানির ডিলার অথবা কোম্পানির কাছে টাকা দিয়ে বীজ আলু বুকিং দিয়ে থাকেন। কিন্তু ডিলাররা যখন কারসাজি করে তখন ব্যবসায়ীরাও বাধ্য হয়ে ডিলারের কাছে বেশি দামে বীজ আলু সংগ্রহ করেন। পরে সেই আলু আবার লাভ রেখে বিক্রি করেন কৃষকের কাছে।
কষি বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসন যা বলছে
পাঁচবিবি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. লুৎফর রহমান বলেন, এ বছর উপজলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির আলুর চাষ হবে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১ হাজার হেক্টর বেশি। কৃষি বিভাগ সর্বদা কৃষকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। কৃষি বিভাগ থেকে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা কৃষকদের দেওয়া হচ্ছে।
পাঁচবিবি উপজলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহামুদুল হাসান বলেন, ‘আলুর বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে উপজেলা প্রশাসন নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছে। কৃষি অফিসের পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি টিম মাঠ পর্যায়ে বাজার তদারকি করছে। কোথাও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
(ঢাকাটাইমস/১৬নভেম্বর/মোআ)

মন্তব্য করুন