আছিয়া চলে গেল !!!
বাংলাদেশ কি সাইকোপ্যাথ’দের কবলে পড়েছে ?

আজকে এ লেখনি লিখতে বসে নিজেকে মুজাহিদ না মনে হয়ে কাপুরুষ মনে হচ্ছে।আসিয়া নির্মমভাবে ধর্ষিত হল। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল,এরই মধ্যে কয়েক দিন কেটে গেল। আমি সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার না করায় আছিয়া মামণির জন্য একটা লাইন লিখতেও সক্ষম হই নাই। ছোটকাল থেকে পড়ে আসছি ডাক্তার আশীবার পূর্বে রোগী মারা, বিষয়টি এমনই হলো। আসলে ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর আমাদের হুঁশ হয়। এই লেখাটি আছিয়া মামণিকে উৎসর্গ করে এ প্রবন্ধ টি অবতারণা করছি।
সাইকো হলো একটি উপভাষা যার অর্থ মানসিকভাবে অস্থির বা মানসিক রোগে আক্রান্ত। সাইকো শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ সাইখো থেকে যার অর্থ মানসিক। সাইকোপ্যাথ হলো মানসিকভাবে অস্থির ব্যক্তি বিশেষ করে একজন ব্যক্তি যার ব্যক্তিত্ব অহংকারী এবং অসামাজিক। যার মধ্যে নিজের কর্মের জন্য অনুশোচনার, অন্যদের প্রতি সহানুভূতির অভাব এবং প্রায়শই অপরাধমূলক প্রবণতা রয়েছে। সাইকোপ্যাথি কোন ক্লিনিক্যাল রোগ নির্ণয় নয়, এই শব্দটি প্রায়শই অসামাজিক ব্যক্তিত্ব ব্যাধি (ASPD) এর লক্ষণ গুলিকে বুঝাতে ব্যবহৃত হয়। যেমন কম সহানুভূতি হেরফের প্রবণতা এবং অনুশোচনার অভাব। সাইকোপ্যাথি শব্দটি প্রথম ১৮০০ এর দশকের শেষের দিকে কিছু মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থার লোকদের বুঝাতে ব্যবহৃত হয়েছিল। এই শব্দটি দুইটি গ্রিক শব্দ হতে এসেছে যার মিলিত অর্থ কষ্টগ্রন্থ আত্মা। আজকাল ও সাইকোপ্যাথি একটি বহুল ভাবে গৃহীত ক্লিনিক্যাল শব্দ বা রোগ নির্ণয় নয়। কিছু চিকিৎসক এখন (ASPD) এর একটি গুরুতর উপপ্রকারকে বুঝাতে সাইকোপ্যাথ শব্দটি ব্যবহার করেন। সাধারণত ঐক্যমত্ব হলো এই উপ-প্রকারটি কেবল (ASPD) এর ছাতার অধীনে পরে।
আমার এই লেখনিতে সাইকোপ্যাথ টার্মস নিয়ে আসার কারণ হলো, বাল্যকাল হতে অদ্যাবধি আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের উপর মহল হতে একেবারে নিম্ন পর্যায় পর্যন্ত দেখে আসছি কেউ একটা কথা বলে আসছে, তো এ কথা সঠিক বা বেঠিক হোক সে এটাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায়। এমনটি ও দেখে আসছি যে কথাটি বা সিদ্ধান্তটি শতভাগ ভূল হলেও সিদ্ধান্তকারী বলে আসছেন আমি যেটা একবার মুখ দিয়ে বের করি, ওটা বাস্তবায়ন করেই ছাড়ি।অনেকটা বাংলা সিনেমার খল চরিত্রের মতই। আর এই অসুস্থ ধ্রুব মনোভাবের কারণে বাংলাদেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পারিবারিক জীবনে কালো ছায়ার আঁধার কাটছে না। এটা যে কোনো মহামারি হতেও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।যার অন্যতম কারণ হলো সৃষ্টিকর্তা আমাদের ব্রেন কে এতটা তীক্ষ্ণ ও শক্তিশালী করে সৃষ্টি করে নাই যে, একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলে উহা সর্বক্ষেত্রে যথাযথ হতে পারে। যার অন্যতম প্রমাণ হলো বিচারিক আদালত এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগনের আদালতে-র সিদ্ধান্ত অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উচ্চ আদালতে অক্ষুন্ন থাকেনা। প্রায়শই দৃষ্টিগোচর হয় যে নিম্ন আদালতের মৃত্যুদন্ডাধীন আসামি উচ্চ আদালতে বেকোসুর খালাস পাচ্ছে। কি পরিমান ভুল মস্তিষ্ক হলে এমনটি হয়। নিম্ন আদালতের মৃত্যুদন্ডাধীন আসামী উচ্চ আদালতে শাস্তি কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিতে পারে। বেকসুর খালাস মানে কি? আপিল ব্যবস্থা না থাকলে নিশ্চয়ই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়ে যেত। একজন মেধাবী ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিচারকের বেলায় এমন ভুল হলে অন্যদের বেলায় কি হতে পারে? সাম্প্রতিক সময়ে একশ্রেণীর অধিক বুঝ-বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তিরা বলেন আমাকে বুঝানোর পূর্বে নিজেকে আগে বোঝান। আমি মনে করি এটা অহংকারী মনোভাব।
সৃষ্টিকর্তার পরে রাজনীতিবিদগন একটা দেশের ভাগ্য নির্ধারণে ভূমিকা রাখেন। বিচারক ও বিচারপতিদের ভাগ্য ও তাদের হাতে। আমি মনে করি স্বাধীনতার পর হতে অদ্যাবধি বাংলাদেশে সাইকোপ্যাথ ধরণের রাজনীতিবিদের সংখ্যাই বেশি রয়েছে। যারা অদ্যাবধি তাদের অহংকারী মনোভাব দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে।
সর্বশেষ বাংলাদেশের নতুন ইতিহাস জুলাই গণঅভ্যুত্থান। এ অভ্যুত্থানকে একশ্রেণীর ছাত্র জনতা বিপ্লব হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। বিপ্লবের "ব" যদি কোন ব্যক্তি বুঝে থাকেন তবে এটাকে বিপ্লব বলতে পারেন না। অথচ একশ্রেণীর লোক প্রকাশ্য দিবালোকে বিপ্লবের দোহাই দিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটাচ্ছেন। অন্যদিকে জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছাত্রদের উপর বর্বরচিত হামলা হয়েছে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইডেন কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের উপর বীভৎস হামলা ও যৌন নিপীড়ন হয়েছে। ইডেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিছু ছাত্রী তাদের ছেড়া জামা কাপড় নিয়ে আমার কাছে এসেছিল। আমাকে এগুলো দেখিয়ে অশ্রু সজল কবে বলল ভাইয়া এরপর ও কি বসে থাকবেন ? গায়েবের মালিক সৃষ্টিকর্তা জানেন, কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা, শতভাগ আমি নিশ্চিত নয় । তবে বাহ্যিকভাবে আমার মনে হয়েছে ওই সব ছাত্রীদের উপর নির্যাতন হয়েছে। আমি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এর রিকমেন্ডেড একমাত্র ক্যাম্পাস বেইসড্ গণসচেতনতামূলক কর্মসূচি আয়োজনের জন্য কডিনেটর হওয়ায় এসব ছাত্রী আমার নিকট এসেছিল। আমি এইসব ছাত্রীদের সামনে ছাত্রলীগ এর সেন্ট্রাল কমিটির দায়িত্বশীল কে প্রশ্ন করি। তারা সদউত্তর দিতে সক্ষম হন নাই। তাই আমাকে তাদের বিরুদ্ধে কলম যুদ্ধে নামতে হয়। এ জাতি এসব ন্যাক্কারজনক ঘটনা প্রত্যক্ষ করলেও এক শ্রেণির অতি স্বপক্ষের শক্তির লোক এখনো বলছেন এসব মিথ্যা। গত ৫ দিন পূর্বেই বিদেশে বসে বাংলাদেশের অন্যতম একজন নেত্রী অনলাইনে বিবৃতি দিচ্ছেন তাদের সংগঠন এসব কিছুই করে নাই। বরং আন্দোলনকারীরা এসব করে ছাত্রলীগের উপর কালেমা লেপন করেছে। এসব মেয়াদ উত্তীর্ণ গঞ্জিকা সেবন করার প্রতিক্রিয়া? নাকি সাইকোপ্যাথ আমি নিশ্চিত নই। তবে সাইকোপ্যাথ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের এসব একপেশে কর্মকান্ডকে অনেকেই নৈতিক স্খলন, মুনাফেকি, ধর্মীয় শিক্ষার অভাব, পারিবারিক শিক্ষার অভাব,দৈন্যতাসহ অনেকেই অনেক ধরনের কারণ বলে আখ্যায়িত করেন। তবে আমার মনে হয় মানসিক ব্যাধি বা সাইকোপ্যাথ। কারণ আই-কিউ লেভেল কম- বিশিষ্ট প্রাণী যেমন- ভেড়া জাতীয় প্রাণী সেও সাদাকে সাদা এবং কালাকা কালা দেখে ও বুঝে। এ যোগ্যতা বাংলাদেশের ৯৮% ব্যক্তির মধ্যে বিদ্যমান থাকার কথা। প্রায়শই প্রত্যক্ষ করি বাংলাদেশের একেক জন রাজনীতিবিদ যারা কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকার পর যে সব ঘটনা প্রত্যক্ষ করছেন এবং নিজে বক্তব্য দিচ্ছেন, কর্মসূচি থেকে বের হওয়া মাত্রই গণমাধ্যমকে বলছেন আমি এ ধরনের কোন কথা বলিনি। সাংবাদিক তার নিজের দেওয়া বক্তব্য-র ভিডিও ফ্রুটেজ তাকে দেখালেও তিনি বলছেন এটা এডিট করা। সৃষ্টিকর্তার দেওয়া এত সুন্দর চোখ, কান ও ব্রেইন দিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে প্রতিনিয়ত ঘটনা প্রবাহকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টাকারী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে কি বলে সংজ্ঞায়িত করব আমি ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।
সর্বশেষ বাংলাদেশের নেক্কারজনক ঘটনা হলো স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম অমর স্বাক্ষী ৩২ নম্বর, এ বাড়িটি প্রকাশ্য দিবালোকে মিছিল করে এসে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল।বিদেশ পলাতক একজনের নির্দেশে। যারা ঘটনাটি ঘটিয়েছেন তাদের একটা অংশ নিজেদেরকে তৌহিদী জনতা বলে আখ্যায়িত করছেন। এই তৌহিদি জনতা একজন ব্রাহ্মণকে তাদের পীর সাহেব থেকেও বেশি মানেন। এই ব্রাহ্মণ প্রায়শ ইসলামের পক্ষে খুব বয়ান তৈরি করে, কিন্তু তিনি নিজে ইসলাম ধর্ম বিশ্বাস করে না, বিশ্বাস করলে নিশ্চয়ই নিজেকে মুসলিম দাবি করতেন। আমার মনে হচ্ছে তিনি পৃথিবীর একমাত্র মুসলিম-এর পীর একজন ব্রাহ্মণ। হয়তো গিনেসবুকে এই ব্রাহ্মণ বাংলাদেশে কথিত তৌহিদি জনতার পীর হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন। ৩২ নম্বর-এর ঘটনায় পুরো বাংলাদেশের মানুষ সুস্পষ্ট ভাবে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এ ক্ষত দীর্ঘদিন আমাদের বয়ে বেড়াতে হবে। আমরা কতটা নির্বোধ, অসামাজিক ও হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হলে একজন পলাতক ব্যক্তির নির্দেশে এমনটি করতে পারি। বাল্যকালে আমি রাস্তাঘাটে একটি গান খুব শুনতে পেতাম, তা হলো হায়রে কপাল মন্দ চোখ থাকিতে অন্ধ। না হয় ইট বালি ও সিমেন্টের মত জড় পদার্থ আগুন দিয়ে ও বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে কি আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায়? নাকি সৃষ্টিকর্তা আমাদের কপাল মন্দ করে এমনটি করাচ্ছেন আমাদের দিয়ে, উহা আমার বোধগম্য নয়। জড় পদার্থ গুড়িয়ে দিয়ে তারা আত্মতৃপ্তির ঢেকুর দিয়ে বলছে এটা নাকি তাদের প্রাথমিক বিজয়।
এইটুকু বোধশক্তি ও তাদের নাই যে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে এই ঘটনায়। এই ধরনের ঘটনায় অনেকে বেকার হয়েছেন। একদিন না একদিন এ ভবন নতুন আঙ্গিকে মাথা উচু করে দাঁড়াবে, তখন পুনরায় কয়েক কোটি টাকা ব্যয় হবে।
আমরা মানুষ হিসেবে মানবতা আমাদের নামের সাথে রয়েছে।সম্প্রতিক সময়ে নারী ও শিশু দর্শনের মত ঘটনা নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সব ঘটনা নিয়ে কম রাজনিতী হচ্ছে না। একটা পক্ষ এইসব নিয়ে ও মেরুকরণ করার চেষ্টা করেছে। এক পক্ষ বলছে এইসব স্বাধীনতা বিরোধীরা করেছে। আরেকপক্ষ বলছে দেশকে অস্থিতিশীল করতে পলাতক আওয়ামীলীগ করছে। ঘটনা কিন্তু প্রকাশ্যে দিবালোকে ঘটছে। প্রকৃত অপরাধীর নাম কেউ মুখে নিচ্ছেনা। বাল্যকালে গ্রামের মুরুব্বিরা বলতেন ভাসুরের নাম বুঝি মুখে নিতে নেই।
ব্যক্তি জীবনে আমি সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করিনা,তথ্য জানার উদ্দেশ্যে দুইটি ফেসবুক আইডি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির নামে খোলা হয়েছে, এসব আইডি হতে প্রচার প্রচারণা-র উদ্দেশ্যে কোন কিছু পোস্ট করা হয় না।
সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক মাধ্যমের কু অভাবে ৩২ নম্বর, উচ্চ আদালত, নিম্ন আদালসহ অসংখ্য ভবনে আক্রমণ হয়েছে।
অনেকে এই সামাজিক মাধ্যমে কয়েকটি শব্দ পোস্ট করার কারনে ছাত্র-জনতা ও সরকারের রোষানলে পড়েছে। এসব তুচ্ছ কারণে চাকুরীও হারিয়েছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সাবেক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম উর্মি। অর্থাৎ দিন যত যাচ্ছে এই সামাজিক মাধ্যমের কারণে প্রকারান্তরে জাতি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। বিচ্ছিন্নতা বাদেরও জন্ম নিচ্ছে। তুচ্ছ ঘটনার কারণে উর্মির বিরুদ্ধে সাত ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়েছে। মামলাটি অতি সাধারণ হলেও বিদ্যুৎ গতিতে এগোচ্ছে। মামলাটি শুনানির প্রতি তারিখে তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করে, দ্বিতীয় তারিখে চার্জ গঠন নিশ্চিত হয়ে যায়। তার বিরুদ্ধে বিদেশে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে।
বাংলাদেশে নারীর প্রতি অসহনশীলতা ক্রমবর্ধমান হারে বেড়ে চলেছে। এই সমস্যার সমাধান আজ সুদূর পরাহত। সমস্যার দায় ও কেউ নিতে চায় না। সমস্যার কারণ চিহ্নিত করার প্রচেষ্টার বড়ই অভাব। নিজের ভুল নির্ণয় করতে কেউ রাজি নয়, ভুল শুধরানো অকল্পনীয়।
ধর্ষণের বিষয়ে যদি একজন আলেমকে প্রশ্ন করি তিনি উত্তর দেন মেয়েরা শালীন পোশাক না পড়ার কারণে ধর্ষিত হয়। আবার যদি প্রশ্ন করি সাত বছরের মেয়ে শিশু ধর্ষিত হল কেন? উত্তর দেন বাবা-মা সতর্ক থাকলে এমনটি হত না। এবার প্রশ্ন করি বিপরীত লিঙ্গ বাদই দিলাম। আপনাদের সমলিঙ্গ মাদ্রাসার ছোট ছোট ছেলে বাচ্চাগুলোকে ওস্তাদদের হাতে বলৎকার হতে হয় কেন? তিনি উত্তর দেন এটা শয়তানের ধোকা। নিজেদেরকে জাহির করার জন্য এক শ্রেণীর আলেম ওলামা এ বলতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না যে, আলেমগন দ্বীনি লাইনে ধনী,আর ডাকাত তো ধনীর বাড়িতে ডাকাতি করতে আসে,তাই ইবলিশ শয়তান আলেমদেরকে বেশি ধোঁকা দেয়। এরপর যদি প্রশ্ন করি শয়তানের ধোঁকা হতে পরিত্রান পেতে কোরআন হাদিসে অনেক আমল আছে, এসব আমলে কাজ হচ্ছে না? এবার ওনারা ফতোয়া দিয়ে দেন, এ প্রশ্ন যিনি করছেন, তিনি আলেম-ওলামা বিদ্বেষী, ইসলাম বিদ্বেষী,কবে যে কাফের ফতোয়া দিয়ে দেয় আমি চিন্তায় আছি। ধর্ষণের বিষয়ে হয়তো দর্শনকারীদের কে প্রশ্ন করলে তারা উত্তর দিবে ইবলিশ শয়তান দায়ি। হয়তো ইবলিশ শয়তানকে প্রশ্ন করলে সে উত্তর দিবে, এই সব কর্মকাণ্ড করার জন্য সৃষ্টিকর্তা আমাকে ক্ষমতা দিয়েছেন, অর্থাৎ এই সব করানোর লাইসেন্স আমার আছে,কাজেই এইগুলির জন্য আমি দায়ী নই।
বাংলাদেশে কেউ দায় গ্রহণ না করার প্রবণতা দেখে আমি আৎকে উঠি, কবে যে ধর্ষণকারীরা একত্রিত হয়ে হাইকোর্টে রিট করেন এই বলে যে , ধর্ষণের জন্য ইবলিশ শয়তানকে দায়ি করে নির্দেশনা প্রদান করা হোক এবং ধর্ষণকারীদেরকে বেকসুর খালাস করার নির্দেশনা প্রদান করা হোক।
এইসব সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশে শক্তিশালী সিভিল সোসাইটি বা অভিভাবকের প্রয়োজন ছিল। অন্যান্য দেশের সিভিল সোসাইটি জাতির ক্লান্তি লগ্নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের দেশে অধিকাংশ সুশীল সমাজ পরিচয় দানকারীরা কোন না কোন দলের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন বা ষড়যন্ত্রেরই অংশ। বাংলাদেশের জাহাজ সোমালিয়ার দস্যুরা ছিনতাই করার পর আমি ফ্রিডম ইন্টারন্যাশনাল এর সোমালিয়া শাখায় এই বিষয়ে সহযোগিতার নিরিখে কাজ করতে সক্ষম হই। উগান্ডা সহ যেসব দেশকে আমরা ব্যর্থ হিসেবে জানি, ঐসব দেশের সঙ্গেও আমি কার্যক্রম করতে সক্ষম হই। ঐ সকল দেশের সুশীল সমাজ ও বাংলাদেশের সুশীল সমাজ বা সিভিল সোসাইটি হতে ও শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
উপযুক্ত বিষয়গুলি আমাদের সাইকোপ্যাথিক বা অসামাজিক রোগে আক্রান্ত হাওয়ায় প্রভাব কিনা,একবার কি খতিয়ে দেখা যায় না ?
এমতাবস্থায় আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি সোনার বাংলাদেশ আজ রাডার বিহীন জাহাজে পরিণত হয়েছে। আজ আমরা অভিভাবকহীন জাতি। আরো সময় অতিবাহিত হলে হেনরি কিসিঞ্জারের দেওয়া তলা বিহীন জুরি উপাধী পেতে কতক্ষণ। আমরা সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণ করব, নাকি সবাই তৌহিদী জনতার ব্যানারে সমস্বরে সৃষ্টিকর্তাই আমাদের একমাত্র অভিভাবক বলে আওয়াজ তুলে আত্মতুষ্টি পাবো।
লেখক: প্রেসিডেন্ট, আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী সংগঠন ফ্রিডম ইন্টারন্যাশনাল এন্টি অ্যালকোহল

মন্তব্য করুন