সীমার নির্বাচনী ইশতেহারে ‘শান্তির কুমিল্লা’ গড়ার প্রত্যয়

‘শান্তির কুমিল্লা’ গড়ার প্রত্যয়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকার দলীয় প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা। প্রায় ১৪ পৃষ্ঠার ইশতেহারে তিনি সমৃদ্ধ কুমিল্লা গড়ার রূপরেখা তুলে ধরেছেন। তিনি বিজয়ী হলে কুমিল্লাবাসীর নাগরিক সব সমস্যার সমাধান করবেন বলে ইশতেহারে উল্লেখ করেছেন।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় কুমিল্লা কান্দিরপাড় রামঘাটলায় আওয়ামী লীগের জেলা অফিসের সামনে নির্বাচনী এই ইশতেহার ঘোষণা করেন প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা। এ সময় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মেয়র নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কাজী জাফর উল্যাহসহ দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সীমার ইশতেহারে কুমিল্লা নগরীতে নাগরিক সুবিধা বাড়ানোর বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসন, পানি সমস্যার সমাধান, রাস্তা-ঘাটের উন্নয়নসহ নগরবাসীর কল্যাণে বিভিন্ন কাজের অঙ্গীকার করেন মেয়র প্রার্থী সীমা। তিনি জানান, বিজয়ী হলে তিনি কুমিল্লায় আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয় করবেন।
ইশতেহার ঘোষণাকালে সীমা অঙ্গীকার করেন, তিনি মেয়র নির্বাচিত হলে কোনো দলের নয়, কুমিল্লাবাসীর মেয়র হবেন। নগর ভবনে গিয়ে কাউকে নিরাশ হয়ে ফিরে আসতে হবে না।
ইশতেহার প্রকাশ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘আমাদের প্রিয় প্রার্থী আগামী দিনের আধুনিক উন্নত সমৃদ্ধ ও শান্তির কুমিল্লা গড়ার প্রত্যয় নিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। আশা করি প্রিয় কুমিল্লাবাসী আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করবেন। কুমিল্লাকে বিভাগ ঘোষণার মাধ্যমে আধুনিক উন্নত ও সমৃদ্ধ নগরী গড়ে তোলার যে ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন তা বাস্তবায়নে সহায়তা করবেন।’
ইশতেহার অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, কুমিল্লা জেলা পরিষদের সাবেদ প্রশাসক ওমর ফারুক, কুমিল্লা দক্ষিণ উপজেলার চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার প্রমুখ।
আগামী ৩০ মার্চ দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হবে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এবার প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকের এই নির্বাচনে মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগের নৌকা আর বিএনপির ধানের শীষের মধ্যে। ইতোমধ্যে নির্বাচনী প্রচার চলছে পুরোদমে।
ইশতেহারে যা বললেন সীমা
নগরবাসীর উদ্দেশ্যে আঞ্জুম সুলতানা বলেন-
আগামী পাঁচ বছরের জন্য বর্ধিত কোনো করের বোঝা জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়া হবে না। অতি দরিদ্রদের হোল্ডিং কর মওকুফ করা হবে।
শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন হবে আমার প্রথম অগ্রাধিকার। নগর পরিকল্পনাবিদ ও বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে, বাস্তবমুখী ও কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে এ শহরকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করবো।
নগরের অসহনীয় যানজট নিরসনে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। প্রয়োজনে ফ্লাইওভার, ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। ফুটপাতসমূহ জনগণের চলাচল উপযোগী করা হবে।
আপনারা নিশ্চয় অবগত আছেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাক্রমে রূপকল্প ২০২১ মাথায় রেখে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের জন্য উন্নয়নের মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা হবে। মাস্টার প্ল্যানের সমুদয় পরিকল্পনা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে।
শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে আমার এক গুচ্ছ পরিকল্পনা রয়েছে। যা ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে। সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে দুইটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। এগুলো হবে মানসম্মত এবং অলাভজনক। কর্মজীবী তরুণ-তরুণীদের কথা বিবেচনায় রেখে একটি নৈশ মহাবিদ্যালয় চালু করা হবে। সিটি করপোরেশনের পূর্বাঞ্চলে মেয়েদের জন্য একটি মানসম্মত মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ভিক্টোরিয়া কলেজে পর্যাপ্ত আসন না থাকায় অনেক মেধাবী ছাত্রছাত্রী ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। তাদের কথা বিবেচনায় রেখে সদর দক্ষিণ এলাকায় কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। এ সমস্ত উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা শিক্ষা ক্ষেত্রে কুমিল্লার হৃত গৌরব এবং ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে পারবো বলে আশা রাখি। সরকারের সহযোগিতায় শহরের শিক্ষা ব্যবস্থাকে নিয়ে যাবো এক অনন্য উচ্চতায়।
শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ। উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে প্রতি বছর অনেক মা ও শিশু মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে সর্বাধুনিক সুযোগসুবিধা সম্বলিত ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু হাসপাতাল স্থাপন করা হবে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সেখানে স্বল্প খরচে চিকিৎসা নেয়ার ব্যবস্থা থাকবে। পাশাপাশি নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে পরিচালিত স্যাটেলাইট ক্লিনিকসমূহের চিকিৎসা সেবার পরিধি বৃদ্ধি করা হবে।
কুমিল্লায় কর্মজীবী নারীর সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত এসব নারীর আবাসন সংকটের কথা বিবেচনায় রেখে একটি কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল স্থাপন করা হবে।
ভবন নির্মাণের নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে জনসাধারণের ভোগান্তি দূর করা হবে। দ্রুততম সময়ে নকশা অনুমোদন করা হবে।
সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হবে। রাত ১২টা থেকে সকাল ৬টার মধ্যেই বর্জ্য পরিষ্কার নিশ্চিত করা হবে। পাশাপাশি স্বল্পাকৃতির ময়লা কাগজ ইত্যাদি ফেলার জন্য মূল সড়কের পাশে ক্ষুদ্রাকৃতির বিন/ঝুড়ি স্থাপন করা হবে। বর্জ্যকে বোঝা না মনে করে সম্পদে পরিণত করার জন্য পরিকল্পিত উদ্যোগ নেয়া হবে।
সরকার এবং জনসাধারণের সহায়তা নিয়ে কুমিল্লার পরিছন্ন রূপটি ফিরিয়ে এনে কুমিল্লা মহানগরকে নান্দনিক শহরে পরিণত করবো।
দ্রুততম সময়ের মধ্যে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং চলাচল অনুপযোগী সড়ক সমূহ সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন সকল কাঁচা সড়ক পর্যায়ক্রমে পাকা করার ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সদর দক্ষিণ কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের অংশ হলেও গত পাঁচ বছরে সেখানকার দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন পরিলক্ষিত হয়নি। তাই আপনাদের ভোটে আমি নির্বাচিত হলে সদর দক্ষিণের উন্নয়নের জন্য মহা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সদর দক্ষিণের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে। সদর দক্ষিণের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সেখানে সিটি করপোরেশনের অচল আঞ্চলিক কার্যালয়টিকে সচল করা হবে। ফলে সেখানকার বাসিন্দারা সময়ক্ষেপণ ও বিড়ম্বনা থেকে রক্ষা পাবেন। এখানে আন্তর্জাতিক মানের একটি স্টেডিযাম নির্মাণ করা হবে, ফলে কুমিল্লাতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ আযোজনের সুযোগ তৈরি হবে। আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের সুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে পাঁচ তারকা হোটেল স্থাপনে জমি বরাদ্দ করে সহযোগিতা করা হবে।
জেলা পরিষদের সহযোগিতা নিয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেনে একটি মুক্তমঞ্চ স্থাপন সহ পুরো বোটানিক্যার গার্ডেনটিকে একটি নতুন আঙ্গিকে গড়ে তোলা হবে। যাতে করে দর্শনার্থীরা একটি মনোরম পরিবেশে বেড়াতে পারেন।
আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত একটি মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নগরবাসীর সংস্কৃতি চর্চা ও বিনোদনের সুযোগ বৃদ্ধি করা হবে। বিদ্যমান মিলনায়তনসমূহের সংস্কার ও উন্নয়ন করা হবে।
কুমিল্লার খ্যাতিমান ব্যক্তি এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নামে নগরের বিভিন্ন সড়কসমূহের নামকরণ করা হবে।
নগরের সড়কসমূহকে রাতের বেলা নিরবচ্ছিন্নভাবে আলোকিত রাখার ব্যবস্থা করা হবে। মাদকমুক্ত কুমিল্লা গঠনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
সন্ত্রাসমুক্ত নগর গঠনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হবে। ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হবে।
কুমিল্লাতে একটি আইটি পার্ক স্থাপন করা হবে। যাতে করে নতুন প্রজন্ম আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে আয়ের উৎস খুজে নিতে পারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাসমূহকে ফ্রি ওয়াইফাই জোনের আওতায় আনা হবে।
বেকারত্ব দূরীকরণ ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সিটি করপোরেশন উদ্যোগ গ্রহণ ও সহায়তা করবে।
শহরের চারপাশে বৃত্তাকার সার্কুলার রোড নির্মাণ করা হবে। ফলে মূল শহরের উপর যানবাহনের চাপ অনেকটাই কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ পাবলিক টয়লেট স্থাপন এবং সেগুলো সার্বক্ষণিক পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কাঁচা বাজার গুলোর সংস্কার ও মানবৃদ্ধি করা হবে। বিশেষ করে সরকারের সহযোগিতা পেলে রাজগঞ্জ ও রাণীর বাজারটিকে সর্বাধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত বাজারে পরিণত করা হবে। বাজারগুলিতে নান্দনিক স্থাপনা তৈরির মাধ্যমে কুমিল্লাবাসীর জন্য এর বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।
ধর্মীয় স্থাপনসমূহ মসজিদ, মন্দির, গির্জা, কবরস্থান, শশ্মান ইত্যাদি সংরক্ষণে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেয়া হবে। ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর যেকোনো ধরনের নির্যাতন নিপীড়নের বিরুদ্ধে হিমালয় পাহাড়ের মতো প্রতিরোধের দেয়াল হয়ে দাঁড়াবো। হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কুমিল্লাকে একটি অসাম্প্রদায়িক পরমতসহিষ্ণু শহর হিসেবে গড়ে তুলবো।
মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সব ক্ষেত্রে বিশেষ সম্মানের ব্যবস্থা করা হবে। হোল্ডিং ট্যাক্স, পানির বিল সম্পূর্ণ মওকুফ করা হবে। নগরজুড়ে প্রবীণ নাগরিকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেবা প্রদান করা হবে।
(ঢাকাটাইমস/২১মার্চ/প্রতিনিধি/জেবি)

মন্তব্য করুন