মুুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই: সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন ‘রাজাকার’, ‘অচেনা’রাও

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৩:০৯ | প্রকাশিত : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১১:১২
কুড়িগ্রামের উলিপুরে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই চলছে

কুড়িগ্রামের উলিপুরে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম তুলতে যাচাই-বাছাই কমিটিতে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, রাজাকারসহ বিতর্কিত ব্যাক্তিরা সাক্ষাৎকার দেয়ায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিতর্কিতরা যেত কোনোভাবে ফাঁক গলিয়ে মুক্তিযোদ্ধা বনে না যান এজন্য জোর দাবি জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ উলিপুর কমান্ডের নেতারা।

উলিপুরের দুই রাজাকার আব্দুস সামাদ ও খন্দকার ইউসুফ মুক্তিবাহিনীর হাতে ধরা পড়েছিলেন। সে সময় তারা মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে সাজাও খাটেন। এই দুই রাজাকার এবার ভোল পাল্টে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম তোলার চেষ্টা করেছিলেন। তারা যাচাই-বাছাই কমিটির সামনে হাজির হলে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিবাদ জানায়। তবু তাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। অবশ্য তারা দুইজনই ধরা পড়ে যান এবং পরে পালিয়ে যান। কিন্তু দুই রাজাকারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

মুক্তিযোদ্ধা হতে আবেদন করেছেন উলিপুরের বজরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বাবুল আমিন। তিনি কিছুদিন আগে মুক্তিযোদ্ধাদের ‘রাজাকার ও চুক্তিযোদ্ধা’ বলে গালি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বজরা কমান্ডের কমান্ডার ইসমাইল হোসেনসহ ২২ জন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি গত সোমবার যাচাই-বাছাই কমিটির সামনে সাক্ষাৎকার দিতে হাজির হন। এ সময় উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং তাকে কক্ষ থেকে বের করে দিতে বলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগের পরও তার সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। এলাকার কোনো মুক্তিযোদ্ধ তার পক্ষে সাক্ষ্য না দিলে তিনি বগুড়া থেকে একজন ভুয়া সাক্ষী নিয়ে আসেন বলে অভিযোগ ওঠে।

জানতে চাইলে আবেদনকারী রেজাউল করিম বাবুল আমিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, তিনি গাইবান্ধার কামারজানি এলাকায় যুদ্ধ করেছেন। নানা কারণে এর আগে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্তির জন্য আবেদন করতে পারেননি।

মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম তুলতে চান দলদরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমানও। তিনিও সাক্ষাৎকার দিতে কমিটির সামনে হাজির হলে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। সেই সঙ্গে দাবি জানান তাকে বের কওে দিতে। তবু সাক্ষাৎকার নেয়া হয় তার।

চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমান মুন্সী ঢাকাটাইমসের কাছে দাবি করেন, তিনি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা সংগ্রাহক ও সংগঠক। এ বিষয়ে তার দালিলিক প্রমাণ ও সাক্ষী রয়েছে।

উলিপুর ডাকঘরের সাবেক পোস্ট মাস্টার দেলোয়ার হোসেন ও আবুল কাশেম নামে দুইজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন-এমন কথা জানেন না মুক্তিযোদ্ধা সংসদ দলদলিয়া কমান্ডের কমান্ডার ফজলুল হকসহ ১৬ জন মুক্তিযোদ্ধা। তবু তারা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। আবুল কাশেম ও সাবেক পোস্ট মাস্টার দেলোয়ার হোসেন-দুজনই ঢাকাটাইমসকে বলেন, তারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু সময়ের অভাবে এতোদিন আবেদন করতে পারেননি।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ উলিপুর কমান্ডের সহকারী কমান্ডার ফজলার রহমান বলেন, ‘বিতর্কিতদের সাক্ষাৎকার নেয়ায় আমরা আশঙ্কা করছিন কোনো ফাঁক দিয়ে দিয়ে তারা মুক্তিযোদ্ধা বনে যেতে পারেন।’

উলিপুরের মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ওসমান গনি বলেন, ‘যেহেতু তারা অনলাইনে আবেদন করেছেন তাই আমরা তার সাক্ষাতকার নিতে বাধ্য। তবে সাক্ষাৎকার নেয়া মানে তাকে নেয়া হলো এমনটা নয়। কারণ, এখানে ছয় জনের একটা কমিটি আছে। তাদের সর্ব সম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

যাচাই বাছাই কমিটির সচিব ও উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সব বুঝি। আপনারা মুখ ফুটে বলতে পারেন আমি পারি না। যেহেতু তারা আবেদন করেছেন তাই আমরা সাক্ষাৎকার নিয়েছি। সাক্ষাৎ নেওয়া মানেই তিনি মুক্তিযোদ্ধা বনে গেলেন এমনটা নয়। যাদের বিরুদ্ধে আমরা অভিযোগ পেয়েছি সেগুলো বাছাই করা হচ্ছে এবং সেগুলোর শুনানিও সম্পন্ন করা হবে।’

ঢাকাটাইমস/০৯ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :