সীমানা লঙ্ঘন করে বান্দরবান সীমা‌ন্তে আরাকান আর্মির জল‌কে‌লি উৎসব, যা জানা গেল

বান্দরবান প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২১ এপ্রিল ২০২৫, ১৮:৫৬
অ- অ+

বান্দরবানের থানচির রেমাক্রি ইউনিয়নের ঝিরিমুখ এলাকায় জলকেলি উৎসব করেছে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সদস্যরা। বুধ ও বৃহস্পতিবার পাহাড়িদের নিয়ে আরাকান আর্মির সদস্যরা এ জল‌কে‌লি উৎসবে অংশ নেন। যা নিয়ে শুরু হয়েছে নানান গুঞ্জন।

প্রশ্ন আসছে— কীভাবে অন্য একটি দেশের সশস্ত্র গোষ্ঠী বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে এমন অনুষ্ঠানে অংশ নিল? কারায় বা এমন অনুষ্ঠানে নির্দেশ দিল? গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কি বিষয়টি জানতো?

ইউনিফর্ম ও অস্ত্রধারী আরাকান আর্মি বাংলাদেশের সীমানা লঙ্ঘন করায় উদ্বেগ জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে উদ্বেগ জানায় দলটি। তারা বলছেন— আরাকান আর্মি বাংলাদেশের সার্বভৌম সীমা লঙ্ঘন করে বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলার তিন্দু ইউনিয়নের রেমাক্রি মুখ এলাকায় অনুপ্রবেশ করে স্থানীয় উপজাতিদের নিয়ে জলকেলি উৎসব পালন করে। দেশের সীমানার ভেতরে অনুপ্রবেশ করে উৎসব করার মাধ্যমে তারা মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেছে। এ ঘটনা আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর মারাত্মক হুমকি।

এদিকে দেশের অভ্যন্তরে হওয়া অনুষ্ঠানটির ব্যানার বার্মিজ ও ইংরেজি ভাষায় (আরকা ওয়াটার ফেস্টিভ্যাল) লেখা ছিল। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সীমান্ত পাহারার দায়িত্বে থাকা সদস্যদের তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কোনো দায়িত্বপালন করতে দেখা যায়নি। তারা নির্বিকার ছিলেন। যার কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগা‌যোগ মাধ‌্যমে ভাইরাল হ‌য়ে‌ছে।

জল‌কে‌লি উৎসব অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন— উপজেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারাও। তাদের মধ্যে অন্যতম থানচি উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও বান্দরবান জেলা পরিষদের সদস্য খামলাই ম্রো, ১ নম্বর রেমাক্রি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুইশৈইথুই মারমা রনি, ২ নম্বর তিন্দু ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মংপ্রু মারমাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা।

স্থানীয়রা জানান, বাংলাদেশের বান্দরবান সীমান্তের ১০ কিলোমিটার ভেতরে আরাকান আর্মির সদস্যরা অনুপ্রবেশ ক‌রে। প‌রে তারা থানচি উপজেলার তিন্দু ইউনিয়নের রেমাক্রি ঝি‌রিমুখ এলাকায় স্থানীয় পাহাড়িদের নিয়ে গত ১৬ ও ১৭ এপ্রিল জল‌কে‌লি উৎসবে অংশ নেন। উৎসব শেষে আরাকান আর্মির সদস্যরা তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশকিছু ছবি ও ভিডিও শেয়ার করেন, পরে যা ভাইরাল হয়।

তারা আরও জানান, বান্দরবানের থানচির রেমাক্রি মুখ এলাকায় মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি ও তাদের রাজনৈতিক শাখা ইউনাইটেড লীগ অফ আরাকানের (ইউএলএ) অর্থায়ন ও তত্ত্বাবধানে আরাকান ওয়াটার ফেস্টিভ্যাল নামে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে ভিডিওতে দেখা গেছে, উৎসবে আরাকান আর্মির ইউনিফর্মধারী ও অস্ত্রধারী সদস্যরা প্রকাশ্যে অংশ নেন এবং মঞ্চে অবস্থান করেন। অনুষ্ঠানের আশেপাশে ছিল বাংলাদেশ ও রাখাইনের ইউএলএ ও আরাকান আর্মির পতাকা। আর এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি মারমা ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ উপস্থিতি ছিলেন। এছাড়া স্থানীয় রেমাক্রি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মুইশৈ থুই মারমা ও তিন্দু ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মং প্রু অংকেও অনুষ্ঠানে দেখা গেছে।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, অনেকদিন ধরে আমরা এ ধরনের একটি সম্মিলিত মিলনমেলার আয়োজনের চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। অবশেষে আরাকান আর্মির সহায়তায় আমরা স্বাধীনভাবে এই উৎসবের আয়োজন করতে সক্ষম হয়েছি।

এ সময় আগত অতিথিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বক্তারা বলেন, ‘এখন সময় এসেছে আমা‌দের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। অতীতে আমরা বিচ্ছিন্ন ছিলাম। কিন্তু এখন আমাদের প্রয়োজন সম্পূর্ণ ঐক্য। আসুন সব বিভেদ ভুলে আমরা একত্রিত হই এবং সম্মিলিতভাবে সামনে এগিয়ে যাই।’

অনুষ্ঠানে থানচি উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও বান্দরবান জেলা পরিষদের সদস্য খামলাই ম্রো তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমি এই উৎসবে উপস্থিত থাকতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি এবং এই উৎসবের যারা আয়োজক তাদের আমার ব্যক্তিগত ও পার্বত্য জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।’

পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে খামলাই ম্রো’র কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি ঢাকাটাইমসকে জানান, আমাকে আরকান আর্মি দাওয়াত দেয়নি, দাওয়াত দিয়েছে এলাকার ছেলেরা। সেজন্য আমি সেখানে গিয়েছি। উৎসব আরকান আর্মির উপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন— ‘এখানে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অনেক কর্মকর্তাও ছিলেন।’

বান্দরবানের পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ কাওছার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আরাকানরা বান্দরবানের থান‌চি‌তে বৈসা‌বি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছে এমন একটি তথ্য আমরা জানতে পেরেছি। তবে বিষয়টি কতটুকু সত্য তা উদঘাটন করতে আমাদের গোয়েন্দারা কাজ করছে। জায়গাটি দুর্গম তাই তথ্য উদঘাটনে সময় লাগবে।’

সেখানে দায়িত্বে থাকা একজন কর্মকর্তা নামপ্রকাশ না শর্তে বলেন, ‘রেমাক্রি এলাকা আগে থেকে আরাকানদের বসতবাড়ি রয়েছে। মিয়ানমারে যুদ্ধ চলাকালে আহত আরাকানরা সেখানেই অবস্থান নিয়ে চিকিৎসা নিয়েছে।’

(ঢাকাটাইমস/২১এপ্রিল/এমআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
কলকাতায় হোটেলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, ১৪ জনের মরদেহ উদ্ধার
তিন সাংবাদিকের চাকরিচ্যুতিতে সরকারের সংশ্লিষ্টতা? যা বললেন উপদেষ্টা ফারুকী
ভেষজ ঔষধি ঢেঁড়স ডায়াবেটিস ও ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়
গরমে স্বাস্থ্য রক্ষায় কোন পাত্রে কতটুকু পানি পান করা নিরাপদ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা