নির্বাচন সামনে রেখে সাংগঠনিক সফরে আ.লীগ

তানিম আহমেদ, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২২ জানুয়ারি ২০১৭, ০৮:৪১| আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০১৭, ১০:৪৭
অ- অ+

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দল গোছাতে সাংগঠনিক সফর শুরু করছে আওয়ামী লীগ। সফরে তৃণমূলের কাছে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও আগামী দিনের পরিকল্পনা তুলে ধরা হবে। এ ছাড়া তৃণমূলের অন্তঃকোন্দল নিরসনকেও গুরুত্ব দেয়া হবে সফরে।

ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা মনে করেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে হবে। তাই নির্বাচনে সরকারের অর্জন তুলে ধরা এবং তৃণমূলের অন্তঃকোন্দল মেটানোই এখন প্রধান লক্ষ্য তাদের।

গত ১৪ জানুয়ারি ধানমন্ডিতে নিজের রাজনৈতিক কার‌্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে উপস্থিত নেতাকর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে তাগিদ দেন। তিনি নেতাকর্মীদের জানান, আগামী নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের ইশতেহার তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। দলের প্রত্যেক নেতাকর্মীকে এখন থেকেই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। গত তিন বছরে আওয়ামী লীগের অর্জনগুলো সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরারও তাগিদ দেন তিনি।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, তৃণমূলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সফর একটি চলমান প্রক্রিয়া। মাঝে গত অক্টোবরে দলের জাতীয় সম্মেলন, ডিসেম্বরে নারায়ণগঞ্জ সিটি ও জেলা পরিষদ নির্বাচনের কারণে তা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এখন বিভিন্ন সাংগঠনিক ইউনিট পর‌্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আগামী মাসে আবার পুরোদমে সাংগঠনিক সফরের দিকে নজর দিচ্ছে দল।

আট বছর ধরে দল ক্ষমতায় বলে তৃণমূলের বিভিন্ন জায়গায় প্রভাব বিস্তার ও স্বার্থগত দ্বন্দ্বে সৃষ্টি হয়েছে অন্তঃকোন্দল। আর এতে তৃণমূলের বিভিন্ন জায়গায় সংঘাতের ঘটনাও ঘটছে। সাংগঠনিক সফরে বিবদমান পক্ষগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তা মীমাংসা করার চেষ্টা করা হবে বলে জানান কেন্দ্রীয় নেতারা। এ ছাড়া দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়া হতে পারে।

নেতারা বলেন, যেসব জেলা ও উপজেলায় এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা সম্ভব হয়নি, সেগুলো পূর্ণাঙ্গ করা হবে সাংগঠনিক সফরের মাধ্যমে।

এ ছাড়া সাংগঠনিক সফরে দলের নেতাকর্মী ছাড়াও তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক এবং স্থানীয় জনসাধারণকে নিয়ে আলাদা জনসভা করা হবে। সেখানে আওয়ামী লীগ সরকার দেশে যে উন্নয়ন করেছে এবং আগামী দিনের উন্নয়নের জন্য যেসব মেগা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, সেগুলো তুলে ধরা হবে বলে জানান নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর‌্যায়ের একজন নেতা।

আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন, সরকারের সফলতা জনগণের সামনে তুলে ধরতে পারলে এবং তৃণমূলের নেতাকর্মীদের দূরত্ব কমিয়ে আনতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ সম্ভব। এ জন্য তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর কাজেই এখন বেশি মনোযোগী দলটি।

এরই অংশ হিসাবে গত ১৯ জানুয়ারি খুলনা বিভাগের প্রতিনিধি সম্মেলন করেছে আওয়ামী লীগ। সভায় জেলা ও মহানগর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, সংসদ সদস্য, জেলার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। পর‌্যায়ক্রমে সব বিভাগের বিভাগীয় প্রতিনিধি সম্মেলন করবে দলটি। বিভাগীয় সম্মেলনের পরেই জেলা ও উপজেলায় সাংগঠনিক সফর করবেন তারা।

খুলনার প্রতিনিধি সভায় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে যে উন্নয়ন হচ্ছে, তার চিত্র মানুষের সামনে সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা ভোট দিয়ে প্রমাণ করবে যে তারা উন্নয়নের পক্ষে, সন্ত্রাস-নাশকতার বিপক্ষে।

আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু হয়েছে জানিয়ে সম্প্রতি এক জনসভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন,আগামী ছয় মাসের মধ্যে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আগামী নির্বাচনের জন্য দলকে আরও সুসগংঠিত করার জন্যই আমাদের এই সাংগঠনিক সফরের মূল লক্ষ্য থাকবে। এ ছাড়া এসব সফরে জনগণের সামনে আমাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হবে।’

দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে বলে জানান ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এরই মধ্যে তিনি কয়েকটি জেলার নেতাদের সঙ্গে সাংগঠনিক বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করেছেন জানিয়ে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘তাদের সমস্যা আমরা শুনেছি এবং সমাধান দেয়ার চেষ্টা করছি। প্রয়োজনে আমরা জেলা সফর করব।’

আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এই মাস নানাবিধ বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আগামী মাস থেকে পুরোদমে তৃণমূলে যাবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তবে তৃণমূল থেকে আমরা কখনো বিচ্ছিন্ন ছিলাম না। জনপ্রিয় নেতারা যেন আড়ালে না থাকেন, সেদিকটা লক্ষ রেখেই আমাদের এবারের যাত্রা।’

বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আগামী নির্বাচনের আগ পর‌্যন্ত আমরা সব সাংগঠনিক ইউনিট সফর করব। দলের প্রয়োজনে আমরা বিভিন্ন সাংগঠনিক ইউনিটে একাধিকবারও সফর করতে পারি।’

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে মন্তব্য করে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্যাহ বলেন, দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে দলের প্রতি ভোটাদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করাই হবে মুখ্য উদ্দেশ্য। জনগণের মন জয় করেই আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে।

(ঢাকাটাইমস/২২জানুয়ারি/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরিয়ে আনতে হবে: আমির খসরু
আনিসুল হকের বান্ধবী তৌফিকা করিমের যত অবৈধ সম্পদের সন্ধান
সংবাদ প্রকাশের জেরে প্রাণনাশের হুমকি, উত্তরা প্রেসক্লাবের মানববন্ধন
পুলিশ কিলার ফোর্স হতে পারে না: আইজিপি
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা