নানা সমস্যায় জর্জরিত রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০১৬, ১০:১৭ | প্রকাশিত : ২৪ নভেম্বর ২০১৬, ০৯:৫৭

নানা সমস্যা আর সংকটে জর্জরিত লক্ষীপুরের রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। চিকিৎসক সংকট, উদাসীনতা, দালালদের প্রতারণা, অনিয়ম-দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে সরকারি স্বাস্থ্য সেবা মুখ থুবড়ে পড়েছে হাসপাতালটিতে। এর ফলে যথাযথ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলাবাসী। হাসপাতালটির এমন অবস্থা তা যেন দেখার যেন কেউ নেই।

জানা যায়, এখানে কর্মরত ডাক্তাররা বছরের পর বছর ছুটিতে আছেন। আর যারা আছেন তারাও নিয়মিত হাসপাতালে না এসে তাদেরই মালিকানাধীন বেসরকারি ক্লিনিকে রোগী দেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এতে রোগীদের পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে। যার ফলে এ উপজেলার বিশাল জনগোষ্ঠী চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে হাতুড়ে চিকিৎসক কিংবা ওঝা কবিরাজের দিকে ঝুঁকছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় রয়েছে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট একটি হাসপাতাল। হাসপাতালটির দৈন্যদশার কারণে আট বছর পূর্বে নির্মিত ৫০ শয্যা বিশিষ্ট ভবনটি অদৃশ্য কারণে চালু হয়নি। হাসপাতাল ও ১০টি ইউনিয়ন উপ-কেন্দ্রের জন্য ১৯ জন ডাক্তারের মধ্যে আবদুল্যাহ আল রাছেল পাঁচ বছর ছুটিতে, ডা. সামিয়া নুসরাত ছয় মাস, ডা. নাজিফা, ডা. সুমিসহ সাত জন ছুটিতে আছে বিভিন্ন মেয়াদে। এছাড়া ছয়জন আছেন ডিপিটিশনে। সহকারী ডেন্টাল সার্জন ডা. প্রিয়াংকা সাহা দাতের যন্ত্রপাতি না থাকায় তিনি আছেন অঘোষিত ছুটিতে। অবিশিষ্ট ছয়জন ডাক্তার দিয়ে চলছে হাসপাতাল ও উপ-কেন্দ্রগুলো।

এছাড়া টেকনিশয়ান না থাকায় দশ বছর থেকে এক্সরে মেশিন রুম বন্ধ। আট বছর থেকে নষ্ট রয়েছে দুটি অ্যাম্বুলেন্স, পুরুষ-মহিলা ওয়ার্ডের ১২টি ফ্যানের মধ্যে ৪ বছর থেকে ছয়টি ফ্যানই নষ্ট৷

বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জরুরি বিভাগে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত কয়েকজন রোগীকে হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা চিকিৎসা দিচ্ছেন। জরুরি বিভাগে অধিকাংশ সময় চিকিৎসক থাকেন না। নৈশপ্রহরী ওয়ার্ড বয় ও অফিস সহকারীরা জরুরি রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকেন চড়া দামের পারিশ্রমিক নিয়ে। বহিঃবিভাগেরও একই চিত্র। সময়মতো ডাক্তার না আসায় অনেক রোগী হাসপাতালের গেটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অবস্থান করেন।বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আসা রোগীদের অনেকে ডাক্তার না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারও দেখা নেই, তিনি বেশির ভাগ সময় জেলায় মিটিংয়ে থাকেন। হাজিরা খাতায় কয়েকজন চিকিৎসকের উপস্থিতি দেখা গেলেও বাস্তবে তারা হাসপাতালে নেই। এছাড়াও হাসপাতালে থাকা রোগীদের খাবার দেওয়া হয় নিম্নমানের। অপরিষ্কার আর ময়লা আর্বজনায় ভরা টয়লেটগুলো। টাকা ছাড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষাও হয় না। আর ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের উৎপাত তো আছেই।

কয়েকজন রোগী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি জানান, জরুরি বিভাগে ৪র্থ শ্রেণির কর্মকর্তারা ব্যবস্থাপত্র দিয়ে রোগী ভর্তি দেওয়ার পর সকালে এবং রাতে মেডিকেল অফিসাররা এসে সেই ব্যবস্থাপত্রের উপর স্বাক্ষর দিয়ে ডিউটি জায়েজ করেন। এতে অজান্তে অনেক রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। বহিঃর্বিভাগের ডাক্তাররা অফিস টাইমে হাজিরা খাতায় সই দিয়ে অন-কলে রোগী দেখতে চলে যান। হাসপাতালে রোগী দেখলে প্রাইভেট ক্লিনিকের প্যাডে ব্যবস্থাপত্র দেন। রোগীরা চেম্বার থেকে বাহির হলে দরজায় বসে থাকা ডাক্তারদেরই নিয়োজিত দালালদের অনেকেই প্যাডের ওই ঠিকানায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য নিয়ে যান।

অর্থোপেডিক ডা. রৌশন জামিল হাড়-ভাঙ্গা ও বাত ব্যথার রোগীদের হাসপাতালে চিকিৎসা না দিয়ে তার মালিকানাধীন বায়োফাত ও ডক্করস চেম্বারে নিয়ে প্রত্যেক রোগীর কাছ থেকে ১০/২০ হাজার টাকা আদায় করেন।

অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. নাজমুল হাসান বলেন, জররি বিভাগে ডাক্তার থাকার নিয়ম নাথলেও ৪র্থ শ্রেণির কর্মকর্তারা ব্যবস্থাপত্র দিতে পারে না। জেলায় মিটিং থেকে আসলে সব অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৪নভেম্বর/প্রতিনিধি/এমআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :