জাবিতে বর্ণিল পহেলা বৈশাখ উদযাপন, গাজার চিত্র এঁকে গণহত্যার প্রতিবাদ

‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান ও মানবতার জয়গান’ প্রতিপাদ্য ধারণ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বর্ণাঢ্য আয়োজনে বর্ষবরণ ও পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হয়েছে। এই উৎসবে গাজার চিত্র এঁকে ইসরায়েলি গণহত্যার অভিনব প্রতিবাদ জানিয়েছেন জাবি শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) দিবসটি উপলক্ষে সকাল সোয়া আটটায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান উপাচার্যের বাসভবনে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে সকাল পৌনে ১০টায় উপাচার্যের নেতৃত্বে চারুকলা বিভাগের তত্ত্বাবধানে পুরাতন কলা অনুষদ চত্বর থেকে বৈশাখী শোভাযাত্রা শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশের পাদদেশে গিয়ে শেষ হয় শোভাযাত্রা।
শোভাযাত্রা শেষে বাংলা নববর্ষে সবার জন্য সুখ, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করে উপাচার্য বলেন, “বাংলা নববর্ষ উৎসব বাঙালি জাতিসত্তার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, একই সাথে সার্বজনীন। দল-মত, জাতি-ধর্ম, বর্ণনির্বিশেষে একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা আমাদের এবারের নববর্ষের অঙ্গীকার। বৈশাখের আনন্দ আমাদের সার্বজনীন আনন্দ এবং এ আনন্দ ভাগাভাগি করার দায়িত্ব আমাদের সবার।’
এ ছাড়া বাংলা বর্ষবরণের দিনে গাজায় চলমান ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে গাজার প্রতীকী চিত্র একে এক অভিনব প্রতিবাদ জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সামনের মাঠে অঙ্কিত এই মানচিত্রে সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে সাদা রঙে এবং লাল রঙে চিহ্নিত করা হয়েছে সেসব অঞ্চল, যেখানে ইসরায়েলি বাহিনী গণহত্যা চালিয়েছে। মানচিত্রের মাঝখানে স্থাপন করা হয় ফিলিস্তিনের পতাকা। এছাড়া শান্তির প্রতীক হিসেবে রোপণ করা হয় একটি জলপাই গাছ।
এই পতাকা উদ্বোধনকালে উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, ‘এই আয়োজন আমাদের শিক্ষার্থীদের মানবিক বোধ, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং রাজনৈতিক সচেতনতার অনন্য দৃষ্টান্ত। একটি রাষ্ট্রের নিরীহ জনগণের ওপর যখন নির্বিচারে হামলা চলছে, তখন একজন শিক্ষার্থী হিসেবে নীরব থাকা নয় বরং প্রতিবাদ জানানোই দায়িত্বশীলতার পরিচায়ক। এই প্রতীকী মানচিত্র নির্মাণের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা ন্যায় ও মানবতার পক্ষে তাদের স্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরেছে।’
প্রতিবাদ কর্মসূচির অন্যতম উদ্যোক্তা ৪৮ ব্যাচের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার। আজ আমরা যেমন আনন্দের সঙ্গে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন করেছি, তেমনি গাজায় চলমান গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে এবং সেখানকার মানুষের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে এই মানচিত্র নির্মাণ করেছি। ভবিষ্যতেও এ ধরনের সামাজিক ও বৈশ্বিক ইস্যুতে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ আমরা চালিয়ে যাব।’
শোভাযাত্রায় অন্যান্যের মধ্যে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সোহেল আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আবদুর রব, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ড. এ বি এম আজিজুর রহমান, প্রক্টর, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, হল প্রভোস্ট, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, মহিলা ক্লাবের সদস্য ও জাবি স্কুল ও কলেজের ছাত্র-শিক্ষকরা অংশ নেন।
এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে চারুকলাসহ বিভিন্ন বিভাগ ও অনুষদে পৃথকভাবে নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
(ঢাকাটাইমস/১৪এপ্রিল/মোআ

মন্তব্য করুন