যেসব লক্ষণে বুঝবেন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন, সুস্থ থাকার উপায়

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৮| আপডেট : ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪২
অ- অ+

বর্তমান সময়ে প্রাণঘাতী রোগের নাম ডেঙ্গু। এডিস মশার প্রজনন ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুর পিক সিজনে মশা নিধনে যথাযথ কার্যক্রম না থাকায় প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি ধীরে হলেও দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর তালিকা।

এডিস ইজিপ্টাই নামের মশার কামড়ে ডেঙ্গু রোগের সৃষ্টি হয়। এ রোগে আক্রান্ত হলে শরীরে ব্যাথা হয়, লাল গুটি দেখা দেয়, মাংসপেশী ও হাড়ের জোড়াতেও ব্যাথা হয়। চূড়ান্ত পর্যায়ে গেলে রক্তক্ষরণের ফলে এ রোগে মৃত্যুও হতে পারে। প্রথমবারের ধাক্কা সামলে উঠলেই যে মুক্তি তা কিন্তু নয়। ডেঙ্গু রোগে কেউ দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে তা প্রথমবারের চেয়েও মারাত্মক হতে পারে৷।

মশার নিজের মধ্যে কোন জীবাণু নেই। এটা বাহক মাত্র। রোগাক্রান্ত ব্যক্তির দেহে দংশন করে জীবাণু সংগ্রহ করে এবং তা অন্যের দেহে ছড়ায়।

ডেঙ্গু, এডিস মশা বাহিত একটি ভাইরাস ঘটিত জ্বর রোগ। ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি স্ট্রেইন (ডেন-১, ২, ৩ ও ডেন-৪) এর যেকোনো একটি দিয়ে ডেঙ্গু জ্বর হতে পারে। আর এই ভাইরাস বহন করে এডিস প্রজাতির মশা।

ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশা খালি চোখে দেখে শনাক্ত করা সম্ভব। এই জাতীয় মশার দেহে সাদা কালো ডোরাকাটা দাগ থাকে, যে কারণে এটিকে টাইগার মশা বলা হয়। এই জাতীয় মশা মাঝারি আকারের হয়ে থাকে এবং এর অ্যান্টেনা বা শুঙ্গটি কিছুটা লোমশ দেখতে হয়। পুরুষ মশার অ্যান্টেনা স্ত্রী মশার চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি লোমশ দেখতে হয়।

এডিস মশা কামড়ায় মূলত দিনের বেলায়, সূর্যোদয়ের কয়েক ঘণ্টা ও সূর্যাস্তের ঘণ্টাখানেক আগে। একই মশা ইয়েলো ফিভার, জিকা ভাইরাস, চিকুনগুনিয়া ভাইরাসেরও বাহক।

ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে অনেক মানুষের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। কারণ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বা মৃত্যুর সংখ্যা একেবারে কম নয়। কোন শরীরে কোন লক্ষণ দেখলে আপনি বুঝবেন যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন এবং সেক্ষেত্রে আপনার করণীয় কী হতে পারে, জেনে নিন।

সাধারণভাবে ডেঙ্গুর লক্ষণ হচ্ছে জ্বর। ১০১ ডিগ্রি থেকে ১০২ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকতে পারে। জ্বর একটানা থাকতে পারে, আবার ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে দেবার পর আবারো জ্বর আসতে পারে। এর সাথে শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা, চেখের পেছনে ব্যথা এবং চামড়ায় লালচে দাগ (র‍্যাশ) হতে পারে। তবে এগুলো না থাকলেও ডেঙ্গু হতে পারে।

ভাইরাস শরীরে প্রবেশের সাধারণত চার থেকে সাত দিনের মধ্যে (সর্বনিম্ন ৩ থেকে সর্বোচ্চ ১৪ দিন) রোগের উপসর্গ দেখা যায়। এই কালপর্বকে বলা হয় ‘ইনকিউবেশন পিরিয়ড’। উপসর্গগুলো ১০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে ডেঙ্গুর জীবাণুতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা থাকে উপসর্গবিহীন কিংবা থাকে সাধারণ জ্বরের মতো সামান্য উপসর্গ নিয়ে।

প্রথম সাত দিনে পিসিআর, ভাইরাল অ্যান্টিজেন ডিটেকশন প্রায় নির্ভুলভাবে রোগ শনাক্ত করতে পারে। জ্বরের পাঁচ-সাত দিন পর থেকে আইজি অ্যান্টিবডি উৎপন্ন হয় এবং উপসর্গসহ সেরোলজি টেস্টে এই অ্যান্টিবডির শনাক্তকরণ রোগনিরূপক বলে গণ্য করা হয়

রোগের ধারাবাহিকতা

প্রথম ১-৫ দিন: হঠাৎ উচ্চমাত্রার জ্বর দেখা দেয়, যা প্রায় ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে। শরীরে কাঁপুনি, তীব্র মাথাব্যথা, অক্ষিকোটরের পেছনে ব্যথা হয়। হাড়ের জোড়ায় বা গিঁটে ও মাংসপেশিতে প্রবল ব্যথার কারণে এই রোগের আরেক নাম ‘হাড়ভাঙা জ্বর’ বা ব্রেক বোন ফিভার। ১৭৮০ সালে পদার্থবিদ বেঞ্জামিন রাশ এই শব্দ প্রথম প্রয়োগ করেন। অন্যান্য উপসর্গ হলো ক্লান্তি, বমিভাব, বমি। উপসর্গের প্রথম বা দ্বিতীয় দিনে ত্বকে লাল ফুসকুড়ি অথবা অসুখের চার-সাত দিনের মধ্যে হামের মতো র‍্যাশ দেখা যায়।

৫-৭ দিন: রক্তক্ষরী ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার ও ডেঙ্গু শক সিনড্রোম (যা ৫ শতাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়) দেখা দিতে পারে ৫ থেকে ৭ দিনের মাথায়। এ সময় নাক, মাড়ি থেকে রক্তপাত হতে পারে। শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়। রোগের তীব্রতা অনুযায়ী এটাকে চারটি উপপর্বে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে।

ক. গ্রেড-১: কোনো রক্তপাতের চিহ্ন নেই, কেবল পজিটিভ টুর্নিকোয়েট টেস্ট (রক্তচাপ মাপার যন্ত্র দিয়ে প্রেশার বাড়ালে ত্বকে রক্ত জমতে দেখা যায়)।

খ. গ্রেড-২: নাক, মাড়ি, দাঁত, মলের সঙ্গে রক্তপাত।

গ. গ্রেড-৩: নাড়ি দুর্বল ও হৃৎস্পন্দন দ্রুত। রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে কম। পালস প্রেশার লো।

ঘ. গ্রেড-৪: রক্তচাপ ও নাড়ির স্পন্দন পাওয়া যায় না। রোগী শকে চলে যায়।

উল্লেখ্য, গ্রেড-১ ও গ্রেড-২-কে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বা ডিএইচএফ এবং গ্রেড-৩ ও গ্রেড-৪ ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের আওতাভুক্ত।

ডেঙ্গু রোগীর জন্য উপকারী খাবার

ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় খাবার হলো প্রোটিন ও আয়রনসমৃদ্ধ খাবার। মাছ, মুরগির মাংস, চর্বিহীন লাল মাংস (গরু, ছাগল), ডিম, দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্যে প্রোটিন বেশি থাকে। এই খাবারগুলো রোগীর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা বাড়াতে আয়রনসমৃদ্ধ খাবারের জুড়ি নেই। পালংশাক, সামুদ্রিক মাছ, কলিজা, মিষ্টিকুমড়া, ডালিম, মটরশুঁটি, ছোলা, মসুর ডাল, কচুশাক ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণ আয়রণ রয়েছে, যা রোগীর শারীরিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতেও সাহায্য করে।

রক্তক্ষরণ ঝুঁকি কমাতে ডেঙ্গু রোগীকে ভিটামিন কে জাতীয় খাবার, যেমন সবুজ শাকসবজি, বাঁধাকপি, ব্রকলি ইত্যাদি খাওয়াতে হবে। এসব খাবারে দরকারি খনিজ উপাদান ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণও বেশি থাকে। তাই প্রতিদিন রোগীকে এই খাবারগুলো পরিমাণমতো খাওয়াতে হবে।

ভিটামিন বি-১২–এর অন্যতম উৎস ডিম, দুধ, মাখন, পনির, কম চর্বিযুক্ত দই। ভিটামিন সি একটি কার্যকারী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা কোলাজেন উৎপাদনে সহায়তা করে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ভিটামিন সি জাতীয় খাবার রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা স্বাভাবিক রাখতেও কার্যকর। কমলা, মাল্টা, আপেল, পেয়ারা, আমড়া, পেঁপে, আম, আনারস, আঙুর, জাম ইত্যাদি ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে। ডেঙ্গু রোগীকে প্রতিদিন এই ফলগুলো পরিমিত পরিমাণে খাওয়াতে হবে।

ডেঙ্গু রোগীদের পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে রোগীকে প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন লিটার পানি পান করতে হবে। পাশাপাশি শরীরে পানির পরিমাণ ঠিক রাখতে ডাবের পানি ও বিভিন্ন ধরনের ফলের রস উপকারী। এ ছাড়া নরম সেদ্ধ জাউ ভাত, খিচুড়ি, বিভিন্ন ধরনের স্যুপ খেতে দিতে হবে। প্রয়োজন বুঝে ডেঙ্গু রোগীকে ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশনও (ওআরসি) দেওয়া যেতে পারে।

ডেঙ্গু জ্বরের রোগীদের যেসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে

তৈলাক্ত ও ভাজা খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার, স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত খাবার, মসলাযুক্ত খাবার, আচার, চিনিযুক্ত খাবার, কাঁচা সবজি ইত্যাদি। এ ছাড়া উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার, চা-কফি, কোকো, অন্যান্য ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় ইত্যাদিও এড়াতে হবে।

সাবধানতা

ঘরের বাইরে বের হলে মশার কামড় এড়াতে হাত-পা ঢেকে থাকার মতো পোশাক পরিধান করা। শিশুকে হালকা রঙের ফুল শার্ট, ফুল প্যান্ট ও মোজা পরানো। দিনের বেলায়ও মশারি খাটিয়ে ঘুমানো।

পরিবারের কেউ একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে অন্যদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য মশারির ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ, যাতে করে অসুস্থ ব্যক্তিকে মশা কামড়ে আবার সুস্থ কাউকে কামড়াতে না পারে। ডেঙ্গু ছোঁয়াচে রোগ নয় বা এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তিকে সংক্রমিত করে না। তবে ডেঙ্গু রক্তসম্বন্ধীয় সামগ্রী ও অঙ্গদানের মাধ্যমেও পরিবাহিত হতে পারে।

(ঢাকাটাইমস/২৬ নভেম্বর/আরজেড)

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
সরকারি চাকরির আবেদন ফি ২০০ টাকা, এক সপ্তাহের মধ্যে প্রজ্ঞাপন
বিজেপির হুমকির পরও বেনাপোলে আমদানি-রপ্তানি ও যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক
ইউএনওর প্রত্যাহারের দাবিতে দিনাজপুর-পঞ্চগড় মহাসড়ক অবরোধ  
জামিনে কারামুক্ত সাবেক এসপি বাবুল
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা