পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনা: চার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ডাকলেন মোদি

ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় ২৬ পর্যটকের প্রাণহানির ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যেই আগামীকাল বুধবার ভারতের মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটি (সিসিএস)-সহ চার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর আক্রমণের পর সিসিএস-এর বৈঠক হয়েছিল। সেই বৈঠকের পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়। তারপর বুধবার আবার সিসিএস-এর বৈঠক হবে। সিসিএস হলো ভারতের সুরক্ষা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সংস্থা।
শুধু সিসিএস নয়, রাজনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি (সিসিপিএ), অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি (সিসিইএ) এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকও বুধবার সকালে হওয়ার কথা আছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখে কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করার জন্য অবিলম্বে সংসদের জরুরি অধিবেশন ডাকার দাবি জানিয়েছেন বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী।
পহেলগামের ঘটনার পর সিসিএসের বৈঠক হলেও মন্ত্রিসভার বৈঠক এই প্রথমবার হবে। পহেলগামের পর থেকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে সাবেক সেনা ও কূটনীতিকরা বারবার বলছেন, ভারত আবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
কংগ্রেস সাংসদ ও সাবেক কুটনীতিক শশী থারুর ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআইকে বলেছেন, ‘উরির পর সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হয়েছে। পুলওয়ামার পর বালাকোটে বিমান হামলা হয়েছে। আমার মনে হয়, আমরা এবার তার থেকেও বেশি কিছু দেখব। এটা স্পষ্ট যে আমাদের সামনে একগুচ্ছ বিকল্প আছে, কূটনৈতিক, আর্থিক, গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়, গোপন ও প্রকাশ্য অ্যাকশন। কিছু প্রকাশ্য সামরিক প্রতিক্রিয়া এড়ানো যাবে না বলেই মনে হয়। পুরো দেশ এটাই চাইছে ও দাবি করছে।’
ভারতের প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা বলেছেন, ‘পহেলগামের ঘটনার পর সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই পারে। গোটা দেশ সেই প্রত্যাশা করছে। তবে কবে হবে, কীভাবে সেটা সরকার ঠিক করবে।’
কাশ্মীরে ৪৮টি পর্যটকস্থল বন্ধ
কাশ্মীরে নিরাপত্তার কারণে ৪৮টি পর্যটকস্থল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।এর মধ্যে আছে, দুধপাহাড়ি, আহরবাল, বাঙ্গাস, উলার, রামপোরা, রাজপোরা, খামপো, ভিজিটপ, নারানাগ, সিনথান টপ, ইউসমার্গ, শ্রুঞ্জ জলপ্রপাত, মুন্দিজ-হামাম-মারকুট জলপ্রপাত, খাদনিয়ারের ইকো পার্ক, ভেরিনাগ গার্ডেন, অষ্টানমার্গ, বাদামওয়ারি।
কাশ্মীরের বিভিন্ন জায়গায় এখন অভিযান চালাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী। গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে, কাশ্মীরে সন্ত্রাসীদের স্লিপার সেল এখনো সক্রিয়।তাই এখন আর কোনো ঝুঁকি নেয়া হয়নি।
গত ২২ এপ্রিলের ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই পর্যটক ছিলেন এবং ২০০০ সালের পর থেকে এটি বিতর্কিত হিমালয় অঞ্চলে সবচেয়ে মারাত্মক সশস্ত্র হামলাগুলোর মধ্যে একটি। এই হামলায় ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত। যদিও এই দাবি ইসলামাবাদ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে এ ঘটনার পর থেকে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে টানা পঞ্চম দিনের মতো গুলি বিনিময়ের খবর পাওয়া গেছে। ভারতের অভিযোগ, পাকিস্তানের সেনা গুলি চালাতে শুরু করে। ভারত তার জবাব দিয়েছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার থেকে প্রতি রাতেই কাশ্মীর সীমান্তে গুলি চলছে। তবে এখনো পর্যন্ত কেউ হতাহত হননি। কোনোরকম উসকানি ছাড়াই পাকিস্তানের সেনা স্মল আর্মস ফায়ারিং শুরু করে। কুপওয়ারা ও বারামুলায় নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর এই গুলি চলে। আখনুরেরও গুলি চলে। ভারতীয় সেনা তার প্রত্যুত্তর দেয়।
সূত্র: পিটিআই, ডয়চে ভেলে
(ঢাকাটাইমস/২৯এপ্রিল/এমআর)

মন্তব্য করুন