হাজারো রোগ দূর করে আপেল খেলে, দ্রুত ওজনও কমে

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৪১
অ- অ+

প্রতিদিন একটি করে আপেল খেলে সারা জীবনের জন্যে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। আপেল এমন একটি ফল যার মধ্যে রয়েছে ভরপুর পুষ্টিকর উপাদান যা শরীরের জন্যে অত্যন্ত উপকারী। ভরপুর এন্টি অক্সিডেন্ট, ভিটামিন, মিনারেল ও ফাইবারে সম্পন্ন এই আপেল খুব সহজেই বাজারে পাওয়া যায় ও পুষ্টির তুলনায় এর দাম এমন কিছুই বেশি নয়।

গবেষকদের মতে, দিনে একটা ফল, যেমন আপেল গণস্বাস্থ্য বদলে দিতে পারে। যেসব ফলে ভিটামিন, মিনারেল ও ফাইবারের সুসমাহার রয়েছে সেগুলি উৎপাদন বাড়লে ডায়াবেটিস এবং ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই আরও সহজ হবে।

আপেলের বৈজ্ঞানিক নাম হল ম্যালাস ডোমেস্টিকা এবং এই ফল সারা বছর ধরে পৃথিবীর সর্বত্র দেশগুলোতে আমদানি ও রপ্তানি করা হয়ে থাকে। ডাক্তারদের মতে প্রতিদিন যেসব সবজি বা ফল অবশ্যই খাওয়া উচিত তার মধ্যে আপেল হল অন্যতম।

টাইপ টু ডায়াবেটিসকে দূরে রাখতে আপেল অবিশ্বাস্য ভূমিকা নিতে পারে। সম্প্রতি আপেলের সম্পর্কে চমকপ্রদ তথ্য তুলে ধরেছেন বিজ্ঞানীরা। সেখানে দেখা যাচ্ছে টাইপ টু ডায়াবেটিসকে দূরে রাখতে আপেল অবিশ্বাস্য ভূমিকা নিতে পারে। গবেষণায় প্রমাণিত, দিনে একটা আপেল, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি নেমে আসবে ২৫ শতাংশে।

এছাড়া আপেলের উপকারিতা নানারকমভাবে হার্ট, মস্তিস্ক, পেট, হাড় ও চোখের ক্ষেত্রে বার বার প্রমাণিত হয়েছে। ইওরোপীয় দেশগুলোর থেকে ২৩০০০ জনকে বেছে নিয়ে এই পরীক্ষা চালান। পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল স্টাডিতে।

বিশেষজ্ঞের মতে, যারা প্রতিদিন ৬৬ গ্রাম করে আপেল খান তাদের টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ২৫ শতাংশে নেমে আসে।

পুষ্টিবিজ্ঞানের রীতিতে সকাল বেলা আপেল খাওয়ার উপযুক্ত সময়। কারণ, আপেলের খোসা আঁশ ও পেকটিন সমৃদ্ধ। অনেকেরই অপর্যাপ্ত ঘুম, দেরিতে ঘুম ইত্যাদির কারণে হজমজনিত সমস্যা দেখা দেয়। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে আপেল খাওয়া সবচেয়ে ভালো। অন্যন্য ফলের তুলনায় সকালে আপেল খাওয়া অন্ত্রের ক্রিয়া সুষ্ঠভাবে নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

দ্বিতীয়ত, পেকটিন ল্যাক্টিক অ্যাসিড সুরক্ষিত রাখতে এবং কোলনে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া ভালোভাবে বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। যা পরবর্তিতে পাচনতন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও পেকটিন টক্সিনের পরিমাণ কমাতে এবং ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান কারসিনোজেন্স দূর করতে সাহায্য করে।

বিকাল বা রাতে আপেল খাওয়া হলে তা হজম ও অন্ত্রের কাজে ব্যাঘাত ঘটায়। এর অর্থ হল, রাতে আপেল খাওয়া হলে গ্যাসের সমস্যা হয় এবং পরে অনেকটা সময় অস্বস্তি সৃষ্টি করে। আপেলের জৈব অ্যাসিড পাকস্থলির অ্যাসিডকে সাধারণের তুলনায় বাড়িয়ে তোলে এবং অন্ত্রের ক্রিয়ায় সাহায্য করে।

সকালে ঘুম থেকে উঠে অথবা দুপুরের খাবারের আগে নাস্তা হিসেবে আপেল খেলে বেশি উপকার হয়। যা পুষ্টি সরবরাহে, ওজন কমাতে, ত্বক ভালো রাখতে, হজমক্রিয়া বাড়াতে এবং দীর্ঘসময় শরীর ভালো রাখতে সাহায্য করে।

ভিটামিন সি, ফাইবার সমৃদ্ধ ফল। তাই কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের সময় এই ফল খাওয়া খুব উপকারী। আপেলের হাই ফাইবার, সহজে হজম হওয়ার ক্ষমতা, প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে।

হার্টের অসুখ এবং লিভারের অসুখ থেকেও আমাদের বাঁচানোর ক্ষমতা আছে আপেলের মধ্যে। ক্যালোরি কাউন্ট অত্যন্ত কম হওয়ায় ওজন কমানোর সহায়ক হিসেবেও কাজ করে আপেল।

প্রোটিন, পটাসিয়াম, আয়রন ও ভিটামিন বেশি মাত্রায় থাকে। লালের তুলনায় সবুজ আপেলে দ্বিগুণ বেশি পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে। তবে লাল আপেলে কিন্তু সবুজের থেকে অনেক বেশি পরিমাণ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে।

যারা অ্যানিমিয়ায় ভুগছেন তারা যদি রোজ আপেলের রস খান তবে উপকার পাবেন।যারা অ্যানিমিয়ায় ভুগছেন তারা যদি রোজ আপেলের রস খান তবে উপকার পাবেন।

মাইগ্রেন, মাথা ধরার মত নানা রোগ সেরে যায়। আপেলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। এর মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক অ্যান্টি অক্সিডেন্ট শরীরের যে কোনও রকম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

শরীরের নার্ভের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এই ভিটামিন। সব মিলিয়ে শরীর ভাল রাখতে সাহায্য করে। আপেলের মধ্যে রয়েছে বি কমপ্লেক্স ভিটামিন। এই ভিটামিনের কাজ হল শরীরে লোহিত রক্ত কণিকা সৃষ্টি করা।

হাঁপানির তীব্রতা কমাতে আপেল বেশ কার্যকর। তাছাড়া নিয়মিত কী পরিমাণ আপেল খাচ্ছেন সেটার ওপর নির্ভর করে হাঁপানির সমস্যা কমে। ‘অ্যাডভান্সেস ইন নিউট্রিশন’ জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, প্রায় ৬৮ হাজার নারীকে নিয়ে করা গবেষণায় দেখা যায়, যারা দিনে একটি আস্ত আপেল গ্রহণ করেছেন অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে তাদের হাঁপানির তীব্রতা কমেছে সবচাইতে বেশি। যারা দিনে একটি আপেলের ১৫ শতাংশ খেয়েছেন তাদের রোগের তীব্রতা কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ।

প্রতিদিন আপনার মন মানসিকতা কেমন থাকবে তা অনেকাংশে নির্ভর করে অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উপরেই। হুটহাট পেট ব্যথা, পেট ফোলা, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদির ব্যাখ্যা হয়ত অন্ত্রের সমস্যাই। অন্ত্রের অবস্থা ভালো রাখতে কার্যকর একটি ‘প্রোবায়োটিক’ উপাদান হল ‘পেকটিন’ যা মেলে আপেল থেকে।

ঝটপট ওজন কমাতে চাইলে নিয়মিত আপেল খেতেই হবে। কারণ, এতে রয়েছে ফাইবার এবং পানির ভাণ্ডার। যেই কারণে এই ফল খেলে পেট অনেকক্ষণ ভর্তি থাকে। ফলে খিদে পায় কম। আজেবাজে খাওয়ার প্রবণতা কমে। যার দরুন নিম্নমুখী হয় ওজন। শুধু তাই নয়, এই ফলে এমন কিছু পলিফেনলস রয়েছে যা কিনা ওজন কমানোর কাজে ভীষণই কার্যকরী। তাই আর সময় নষ্ট না করে রোজের পাতে অবশ্যই একটা আপেল রাখুন। তাতেই উপকার পাবেন হাতেনাতে। এক মাসের মধ্যেই কিছুটা ওজন ঝরে যাবে।

উপকার পেতে চাইলে খোসা শুদ্ধ আপেল চিবিয়ে খেতে হবে। তাহলেই এই ফল খেয়ে পাবেন উপকার। মনে রাখবেন, এই ফলের জুস করে খেলে কোনও লাভ হবে না। তার বদলে বাড়বে ওজন। সেই সঙ্গে সুগারও ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে। তাই গোটা আপেল চিবিয়ে খান। আপেলের বীজ না খাওয়াটাই ভালো৷ যদি পারেন, এড়িয়ে যাবেন। কারণ, এতে আলাদা কোনো স্বাস্থ্যগত উপকার নেই। তবে আপেল প্রতিদিনই কয়েকটি করে খেতে পারেন।

(ঢাকাটাইমস/১৫ এপ্রিল/আরজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
গণতন্ত্রের সমাজভূমি নির্মিত হলেই শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে: তারেক রহমান
শেখ পরিবারের ৫ সদস্যের জমি-বাড়ি ক্রোক, রিসিভার নিয়োগের আদেশ
ধাওয়া খেয়ে পিছু হটল ভারতের চার যুদ্ধবিমান
নিজের ওপর চলা নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে বিচার চাইলেন রাশেদ খান
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা