শাকিল নিভে যাওয়া মধ্যগগনের সূর্যঃ অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী কবি মাহবুবুল হক শাকিলের মৃত্যুকে ‘মধ্যগগনে এসে সূর্যের আলো নিভে যাওয়া” বলে বর্ণনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
রোববার সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমীর আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে আয়োজিত এক স্মরণসভায় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, “ একটা মানুষ মধ্যগগনে এসে আলো নিভিয়ে চলে গেলেন। একজন প্রতিভাবান সাহিত্যিক সকল সম্ভাবনা পরিব্যাপ্ত করার আগে দৃশ্যপট থেকে চলে গেলেন!”
বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি আয়োজিত এই স্মরণসভায় শাকিলের পরিবারের সদস্যবৃন্দ, সহকর্মী এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন "বেহিসাবি তরুণের মতো শাকিল দুহাতে জীবন ব্যয় করেছেন। ব্যয় করতে করতে দেউলিয়া হয়ে গেছেন তিনি। উৎকেন্দ্রিকতা যদি তাকে জীবন উপভোগ করার সুযোগ দিয়ে থাকেন তবে আমার কোন দু:খ নেই"।
তিনি আরও বলেন, শাকিলের সান্নিধ্যে যারাই এসেছেন গভীরভাবে আপ্লুত হয়েছেন। আন্তরিকতা, সহমর্মিতা দিয়ে সকলের মন জয় করে নিয়েছিলেন তিনি। সব বিষয়ে নিজেকে উদার করে দেয়া ছিল শাকিলের সহজাত অভ্যাস। শাকিল যার সঙ্গেই কথা বলেতেন ভালবাসার সেতু বন্ধন তৈরী হতো।
স্মরণসভায় শাকিলের স্মরণে কবিতা আবৃত্তি করেন বিশিষ্ট অভিনেতা ও আবৃত্তিকার জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় এবং আবৃত্তি শিল্পী মহিউদ্দিন শামীম।
কথাশিল্পী আনিসুল হক বলেন, “ ভালোবাসার এক আশ্চর্যরকমের শক্তি ছিল শাকিলের। প্রত্যেককে তিনি অসম্ভব রকমের ভালবাসতেন। তার মধ্যে ভালবাসার কোন কমতি নেই। তিনি অসম্ভব গুণী একজন মানুষ ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী সচিব সাইফুজ্জামান শেখর শাকিলের স্মরণে বলেন, রাজশাহী হল ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক থাকা অবস্থায় তার সাথে দেখা। “সেই থেকে মৃত্যুর পূর্বদিন পর্যন্ত একসাথে পথচলার চেষ্টা করেছি। শাকিল ভাইয়ের বিশেষ গুণ ছিল তিনি যেখানেই উপস্থিত হতেন মুহুর্তেই সবাইকে আকৃষ্ট করে ফেলতেন। অথচ ধুমকেতুর মতো মানুষটি সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন।
শাকিলের কাজের প্রতি একাগ্রতার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে শেখর বলেন, “নেত্রী (শেখ হাসিনা) কী বলতে চান সেটা তার মত বোঝার ক্ষমতা আর কারো মধ্যে দেখিনি। নেত্রীর যেকোন কাজ বলা মাত্রই তার সামনে হাজির করে দিতেন তিনি”।
অন্বেষা প্রকাশনীর প্রকাশক শাহাদাত বলেন, মাহবুবুল হক শাকিলের প্রচুর কবিতা থেকে বাছাই করে 'মন খারাপের গাড়ি' গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছিল।
আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, “৬ সংখ্যার সাথে যেন শাকিলের বিশেষ সখ্যতা ছিল! তার প্রথম কবিতার বই বের হয় ৬ ফেব্রুয়ারী, দ্বিতীয় কবিতার বই বের হয় ৬ ফেব্রুয়ারি এবং তৃতীয় বইটিও ৬ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করার ঘোষণা দেন। আবার অনেক আগেই আবার তিনি চলে গেলেন ৬ ডিসেম্বর। জানিনা এই ৬ সংখ্যার সাথে তার কী বিশেষ সান্নিধ্য?। শাকিল ভাই আমাদের মাঝে তার লেখার মধ্য দিয়ে বেচে থাকবেন অনন্তকাল”।
স্মরণসভায় আরও বক্তব্য রাখেন তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনা সমিতির সভাপতি ওসমান গণিসহ প্রমুখ।
(ঢাকাটাইমস/১৮ ডিসেম্বর/দোহা/এসএএফ)