মালদ্বীপে যেভাবে ইসলাম পৌঁছেছে, নাগরিকত্ব দেওয়া হয় মুসলিমদেরই

ইসলাম ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৫ মার্চ ২০২৫, ১২:৪২
অ- অ+

প্রাকৃতিক দ্বীপপুঞ্জ ও নান্দনিক মনোভিরাম সৌন্দর্যভূমি এবং ইসলামিক ঐতিহ্যের এক অনন্য মিশ্রণ মালদ্বীপ। ভারতের সাহায্য সত্ত্বেও, মালদ্বীপ পুরোপুরি মুসলিম দেশ। দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপপুঞ্জটি ভারত মহাসাগরের মধ্যে অবস্থিত। ১১৯২টি ক্ষুদ্র দ্বীপ নিয়ে গঠিত ছোট্ট এ দ্বীপদেশ। যার মধ্যে ২০০টি দ্বীপে মানুষ বসবাস করে। মূলত এটি একটি পর্যটন প্রধান দেশ, তবে এর ইসলামিক ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

রাজধানী মালে, যা সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দ্বীপ, একই সাথে দেশের প্রধান অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। মালদ্বীপের মোট আয়তন প্রায় ২৯৮ বর্গকিলোমিটার। যদিও মালদ্বীপের ভূমি ছোট, এর আশেপাশের সমুদ্র অঞ্চল ব্যাপক। মালদ্বীপের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ তার সাদা বালির সৈকত এবং প্রবাল প্রাচীর যা বিশ্বের সেরা পর্যটন গন্তব্যগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে পরিচিত।

মালদ্বীপে ইসলামই প্রধান ধর্ম। এই দ্বীপরাষ্ট্রে প্রায় ৪,০০০টিরও বেশি মসজিদ আছে। সবচেয়ে বড় এবং বিখ্যাত মসজিদ হলো ‘ইসলামিক সেন্টার মসজিদ, যা মালেতে অবস্থিত। এর আরেকটি নাম ‘গ্র্যান্ড ফ্রাইডে মসজিদ। এটি শুধু মালদ্বীপ নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম মসজিদগুলোর মধ্যে একটি। এখানে জুমার নামাজে একসাথে ৫,০০০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে।

মালদ্বীপে অসংখ্য মাদ্রাসা রয়েছে যেখানে শিশুদের কোরআন এবং ইসলামিক শিক্ষা দেয়া হয়। ইসলামিক সেন্টার ছাড়াও এখানে ইসলামিক শিক্ষা ও গবেষণার বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মাধ্যমে ছাত্ররা উচ্চতর ইসলামিক শিক্ষার সুযোগ পায়। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা পুরোপুরি ইসলামিক সংস্কৃতির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।

ঐতিহাসিক প্রমাণ অনুসারে, মালদ্বীপের ইতিহাস ২,৫০০ বছরেরও বেশি পুরনো। মালদ্বীপের প্রথম বসতি স্থাপনকারীরা সম্ভবত গুজরাটি ছিলেন। এঁরা প্রায় ৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে শ্রীলঙ্কায় এসে বসতি স্থাপন করেছিলেন। সেখান থেকে কেউ কেউ মালদ্বীপে চলে যান। মালদ্বীপের প্রথম বাসিন্দারা ধেবি নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁরা ভারতের কালিবঙ্গন থেকে সেখানে যান। মালদ্বীপের প্রথম রাজবংশ, 'সৌর রাজবংশ' হিসাবে পরিচিত ছিল। কিন্তু সেই ইতিহাস লিপিবদ্ধ তাম্রলিপিগুলি অনেক আগেই হারিয়ে গিয়েছে।

মিশরের বিখ্যাত সাহিত্যিক ও ইতিহাসবিদ মাহমুদ শাকির তার কিতাব ‘আত-তারিখুল ইসলামিতে উল্লেখ করেন, হিজরি ৮৫ সন থেকে মালদ্বীপে ইসলাম আগমন করতে শুরু করে। মানে খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে তৎকালীন উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ানের আমলে মুসলিম ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ইসলাম সেই অঞ্চলে আলো ছড়াতে শুরু করে।

ঐতিহাসিক দলিল-দস্তাবেজ অনুযায়ী, মালদ্বীপে ইসলাম ভিন্নভাবে পৌঁছায়। মরোক্কোর এক পরিব্রাজক ও সোমালিয়ান এক নাবিকের কথা রয়েছে ইতিহাসে। সেটি বিশ্ববিখ্যাত মুসলিম পরিব্রাজক ইবনে বতুতার দেওয়া তথ্য-উপাত্তে জানা যায়।

মুসলিম ইতিহাসবেত্তা ও পরিব্রাজক ইবনে বতুতা ১১৮৩ খ্রিষ্টাব্দে মালদ্বীপ ভ্রমণ করেছিলেন। তার আগমনের আগে দ্বাদশ শতক থেকেই মালদ্বীপে মুসলিম শাসন চলমান ছিল। জানা গেছে, ১১৫৩-১৯৫৩ অবধি (৮০০ বছর) ৯২ জন সুলতান নিরবচ্ছিন্নভাবে দ্বীপরাষ্ট্রটি শাসন করেন।

দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত মালদ্বীপ হিন্দু রাজাদের শাসনাধীন ছিল। পরে এটি বৌদ্ধধর্মের কেন্দ্র হয়ে ওঠে। তামিল চোল রাজারাও এখানে রাজত্ব করেছেন। কিন্তু এরপর ধীরে ধীরে এই দেশ একটি মুসলিম রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হতে শুরু করে। বর্তমানে ইসলাম মালদ্বীপের রাষ্ট্রীয়-ধর্ম। এ দেশে কোনও অ-মুসলিম নাগরিক হতে পারে না।

মালদ্বীপের সংবিধান মোতাবেক দেশটির নাগরিক হতে হলে মুসলিম হওয়া আবশ্যক। ফলে অমুসলিম কোনো নাগরিক সেখানে পাওয়া যায় না। আরব নাবিক-বণিকদের হাত ধরেই মালদ্বীপে সর্বপ্রথম ইসলামের আগমন।

(ঢাকাটাইমস/৫ মার্চ/আরজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
গণতন্ত্রের সমাজভূমি নির্মিত হলেই শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে: তারেক রহমান
শেখ পরিবারের ৫ সদস্যের জমি-বাড়ি ক্রোক, রিসিভার নিয়োগের আদেশ
ধাওয়া খেয়ে পিছু হটল ভারতের চার যুদ্ধবিমান
নিজের ওপর চলা নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে বিচার চাইলেন রাশেদ খান
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা